নতুন প্রজন্মের কাছে মিউজিকের ‘ধ্যান ধারণা’ একেবারে বদলে দিয়েছিল ‘বাংলা ব্যান্ড’। নয়ের দশকে নতুন ধরনের বাংলা গান বদলে দিয়েছে প্রতিবাদের ভাষা। কলকাতায় একের পর এক ‘বাংলা ব্যান্ড’-এর আর্বিভাব যেন খুলে দেয় বাংলা গানের এক নতুন দিগন্ত। ব্যান্ডের গানে মেতে ওঠে তরুণ প্রজন্ম। বদল হয় চিন্তা ভাবনার। অনেকেই ব্যান্ড-কালচারে শামিল হওয়ার অনুপ্রেরণা ধীরে ধীরে। জেলা থেকে শহর কলকাতা ছোট বড় নানান ব্যান্ডের মত মাতানো রক পারফরমেন্সে মেতে ওঠে গোটা বাংলার মানুষ।
কলেজ ফেস্ট হোক অথবা লিটিল ম্যাগাজিন মেলা, ধীরে ধীরে শুরু হয় রক রাজত্ব। সেই রেশ আজও চলছে। এর মাঝেই ‘রক মিউজিকে’ রাজত্ব করছেন বাংলার পাঁচ দস্যি মেয়ে। নিজেরাই খুলে ফেলেছে আস্ত এক ব্যান্ড। নাম ‘লাইটিং স্টার’। চন্দননগরের নিজেদের স্টুডিওতে চলে প্র্যাকটিস। আর বাংলা জুড়ে তাদের রক পারফরমেন্স মুগ্ধ করেছে হাজার হাজার শ্রোতাকে।
পাঁচ কন্যার এই গল্প আপনাকে চমকে দিতে বাধ্য। ব্যান্ডের সব থেকে খুদে সদস্য আরুশি। রক মিউজিকে ইতিমধ্যেই হাত পাকিয়েছে সে। মার্কিন মুলুকে বেড়ে ওঠা। লক ডাউন কালে দেশে ফিরে গঙ্গাপাড়ের শহর চন্দন নগরে খুলে ফেলেছে নিজের একটা ব্যান্ড। ক্লাস সেভেনের আরুশি জানায়, ‘সমাজের বাঁকা নজরকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘রকে রাজত্ব’ করার ইচ্ছের জেরেই গড়ে উঠেছে এই সাধের ব্যান্ড। আগাগোড়া মেয়েকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন মা শর্মীষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, “এই ব্যান্ডের বিশেষত্ব হল ব্যান্ডের সকল সদস্যই মহিলা। কেউ ড্রামার, কেউ গিটারিস্ট আবার কেউ ভোকালিস্ট। তাদের কেউ স্কুলে পড়ে। কেউ আবার সদ্য স্নাতক পেরিয়ে চাকরির কোচিং নিচ্ছে। সকলেরই সঙ্গীতের প্রতি অগাধ ভালবাসা। আর সেই ভালবাসাকে সঙ্গী করেই বেড়ে উঠছে স্বপ্নের লাইটিং স্টার ব্যান্ড”। তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তরে শো’ও করে এসেছে তারা। পাশাপাশি মেয়েদের আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার একটা প্ল্যাটফর্ম এই লাইটিং স্টার ব্যান্ড”।
কেমন ছিল তাদের এই জার্নি? উত্তরে শর্মিষ্ঠা বলেন, “যে কোন কিছু শুরু করতেই কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদেরও সেরকম কিছু সমস্যা অবশ্যই পার করতে হয়েছে। তবে আজ মেয়েরা নিজেদের চেষ্টায় শো’করছে। মানুষজন তাদের গাওয়া গান শুনছে, ভাল লাগছে তাদের পারফরমেন্স। পাশাপাশি ব্যান্ডের সদস্য সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর কথাও জানান তিনি।
সমাজের বাঁকা নজর এড়িয়ে কীভাবে ব্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সেই প্রশ্নে ব্যান্ডের গিটারিস্ট বিদিশা বলেন, “আমি মনে করি মেয়েদেরও কিছু ইচ্ছা, স্বাধীনতা আছে। রক গানে নিজেদের রাঙাতে সমাজের চোখ রাঙানিকে অনায়াসেই উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে এসেছি। আমি আশা করি আমাদের দেখে আরও অনেক মেয়ে এমন ব্যান্ড খোলার কথা ভাববে এগিয়ে যাবে। তবে আরুশির মা যেভাবে আমাদের আগলে রেখেছে যেভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে তার জন্য আমরা সকলের ওঁদের কাছে কৃতজ্ঞ”।
ব্যান্ডের ভোকালিস্ট অর্পিতা নাথের বাড়ি শেওড়াফুলি। ইংরাজিতে মাস্টার্স করেও জোটেনি চাকরি। বরাবরই রক মিউজিকের ওপর ঝোঁক তার। আর এমন একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়ে বেজায় খুশি অর্পিতা। তাঁর কথায়, ভালবাসা, আর রোজকার দুয়ের এক অনবদ্য কম্বিনেশন, অনেকেই আছেন যারা তাদের পছন্দের বিষয় নিয়ে এগোতে পারেন না। আমি মিউজিক ভালবাসি, আর আমার কাছে ওটাই প্যাশন ও প্রফেশন। আমি মনের দিক থেকে খুবই খুশি। সমাজে মেয়েদের তাদের দক্ষতাকে আরও বেশি করে সকলের সামনে তুলে আনা দরকার”।