সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বদলির বিজ্ঞপ্তি ঘিরে অসন্তোষ চরমে। বদলির সিদ্ধান্ত 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ' বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর। সংগঠনের দাবি, বদলির আদেশনামায় কোনও কোনও চিকিৎসককে এমনসব জায়গায় পাঠানো হয়েছে যেখানে সেই বিভাগই নেই। এধরণের বদলির জেরে চিকিৎসা বিদ্যার ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিপজ্জনক খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বলেও দাবি ওই চিকিৎসক সংগঠনের।
পুরো বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস। সংগঠনের হুঁশিয়ারি, বদলির নির্দেশিকা প্রত্যাহার না হলে সংগঠনের সদস্য চিকিৎসকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন। তাতে পরিষেবা বিঘ্নিত হলে তার দায় স্বাস্থ্য দফতরের।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস-এর প্রতিবাদপত্রে কী লেখা রয়েছে?
'সম্প্রতি মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে, পরপর বেশ কিছু বদলি আদেশনামা বেরিয়েছে যেগুলো পুরোপুরি প্রতিহিংসা মূলক বলেই আমরা মনে করি। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনে সরকারপন্থীদের বিরুদ্ধে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন বা লড়াই করেছিলেন তাদেরকে বেছে বেছে বদলি করা হয়েছে এই সমস্ত আদেশনামায়। রুটিন বদলির পরিচিত সরকারি ভাষ্য থাকলেও,পরের দিনই সবাইকে রিলিজ করে দেওয়া হয়।এমনকি কাউকে কাউকে ছুটি থেকে ডেকে নিয়ে এসেও রিলিজ অর্ডার ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই সমস্ত আদেশনামায়, কাউকে পাঠানো হয়েছে এমন জায়গায় যেখানে সেই বিভাগই নেই। দশ বছর জেলায় কাজ করার পরেও,অবসরের মাত্র তিন বছর আগে,আবার পাঠানো হয়েছে বাইরে। আবার সদ্য জেলায় বদলি হওয়া চিকিৎসক বা জেলায় দীর্ঘদিন কাজ করে চলা চিকিৎসককে আবার পাঠানো হয়েছে দূরবর্তী জেলায়। সরকারি ভাষ্যে রুটিন বদলি বলা হলেও কি প্রয়োজনে তাঁদের সবাইকে পরের দিনই রিলিজ করে দেওয়া হলো তার উত্তর চাইতে গেলে, স্বাস্থ্য সচিব জয়েন্ট প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধিদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।'
'গোটা চিকিৎসক সমাজ এই ধরণের বদলির আদেশনামায়, প্রতিবাদে গর্জে উঠলেও নির্লজ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ গতকাল ( ২৩.১০.২৩ ) আবার কয়েক জনের বদলি করেছে। যারা মধ্যে আছেন পিজি হাসপাতালের নেফ্রোলজির বিভাগীয় প্রধান এবং আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনের সদ্য প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান।'
'পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসা-শিক্ষার শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষ কেন্দ্র পিজি হাসপাতালে ৩০জন ডিএম, নেফ্রোলজি ছাত্রছাত্রী আছে। ডাঃ অর্পিতা রায়চৌধুরী চলে গেলে থাকবেন শুধু মাত্র ২ জন অ্যাসিট্যান্ট প্ৰফেসর, যারা ডিএম স্টুডেন্টের গাইড হতে পারেন না। ফলে ওই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিপজ্জনক খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হলো।'
'চিকিৎসক না পাওয়ার জন্যে রাজ্যের বহু সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পরিষেবা যেখানে চালুই করা যায়নি, এমনকি কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ গুলোতেও সুপার স্পেশালিটি বিভাগ গুলি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে, সেখানে রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করতে, সরকারপন্থীরা, "পাবলিক ইন্টারেস্ট" এর পরিবর্তে মানুষকে কেন আরও বিপদের মধ্যে ফেলবে? অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টে আমরা অন্য রাজ্য থেকে অনেক পিছিয়ে। যে চিকিৎসকের হাত ধরে ( ডাঃ অর্পিতা রায় চৌধুরী-জয়েন্ট ডিরেক্টর রিজিওনাল অর্গান এন্ড টিস্যু ট্রান্সপ্ল্যান্ট অর্গানাইজেসন ) আমরা এগোচ্ছিলাম, তাকে কার্যত বিভাগহীন জায়গায় বদলি করে, এতো গুলো ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলার অধিকার কে দিয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসনকে?'
'ডিএম, নেফ্রোলজি পাঠরত এই ৩০ জন ছেলেমেয়ের স্বার্থে, আমরা, অবিলম্বে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের পিজি মেডিক্যাল এডুকেশন বোর্ডকে ( NMC….PG-MEB ) চিঠি লিখে বিহিত চাইবো।'
'অন্যদিকে পোস্ট মর্টেমের জন্যে অপেক্ষারত শবদেহ, অনৈতিক ভাবে, পরিজনের অনুমতি ব্যতিরেকে, ওয়ার্ক শপে ব্যবহারের অনুমতি দিতে অস্বীকার করায়, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানকে পদ থেকে সরিয়েও শান্তি না পাওয়ায়,তাঁকে বদলি করা দেওয়া হলো প্রান্তিক জেলায়। আমরা ধিক্কার জানাই শিরদাঁড়াহীন, সরকারের চাটুকারে পরিণত হওয়া স্বাস্থ্য প্রশাসকদের।'
'এই সমস্ত অন্যায় বদলির আদেশনামা প্রত্যাহার করার জন্যে আমরা স্বাস্থ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছি। কোনো সুরাহা না হলে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো। তাতে পরিষেবা বিঘ্নিত হলে তার দায় স্বাস্থ্য দপ্তরকে নিতে হবে।'
প্রতিবাদপত্রে সাক্ষর রয়েছে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মানস গুমটার।