মা-বাবাই একাজে তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। সেই অনুপ্রেরণা পেয়েই ছোট্ট মেয়েটির মনেও এব্যাপারে প্রবল ইচ্ছে জন্মায়। ক্যান্সার (Cancer) আক্রান্তদের জন্য তাঁর এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এখন বেশ চর্চায়। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর এমন অকল্পনীয় তৎপরতা অন্যদেরও একাজে উৎসাহ জোগাবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
ক্যান্সার আক্রান্তদের নানা জটিল চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ওষুধের প্রভাবেই তাঁদের অনেকের মাথার চুল উঠে যায়। শারীরিকভাবে তো বটেই এভাবে মাথার চুল উঠে যাওয়ার কারণে অনেক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীই মানসিকভাবেও অত্যন্ত ভেঙে পড়েন। এই বিষয়টিই মেয়েকে বুঝিয়েছিলেন সোনারপুরের সুমিতা দাস। তাঁর মেয়ে অস্মিতা সোনারপুরের একটি বেসরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
অস্মিতার মাথা ভর্তি চুল ছিল। সেই চুল প্রথমে তাকে কেটে ফেলতে বললে সে রাজি হয়নি। পরে তাঁর মা-বাবা সুমিতাকে ক্যান্সার আক্রান্তদের কথা বলেন। তাঁর চুল দান করলে তা থেকে উইগ (Hair Wig) বানিয়ে পরতে পারেন ক্যান্সার আক্রান্তরা। একথা মেয়েকে বুঝিয়েছেন মা-বাবা। এছাড়াও তাঁদের বাড়িতে নিজের জেঠুকেও অস্মিতা খুব কাছ থেকে দেখেছে। তাঁর জেঠুও ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। জেঠুর মাথার চুল উঠে যাচ্ছে দেখে বারবার ছোট্ট অস্মিতা এর কারণ জানতে চেয়েছিল বাবা-মায়ের কাছে। বছর দু'য়েক আগে ক্যান্সারে ভুগেই তাঁর জেঠুর মৃত্যু হয়।
তারপর থেকেই মনে জেদটা আর বেড়ে যায় ছোট্ট মেয়েটির। শেষমেশ নিজের মাথার বেশ খানিকটা চুল সে কেটে ফেলেছে। সেই চুলই একটি সংস্থাকে পাঠিয়ে দেবে সে। ওই চুল থেকেই এবার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর জন্য তৈরি হবে উইগ।
মেয়ের মহতী এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে অস্মিতার মা সুমিতা দাস বলেন, "প্রথমে ও চুল কাটতেই চাইছিল না। ওকে ক্যান্সার আক্রান্তদের কথা বলি। ক্যান্সার আক্রান্তদের অনেকের মাথার চুল না থাকার জেরে উইগ বানানোর কথা বলি ওকে। এটা বলার পর ও বলে আমি চুল দেব। যত্ন নিয়ে চুল আরও বড় করেছিল। ওর ভিতরে এই ভাবনাটা আমরা আনতে পেরেছিলাম। কথার মাধ্যমেই এই ভাবনা ওর ভিতর চলে আসে।"
অন্যন্য এই কীর্তি প্রসঙ্গে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অস্মিতা দাস বলেছে, "মা-বাবার কাছ থেকে জেনেছিলাম ক্যান্সার আক্রান্তদের চুল পড়ে যায়। আমার বড় চুল ছিল। আমি ওদের চুল দিতে চেয়েছিলাম।"