'ইন্সটিউশ্যানাল মার্ডার' অথবা প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার তত্ত্ব নিয়ে সকাল সকাল বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের বিক্ষোভের জেরে উত্তপ্ত যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। এদিন সকাল ১০টা বাজতেই না-বাজতেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে তোলপাড় পড়ে যায়। ক্যাটিন থেকে শুরু করে ক্লাসরুম সর্বত্র একই চর্চা। বিচার চাই স্বপ্নদীপের। শহরতলির এই মেধাবী ছাত্রের এমন করুণ পরিণতি যেন কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সহপাঠী থেকে সিনিয়াররাও। হোস্টেলে কারা এই ঘটনায় সঙ্গে যুক্ত? কেন এখনও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সামনে আনা হয়নি এই নিয়ে দফায় দফায় চলে বিক্ষোভ। এমন ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমা এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-ছাত্রদের একাংশ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে কোনও উপাচার্য নেই। তাই রেজিস্ট্রারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রমৃত্যুতে কোনভাবেই নিজের দায় এড়াতে পারেন না তিনি। সংবাদ মাধ্যমের সামনে একথা বলেও উপাচার্যের প্রসঙ্গও টেনে আনেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। গত চারদিন ধরে ক্যাম্পাসে দেখা মেলেনি রেজিস্ট্রারের। বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ সোমবার ঢুকতেই তাঁকে এই প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। সেই প্রশ্ন শুনে কার্যত কেঁদে ফেলেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, অসুস্থতার কারণেই গত চারদিন ক্যাম্পাসে হাজির থাকতে পারেন নি তিনি। মেডিক্যাল লিভ-এ থাকার কারণে গত চারদিন তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। পাশাপাশি তিনি জানান, এক অভ্যন্তরীণ কমিটি ঘটনার তদন্ত করছে, পুলিশও তদন্ত করছে। দোষীরা দ্রুত শাস্তি পাক, এটাই এখন মূল লক্ষ্য।
স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্য মৃত্যুতে সৌরভ চৌধুরীর পর গ্রেফতার হয়েছে আরও দু’জন। এই মামলায় জুড়তে পারে পকসো আইনের ধারা। পুলিশ সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য,গত মার্চেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দেন সুরঞ্জন দাস। পরে ওই পদে অস্থায়ী উপাচার্য হিসাবে যাদবপুরেরই ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অমিতাভ দত্তকে নিয়োগ করেন আচার্য। গত ৪ অগস্ট তিনিও ইস্তফা দেন। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেজিস্টার এদিন বলেন, "উপাচার্য না থাকলে অনেক ক্ষেত্রে অনুমোদন পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এবার মেনে নিয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। তিনি এদিন বলেন, ‘দোষীরা যেন শাস্তি পায়। এই ধরনের র্যাগিংয়ের ঘটনা আর যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে না ঘটে। এবার নজরদারি আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমাদের নিউ বয়েজ হস্টেলেও যাব। ওখানে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলব। নিরাপত্তারক্ষীদেরও নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দেব। এটাই আমার প্রথম কর্তব্য।’
লিখিতভাবে অভিযোগ না এলে র্যাগিংয়ের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করাটা সমস্যার হয় বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। তাঁর কথায়, ‘এর আগে ছাত্ররা ভয়ে হোক বা যে কোনও কারণেই হোক কারও নাম নিয়ে আমাদের কাছে র্যাগিংয়ের অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ না এলে তো কোনও ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি না। তবে অভিযোগ এলে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। তবে এবার যদি তাঁরা মুখ খোলে আমাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মর্মান্তিক পরিণতিতে রাজ্যের শিক্ষাজগতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। নদিয়ার বগুলা থেকে রাজ্যের স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে এসেছিলেন স্বপ্নদীপ কুণ্ডু। অভিযোগ, সিনিয়রদের র্যাগিংয়ের শিকার হতে হয় তাঁকে। হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর।