একেই বলে বোধ হয় কুম্ভকর্ণের ঘুম! সারারাত ডিউটি করে বাড়ি ফিরে দরজায় খিল দিয়ে টানা ঘুম রেলের এক লোকো পাইলটের। স্ত্রী বাপের বাড়ি থাকার সুবাদে এসির ঠান্ডা হাওয়ায় বিউটি স্লিপ দিচ্ছিলেন ওই ব্যক্তি। বউয়ের ফোন, প্রতিবেশীর কলিং বেল বাজানো, দুম-দুম করে দরজা ধাক্কা-র কোনওটাতেই কাজ হয়নি। ঘুম ভাঙেনি ওই ব্যক্তির। শেষমেশ তাঁর ঘুম ভাঙাতে পুলিশ ডাকতে হয়। এর পরের ঘটনা জানতে পড়ুন বিস্তারিত।
হুগলির চুঁচুড়ার বড়বাজার এলাকার একটি বহুতলের তৃতীয় তলায় থাকেন পেশায় রেলের লোকো পাইলট সৌমেন নিয়োগী। তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছিলেন না। তিনি বাপের বাড়িতে এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষে গিয়েছিলেন। শুক্রবার রাতভর ডিউটি সেরে চুঁচুড়ার ওই আবাসনে ফেরেন সৌমেন নিয়োগী। শনিবার সকালে স্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পরেই ফ্ল্যাটের দরজা আটকে শুয়ে পড়েন তিনি।
অফিসের ক্লান্তির জেরে এক সময় ঘুমিয়েও পড়েন। তাঁর এই ঘুমেই যত বিপত্তি। স্বামীর খোঁজ নিতে মোবাইলে ফোন করলেও ফোন বেজে যায়। ঘুমন্ত স্বামী ফোন ধরেননি। উদ্বিগ্ন স্ত্রী তখন তাঁদের এক প্রতিবেশীকে বিষয়টি জানান। তড়িঘড়ি সৌমেনবাবুর ফ্ল্যাটে আসেন ওই প্রতিবেশীও। দরজা ধাক্কা দিলেও কোনও উত্তর আসে না। এমনকী বারবার কলিং বেল বাজানো হলেও সাড়া মেলেনি। তিনিও সৌমেনবাবুর মোবাইলে রিং করেন। তাতেও কোনও উত্তর নেই।
অনেক ডাকাডাকির পরেও সাড়া না মেলায় আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের বিষয়টি জানান ওই ব্যক্তি। ঠিক হয় দরজা ভাঙতে হবে। গোটা বিষয়টি জানানো হয় সৌমেন নিয়োগীর স্ত্রীকেও। তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর একটা। সৌমেনবাবুর স্ত্রী জানান বিয়ে বাড়ি উপলক্ষে তিনি পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে রয়েছেন।
আরও পড়ুন- ত্রিপুরায় সায়নীদের থানায় ডেকে হামলা, রক্তাক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা, কাঠগড়ায় বিজেপি
তবে শীঘ্রই তিনি চুঁচুড়া ফিরছেন। প্রতিবেশীদের তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, থানায় খবর দিতে এবং পুলিশের উপস্থিতিতেই দরজা ভাঙতে। এরপরেই ফ্ল্যাটের অন্য আবাসিকরা চুঁচুড়া থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে ওই ফ্ল্যাটের কোলাপ্সিবেল গেটের তালা ভাঙে। এরপর ফ্ল্যাটের দরজার ইন্টারলক ভাঙার জন্য ছেনি-হাতুড়ি আনা হয়।
ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ইন্টারলক ভেঙে দরজা খুলতেই সবার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। চোখ কচলাতে কচলাতে খালি গায়ে বারমুডা পড়ে বেরিয়ে আসেন সৌমেন। এত লোককে দেখে হকচকিয়ে যান তিনি। ঘড়িতে তখন প্রায় বেলা আড়াইটে। হুঁশ ফিরতেই লজ্জিত হয়ে পড়েন সৌমেনবাবু।
ক্লান্তির জেরে তিনি অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বলে জানান। ঘুমিয়ে পড়ার জন্যই স্ত্রীকে ফোন করতে পারেননি তিনি। যাই হোক, সৌমেনবাবুকে সুস্থ দেখে সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। দ্রুত ফোনে স্বামীর 'কীর্তি'র কথা জানানো হয় স্ত্রীকে। স্ত্রী তখন অনওয়ে। সুদূর মেমারি থেকে তিনি ফিরছেন চুঁচুড়ায়। তবে স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলার পর ফের তিনি রওনা দেন মেমারির উদ্দেশে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন