Calcutta HC Judge Chitta Ranjan Dash: বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ, সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে অবসর নিয়েছেন তিনি। গতকাল হাইকোর্টে অন্য একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চলে বিচারপতি দাশের অবসরগ্রহণ পর্ব। সেই অনুষ্ঠানেই নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিচারপতি দাশ যা বলেছেন তা ঘিরে চর্চা যেন থামছেই না।
বিদায়ী ভাষণে বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ গতকাল বলেছেন, “আজ আমাকে সত্যিটা বলতেই হচ্ছে। আমি একটি সংগঠনের কাছে ভীষণ ঋণী… আমার শৈশব থেকে যৌবন জুড়ে আছে সংগঠনটি। আমি সাহসী, ন্যায়পরায়ণ হতে শিখেছি… অন্যদের জন্য সমান দৃষ্টিভঙ্গি, এবং সর্বোপরি, যেখানেই কাজ করি দেশপ্রেম এবং কাজের প্রতি অঙ্গীকারের অনুভূতি সেখান থেকেই শিখেছি। কেউ বিরক্ত হলেও আমাকে এখানে স্বীকার করতেই হবে যে আমি RSS-এর সদস্য ছিলাম এবং আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন সদস্য।”
“আমার কাজের জন্যই প্রায় ৩৭ বছর পর্যন্ত সংগঠন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলাম। আমি আমার কর্মজীবনের কোনও অগ্রগতির জন্য সংগঠনে আমার সদস্যপদের ব্যবহার করিনি, কারণ এটি সংগঠনের নীতির বিরুদ্ধে। আমি প্রত্যেকের সঙ্গে সমান আচরণ করেছি। সে ধনী হোক, দরিদ্র হোক, কমিউনিস্ট হোক, বিজেপি হোক, কংগ্রেস হোক, তৃণমূল কংগ্রেস হোক। আমার কাছে সবাই সমান, এবং আমার আচরণ থেকে আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন, আমার কারও প্রতি কোনও পক্ষপাতিত্ব করিনি। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দর্শন বা বিশেষ রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি কোনওদিনও পক্ষপাতিত্ব করিনি। আমি দুটি নীতিতে ন্যায়বিচার দেওয়ার চেষ্টা করি। একটি হল সহানুভূতি, দ্বিতীয়টি হল ন্যায়বিচারের জন্য আইনের সাহায্য নেওয়া, কিন্তু ন্যায়বিচারকে আইন অনুযায়ী ঘোরানো যায় না।”
বিচারপতি দাশের কথায়, "এই দুটি নীতি, আমি সবসময় আমার জীবনে প্রয়োগ করেছি। আমি হয়তো ভুল করেছি কিংবা আমি হয়তো ঠিক করেছি। কিন্তু আমি এখন সংগঠনে ফিরে যেতে প্রস্তুত। যদি তাঁরা আমাকে কোনও সহায়তা কিংবা কাজের জন্য ডাকেন আমি যেতে প্রস্তুত। কারণ আমি আমার জীবনে কোনও অন্যায় করিনি। তাই আজ এটা বলার সাহস পেয়েছি যে আমি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ এটিও ভুল নয়। আমি যদি একজন ভালো মানুষ হই, তাহলে আমি কোনও খারাপ সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি না।”
আরও পড়ুন- Premium: প্রার্থীদের নামই জানেন না এঁরা! কাঁটাতারের ওপারের ভোট কেমন? ব্যতিক্রমী গল্পে তাজ্জব হবেন!
বিচারপতি দাশ তাঁর বক্তৃতায় কলকাতা হাইকোর্টের সোনালী ইতিহাসের কথাও তাঁর বিদায়ী ভাষণে তুলে ধরেছিলেন। তিনি গতকাল বলেছিলেন, “এই আদালত দেশের প্রথম চার্টার্ড হাইকোর্ট। এমনকী সুপ্রিম কোর্টও এখানেই জন্ম নিয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে… কিন্তু আজ হতাশার বিষয় হল যে কলকাতা হাইকোর্ট সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে।"
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালে ওড়িশার শোনেপুরে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি দাশ। উলুণ্ডায় তাঁর স্কুলজীবনের শুরু। ঢেঙ্কানাল এবং ভুবনেশ্বরে তাঁর উচ্চ শিক্ষা হয়। এরপর তিনি ১৯৮৫ সালে কটক থেকে আইনে স্নাতক হন। ১৯৮৬-তে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। অতিরিক্ত স্থায়ী কাউন্সেল হিসেবেও নিযুক্ত হন। ১৯৯২ সালে রাজ্য সরকারের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশ ওড়িশা সুপিরিয়র জুডিশিয়াল সার্ভিসে (সিনিয়র ব্রাঞ্চ) ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরাসরি নিয়োগ পেয়েছিলেন। ২০০৯ সালের অক্টোবরে তিনি ওড়িশা হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২২ সালের জুন মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি হিসাবে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।