ছিল নদী, কিন্তু এখন সেই নদীর বুকেই গড়ে উঠেছে রাস্তা। নদীতে জল নেই, বদলে ওই রাস্তা দিয়ে এপাড় ওপাড় করেন মানুষ। পুরাতন মালদার মাধাইপুর এলাকার বেহুলা নদীর মাঝ বরাবর মাটি দিয়ে চলাচলের আস্ত রাস্তা তৈরি করে ফেলা হয়েছে। যার ফলে ওই নদীর জল এখন সঠিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে না, বেহুলা নদী খাদ এখন কোথাও শুকনো মাঠ, আবার কোথাও কচুরিপানায় পরিপূর্ণ। কে বা কারা নদীতে মাটি ফেলল তা এখনও জানা যায়নি বলে দাবি প্রশাসনের।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্বে অভিযোগ বিগত দিনে মালদা জেলা পরিষদ থেকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে বেহুলা নদী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কাজও শুরু হয়েছিল জোর কদমে। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই ১০০ দিন প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়ায় বেহুলা নদী সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর জন্য দায়ী কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
তৃণমূলের এই অভিযোগকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন পুরাতন মালদার বিজেপি বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহা। তাঁর দাবি, ১০০ দিনের কাজের নামে অনেক টাকা নয়ছয় করেছে শাসক দল তৃণমূল। বেহুলা নদীর আজ দুর্দশার জন্য দায়ী রাজ্য সরকার।
মালদার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে মজে যাওয়া বেহুলা নদী। মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মহানন্দায় মিশে গিয়েছে বেহুলা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বেহুলা নদী সংস্কার হয়নি। এখন এই বেহুলা নদীর সংলগ্ন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস রোড গড়ে উঠেছে। যার ফলে ওই এলাকার জায়গার দাম হু হু করে বাড়ছে। একশ্রেণীর মাটি মাফিয়ারা এখন নদী বুজিয়ে জায়গা দখল করতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধাইপুর এলাকার বেহুলা নদীর এক অংশ পারাপারের জন্য মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে, যেখান দিয়ে সহজেই অনেকেই যাতায়াত করছেন। নদীর মাঝে মাটির সরু আল এর মত রাস্তা হয়ে যাওয়ার কারণেই বেহুলার জল নিয়মিত প্রবাহিত হতে পারেন না। ফলে একদিকে যেমন শুকনো মাঠে পরিণত হয়েছে বেহুলার একাংশ, অপরদিকে নদীর জল থেমে থাকার কারণে কচুরিপানা জঞ্জালে ভরে গিয়েছে।
মালদা পরিবেশ বাঁচাও সমিতির সম্পাদক তথা বিশিষ্ট আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় দাস জানিয়েছেন এই ধরনের কাজ যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বেহুলা নদীর ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় এই নদী অনেকটাই বড় ছিল এখন হাইড্রেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে কোথাও কোথাও মাটি মাটি ফেলে নদীর মধ্যে সরু আল এর মত যাতায়াতের রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এতে প্রকৃতির ভারসাম্য মার খাচ্ছে। নদী থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে অবিলম্বে বেহুলা নদীর সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
মালদা জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে যখন আমি সভাধিপতি ছিলাম তখন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরাতন মালদার বেহুলা নদী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এই প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দেওয়ার কারণেই মাঝপথে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় নদী সংস্কারে অনেকটাই কাজ হয়েছিল। ফলে নদীর আজকে বেহাল পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্র সরকার দায়ী।
যদিও এ ব্যাপারে পুরাতন মালদার বিজেপি বিধায়ক গোপাল চন্দ্র সাহা জানিয়েছেন বেহুলা নদী সংস্কারের উদ্যোগ বহুদিন আগেই নেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত যা তা হয়নি, যে কথা বলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।