দলের মহাসচিব গ্রেফতার। কাজের ছেলে, সংগঠনটা ভালো বোঝা বীরভূমের কেষ্ট, অনুব্রত মণ্ডলও শ্রীঘরে। এই পরিস্থিতিতে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের একেক নেতার মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে একেক কথা। কলকাতায় যখন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত কাছের বলে পরিচিত মেয়র ফিরহাদ হাকিম দলীয় কর্মীদের অনুরোধ করলেন বিরোধীদের মুখ থেকে 'চোর চোর চোরটা' স্লোগান শুনেও চুপ থাকতে। সেই সময় হুগলির চুঁচুড়ার প্রতিবাদ সভায় উলটো কথা শোনা গেল স্থানীয় বিধায়ক অসিত মজুমদার, সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে। প্রকাশ্য সভায় তাঁরা দলীয় কর্মীদের আগামী পথ ঠিক করে দিয়ে নির্দেশ দিলেন, 'বদল নয়, বদলা চাই'।
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর দলীয় কর্মীদের সংযত করতে দলের লাইন ঠিক করে দিয়েছিলেন সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছিলেন, 'বদলা নয়, বদল চাই'। বর্তমানে দলের টালমাটাল পরিস্থিতিতে সুপ্রিমোকেও যে তাঁরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না, শনিবার কার্যত তা স্পষ্ট করে দিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রকাশ্যে দলীয় কর্মীদের বলে দিলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা কথার আমি ভুল ধরছি। ১১ সালে দিদি বলেছিলেন, বদলা নয়, বদল চাই। স্লোগানটা ভুল ছিল। বদলার বদলে বদলাই ঠিক ছিল।'
কয়েকদিন আগে প্রকাশ্য রাস্তায় মিছিলরত বিজেপি কর্মীদের লাঠিপেটা করে দলের একাংশের তারিফ কুড়িয়েছিলেন চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার। শনিবার সেই মেজাজ ধরে রেখে অসিত বললেন, 'মমতা-অভিষেকের নামে কুৎসা হলে ধোলাই হবে, পেটাই হবে।' কিন্তু, অসিত যতই পেটাইয়ের কাজটা করে দেখান না-কেন, শনিবার শুধু গলা চড়িয়েই তাঁকে টপকে গেলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বদলার স্লোগান তোলার পাশাপাশি, স্বভাবসিদ্ধ আইনজীবীর ভূমিকায় দলীয় মঞ্চে দাঁড়িয়েই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সিগুলোকে তুলোধনা করলেন কল্যাণ।
শ্রীরামপুরের সাংসদ বললেন, 'আমি অনুব্রতকে ডিফেন্ড করছি না। আমি করবও না। দল বলেছে যে যার নিজের মত কাজ করবে। কিন্তু, আমি তো একজন আইনজীবী। প্রশ্ন তো আসবে যে অনুব্রত বাংলাদেশের বর্ডারে কি গরু কাঁধে করে নিয়ে গিয়েছিল? প্রমাণ করতে পারবেন? পারবেন প্রমাণ করতে? কটা গরু দেখেছেন? সেটা সাদা গরু ছিল না কালো গরু ছিল? লেজটা কেমন ছিল? ইডির মুখ দেখে চলে নাকি?'
আরও পড়ুন- ‘চোর চোর’ শুনলেও ‘ধৈর্য বজায় রাখুন’, তৃণমূল কর্মীদের প্রতি আহ্বান ফিরহাদের
কল্যাণ বলেন, 'খুপরিতে আমারও কিছু পড়াশোনা আছে। বলুন কটা গরু? ঘুষের টাকার কথা বলছেন? ক'জন এসে বলবেন যে আমি ঘুষ দিয়েছি? কে বলবে বলুন? যে ঘুষ দেয়, সে-ও আইনের প্যাঁচে পড়বে। আইন অনুযায়ী জেলে যেতে হবে। এগুলো মেরিটের ব্যাপার। অনুব্রত মণ্ডলের যাঁরা আইনজীবী তাঁরা আর্গুমেন্ট করবেন এবিষয়ে। আমার কিছু বলার নেই। অ্যারেস্ট করেছেন ভালো কথা। কিন্তু, প্রমাণ করার দায়িত্বও আপনার। দিনের পর দিন, এই ভাবে ফেলে রাখতে পারেন না।'
কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে তৃণমূল নেতাদেরকে খুন করারও অভিযোগ তোলেন কল্যাণ। তিনি বলেন, 'একটার পর একটা লোককে গ্রেফতার করবেন- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অ্যারেস্ট করে জেলে রেখেছিলেন। মদন মিত্রকেও অ্যারেস্ট করেছিলেন। আজও পর্যন্ত কেন প্রমাণ করতে পারলেন না? তারা দোষ করেছে, কেন প্রমাণ করতে পারলেন না? নারদা নিয়ে গ্রেফতার করেছিলেন, কই? দুই-আড়াই বছর হয়ে গেল চার্জশিট ফাইল করেছিলেন। আপনারা খুন করলেন মানুষকে। নরেন্দ্র মোদী, আপনার সরকার এই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের তিন জন মানুষকে পরোক্ষভাবে খুন করেছে। সিবিআই আর ইডির ভয় দেখিয়ে সুলতান আহমেদ, তাপস পাল, সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে খুন করেছে। দিনের পর দিন কেস ঝুলিয়ে রেখে, বয়স্ক লোকগুলোকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করেছে আপনার সরকার।'