শান্তিনিকেতনের বাড়ি বিতর্কে এবার মুখ খুললেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই তাঁর অভিযোগ, ‘বিশ্বভারতী কোনও দিন আমাদের জমি নিয়ে কোনও বেনিয়মের কথা জানায়নি। পরিস্কার যে রাজনৈতিক কারণেই এই ধরণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে।'
অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমিও ঢুকে গিয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, জমির মাপ করে দেখা যায়, পাশাপাশি দু’টি লিজ় দেওয়া জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর নিজস্ব ১৩ ডেসিমেল জমিও ঢুকে রয়েছে ‘প্রতীচী’র সীমানার ভিতরে। অর্থাৎ, ‘প্রতীচী’র জমির পরিমাণ এখন ১৩৮ ডেসিমেল, ১২৫ ডেসিমেল নয়। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আরও অভিযোগ, রজতকান্ত রায় যখন উপাচার্য ছিলেন, তখন অমর্ত্যবাবুকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু নোবেলজয়ী তা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেননি। স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
এ প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবারই প্রকাশ্যে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গেরুয়া সিবিরকে বিঁধে তিনি জানিয়েছিলেন, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য অমর্ত্যবাবুর মতো মনীষীকে আক্রমণ করা হচ্ছে। পরে শুক্রবার অমর্ত্যবাবুকে চিঠি লিখে পাশে থাকার আশ্বাস দেন মমতা। ‘বন্ধু এবং বোন’ হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করার অনুরোধও ওই চিঠিতে জানিয়েছিলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির বিষয়ে অমর্ত্যবাবু বলেন, 'মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সহানুভূতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন, তাতে দুঃখ করার কিছু নেই। কিন্তু হঠাৎ বিশ্বভারতী থেকে এরকমভাবে মিথ্যে কথা বলা শুরু করল কেন? সেটার বোধহয় রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের ওপরে তার প্রভাব বাড়াতে চাইছে। প্রভাব বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের হাতিয়ার হচ্ছেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেটা তো রাজনৈতিক ব্যাপার, কেন্দ্রীয় সরকার রাজনৈতিক কারণে...তাতে যদি বিদ্যুৎ যোগ দিয়ে খুব আনন্দ পান তাতে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু কাউকে কারও বিরুদ্ধে যে চার্জগুলো দেওয়া হচ্ছে তাঁকে জানিয়ে... এখনও পর্যন্ত একটা চিঠিও পাইনি। কেবল খবরের কাগজে এ বিষয়ে বক্তৃতা করা। এর মধ্যেই আমি বাংলা কথা বলছি, একটা ছোটলোকামি আছে, সেটা ঢাকা যাচ্ছে না।বাংলায় প্রভাব আর সেই কারণটা কী হতে পারে, সে নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী দু'এক কথা বলেছেন। আমায় চিঠিতেও বলেছেন। বক্তব্য হিসেবে সাধারণ আলোচনায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।'
ভারতে বহু শতক ধরে চর্চিত বহুত্ববাদী ভাবধারাকে ধ্বংস করতে চায় কেন্দ্রের শাসক শক্তি। এ জন্য অতীতে বহু বারই তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা। সেই কারণেই অমর্ত্য সেনের বাড়ি ঘিরে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন তথ্যবিজ্ঞ মহলের একাংশ।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন