এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের হাজারতম আন্দোলন দিনে ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে উত্তেজনা ছিল সকাল থেকেই। মহিলা সহ বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী ন্যাড়া হয়ে হকের চাকরির দাবিতে সোচ্চার হন। যা সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হতেই উত্তেজনার মাত্রা বাড়তে থাকে। কংগ্রেস, বাম ও বিজেপির প্রতিনিধিরা পৌঁছে যান চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। এসবের মধ্যেই শনিবার দুপুরে আন্দোলনকারীদের মঞ্চে যান তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
সেই সময় চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু সহ বাম প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সেই সময় কুণাল ঘোষ সেখানে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তীব্র বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এমনকী চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের মধ্যে থেকে কুণাল ঘোষকে লক্ষ্য করে ওঠে 'চোর, চোর' স্লোগান। হাতে চোর লেখা পোস্টার নিয়েও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন একাংশ চাকরিপ্রার্থী। সরকারের প্রতিনিধি ছাড়া শাসক দলের কারোর সঙ্গে কোনও কথা নয় বলে চেঁচাতে থাকেন তাঁরা।
অবশ্য কুণাল নিজেই মুণ্ডিত মস্তক চাকরিপ্রার্থীদের বলেন, 'আমি ছবি তুলতে আসিনি। আমি মাথা ন্যাড়ার খবর পেয়ে এখানে এসেছি। চাকরিপ্রার্থীদের চাকরির একটা চেষ্টা চলছে। আমি ওদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।'
আরও পড়ুন- হকের চাকরি চেয়ে রাস্তায় হাজার দিন, মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ মহিলা SLST চাকরিপ্রার্থীদের
এরপর কুণাল ঘোষের সঙ্গে এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের আলোচনা হয়। বেশকিছুক্ষণ চলে আলোচনা। জট কাটাতে ওই স্থান থেকেই কুণাল ঘোষ ফোনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলেন। স্থির হয়, ১১ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সাত প্রতিনিধি বৈঠক করবেন।
বৈঠক শেষে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমার কাছে এঁরা (আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীরা) প্রায়ই যায়। নিয়মিত যোগযোগ রয়েছে। কিন্তু টিভি-তে দেখলাম সারদা বলে মেয়েটি মাথা কামিয়েছে। তখন আর বাড়িতে না থেকে ধর্নামঞ্চে এলাম। আমাকে ওঁরা আগেই এখানে বহুবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আসার জন্য। এবার এলাম। আমি স্পষ্টভাবে বলছি, ভুল কেউ করেছেন, পাপ-ও এই সরকারই প্রায়শ্চিত্ত করবে। অন্যরা যদি সমাধান দিতে পারেন তবে দিয়ে দেখান। বিক্ষোভের জন্য, বা রাজনীতির জন্য একানে এসে লাভ নেই। জট খোলার প্রক্রিয়া চলছে, কিছুটা এগিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চাকরি দিতে সচেষ্ট, দেখা যাক সোমবারের আলোচনায় কি হয়। এভাবেই সমস্যা সমাধানের পথ খুলবে বলে আশা করি।'
আরও পড়ুন- মোদীর সময় চেয়ে দিন বাঁধলেন মমতা, সঙ্গে হুঁশিয়ারি ‘না পেলে যা করার করব’
এই সিদ্ধান্তে খুশি চাকরিপ্রার্থীরা। এক আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থী বলেন, 'আমরা এতদিন সরকারের কাছে পৌঁছতে পারছিলাম না। কিন্তু, এখন সেটা হবে। আমরা আশাবাদী। আমরা চাই অবিলম্বে নিয়োগের জট কাটুক। আমরা যেন চাকরি পাই।'
দেখতে দেখতে এক হাজার দিন অতিক্রান্ত। এখনও মেলেনি চাকরি। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতেও কাজ হয়নি। আদৌ চাকরি মিলবে কি না, তারও কোনও নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছেন না চাকরিপ্রার্থীরা। এরই প্রতিবাদে এবং মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শনিবার সকালে ধর্মতলায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে নিজের মাথার চুল কেটে ন্যাড়া হন রাসমণি পাত্র নামে এক মহিলা চাকরি প্রার্থী। যা বাংলার 'লজ্জা' বলে শোরগোল পড়ে যায়।