মন মানছে না চিত্তরঞ্জন এভেনিউর বেরিয়াল পরিবারের সদস্য়দের। তাঁদের মনের মানুষটি আর নেই। অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। চিরতরে বিদায় নেওয়ায় শোকের আবহাওয়ায় ফোটো অ্য়ালবামে ওই পরিবারের সদস্য়রা খুঁজে বেড়াচ্ছে পুরানো স্মৃতি। যে ঘরে অটলজি থাকতেন ঘুরে ফিরে ঢুকছেন সেই ঘরে। একটাই আলোচনা আর কখনও এই বাড়িতে তাঁর পায়ের চিহ্ন পড়বে না। দিল্লি গেলে খোঁজও নেবেন না তিনি।
১৮৭, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। বেরিয়াল হাউস। কলকাতা। কলকাতায় এলে এই বাড়িতেই থাকতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। এই বাড়ির ছ তলায় ঘনশ্য়াম বেরিয়ালার ঘরেই দলীয় বৈঠক করতেন। রাত্রিযাপনও করতেন এখানে। ১৯৫৬ সাল থেকে অটলজির যাতায়াত বেরিয়াল পরিবারের সঙ্গে। শান্তিদেবীর হাতের রান্নাও খুব পছন্দ করতেন তিনি। বৃহস্পতিবার ফোটের অ্য়ালবামে হারানো স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেরিয়াল পরিবারের সদস্য়রা। আজ তাঁদের মন খারাপ।
Atal Bihari Vajpayee: বেরিয়ালদের এই ঘরই ছিল অটলজির শয়নকক্ষ। ছবি- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা
ঘনশ্য়ামবাবুর ছেলে কমল বেরিয়াল বলছিলেন, “প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একবার এই বাড়িতে এসেছিলেন। কিন্তু ৫৬ সাল থেকে আমাদের বাড়িতে আসতেন অটলজি। তারপর প্রায়ই এ বাড়িতে এসেছেন। দলের বৈঠক সেরেছেন। টানা দুতিন থাকতেন আমাদের বাড়িতে। পরিবারের সব সদস্য়েদর সঙ্গেই তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক ছিল।’’
অটলবিহারীর সঙ্গে বেরিয়াল পরিবারের বন্ধন চিরদিন অটলই ছিল। কমলবাবু বলছিলেন, “আমাদের পরিবারের প্রত্য়েক সদস্য়ের নাম জানতেন। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন যখন কলকাতায় আসতেন তিনি এয়ারপোর্টে আমাদের ডেকে নিতেন। এমনকি রাজভবনেও দেখা করতে ডাকতেন। কখনও ভুলে যাননি। পরিবারের সন্তান হওয়া থেকে বিয়ের ব্য়াপারেও খোঁজখবর নিতেন। খুব বড় হৃদয়ের মানুষ ছিলেন।“
আরও পড়ুন, শুধু কবিতার জন্যেও মনে রাখা যায় তাঁকে
কমলবাবু জানান, সকাল ছটায় ঘুম থেকে উঠে পড়তেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। রাত সাড়ে ৯টার মধ্য়ে শুয়ে পড়তেন। শেষবার যোগাযোগ হয়েছিল ২০০৫ সালে। দিল্লি গেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতাম। বাড়ির সকলের খোঁজ নিতেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কু গাইছিল মন। ঘনশ্য়াম বেরিয়াল পরিবারের সদস্য়রা অ্য়ালবাম ঘাঁটতে শুরু করেন তখন থেকেই। ছবি ওল্টাতে থাকেন ঘনশ্য়ামবাবুর স্ত্রী শান্তি দেবী। তিনি জানান, অটলজির জন্য় তিনি রান্না করতেন। তাঁর হাতের রান্না খুব পছন্দ করতেন অটল। কমলবাবু বললেন, কলকাতার সন্দেশ ও রসগোল্লা খেতে খুব ভালবাসতেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন সকাল থেকেই তাঁদের চোখ টিভির পর্দায়। কখন কী খবর আসবে কে জানে। অবশেষে পড়ন্ত বিকেলে যখন খবর পেলেন সব শেষ, তখন স্তব্ধতা। আত্মীয় বিয়োগের ব্য়াথা তাঁদের পরিবারের সকল সদস্য়ের মধেই।
বড়দের কাছে গল্প শুনেছে স্কুল পড়ুয়া সুশান্ত বেরিয়ালেরও আজ মন খুব খারাপ। তার দিল্লির দাদাজি চলে গেলেন। দেখা হল না।