আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ছুঁইছুঁই, রাজ্যে দাপট বাড়িয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। ৪০ তম সপ্তাহের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে মাত্র ৭ দিনে রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪হাজার ৬৭৮ জন। সব মিলিয়ে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু। সব মিলিয়ে কলকাতার পরিস্থিতি মোটের ওপর ভাল নয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, ১ লা জানুয়ারি থেকে ৫ ই অক্টোবর শুধু কলকাতাতেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২হাজার ৮০০। এর আগে ২০১৯ সালে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল সেবার পরিসংখ্যান বলছে একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,৬৩০। চলতি বছরের পরিস্থিতি আগের সব পরিস্থিতিকে যে ছাপিয়ে যেতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে চলতি বছরের যা পরিসংখ্যান তা বিগত বছরের সব হিসেব-নিকেশকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতে পারে। শুক্রবারই ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর এক ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখান থেকে যেটা উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কম বয়সিদের মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ চলতি বছরে সর্বাধিক। কিন্তু কেন এই প্রবণতা?
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, “শেষ এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি জেলার নির্দিষ্ট কতগুলি পুর এলাকায় লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা”। DEN 3 স্ট্রেনের দাপটেই ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত, পুজোর আগে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা! চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য দফতরের এক সিনিয়ার কর্তা বলেন, “কলকাতার পাশাপাশি অন্যান্য আশেপাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোটেও ভাল নয়। কলকাতায়, আমরা ডেঙ্গুর সংখ্যায় রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছি। জানুয়ারি থেকে, আমরা শুধুমাত্র কলকাতাতেই ২৮০০ টি কেস খুঁজে পেয়েছি। যা রেকর্ড,” ।
তিনি আরও বলেন, “ এ বছর বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং সেই কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টিপাতের কারণে, জমা জল লার্ভা প্রজননের স্বর্গ রাজ্য। এই উৎসবের মরসুমে, আমরা বিশ্বাস করি যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে”।
কেএমসি স্বাস্থ্য বিভাগের একজন সিনিয়ার আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে এই বিষয়ে প্রতিটি বোরো এবং ওয়ার্ডকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও যেন জল জমে না যায় সেদিকে নজর রাখতে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা পূজো কমিটিগুলোকে এ ব্যাপারে চোখ খোলা রাখতে বলেছি।“ যে সব জায়গায় প্যাণ্ডেলের ফলে গর্ত হয়েছে সেগুলি বুজিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় বরাবরই রাজ্য সরকার আশা কর্মীদের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। তারাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বাড়ি বাড়ি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন যা রোগ মোকাবিলায় সরকারকে অনেকাংশেই সাহায্য করে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায় ‘‘সংক্রমণের প্রথম পর্যায়তেই মোকাবিলা জরুরি। তবে তার জন্য সরকারের কাছে নির্ভুল তথ্য থাকা দরকার। তাই তথ্য পেতে আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং স্বনির্ভর প্রকল্পের মহিলারা বিশেষ ভাবে সাহায্য করেন। জ্বরের খবর সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু রুখতে সচেতনতা-প্রচারও চালান তাঁরা’।
তিনি বলেন, অনেকক্ষেত্রেই ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিস্থিতি হঠাৎ করেই জটিল হয়ে পড়ে। আশা-কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জ্বরের খবর পেলেই তা স্বাস্থ্য দফতরকে জানায়, সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য দফতর পরবর্তী পদক্ষেপ করেন। আশা কর্মীদের কাজের ফলে সরকারের পক্ষেও কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মীদের আশা- অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন বাড়িতে জ্বরের কোন খবর পেলেই তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়”। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের তরফে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে আশা কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে যাবেন। পরিদর্শনের সময় যাদের জ্বরের খবর পাবেন তাদের ডেঙ্গু টেস্ট করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহও দেবেন “।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, “শেষ এক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি জেলার নির্দিষ্ট কতগুলি পুর এলাকায় লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা”। DEN 3 স্ট্রেনের দাপটেই ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত, পুজোর আগে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা! চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে প্রধানত DEN 3 স্ট্রেনকেই দুষছেন চিকিৎসকরা।
ফি বছর রাজ্যে বর্ষার শেষে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া সহ বিভিন্ন পতঙ্গবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এবারেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার শেষে শহর এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা। কপালে চিন্তার ভাঁজ প্রশাসনের। কলকাতা পুরসভার একাধিক বোরোতে মিলেছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু কলকাতা নয়, একাধিক জেলাতেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে চলতি বছরের ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে আবহাওয়ার খাম-খেয়ালিকেই দায়ি করছেন চিকিৎসকরা। বিখ্যাত চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদ্বীপ ঘোষ বলেন, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ থেকে ৪ গুন বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।
আরও পড়ুন: < গরুপাচার মামলায় অনুব্রত-কন্যাকে নোটিস, সুকন্যার সংস্থার নথি চাইল সিবিআই >
স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানিয়েছেন চলতি বছর ডেঙ্গুতে বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে হাসপাতালে আনার কয়েক ঘন্টা বা এক বা দুই দিনের মধ্যে। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীদের জন্য সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ একবার ‘ডেঙ্গু শক’ শুরু হলে রোগীকে বাঁচানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে, রাজ্য জুড়ে প্রতিদিন প্রায় সাতশো’র কাছাকাছি নতুন কেস রিপোর্ট করা হচ্ছে। ৮০০ জনেরও বেশি রোগী সারা বাংলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চলতি বছর কলকাতায় ৩হাজার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর গ্রাফ গত পাঁচ বছরের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে”।