Advertisment

'বাংলা মাধ্যমেও নিজেকে প্রমাণ করা যায়', মার্কিন মুলুকে ডাক পেয়ে 'বিরাট বার্তা' বাংলার হবু বিজ্ঞানীর

বাবা অনিন্দ্যকিশোর দাস সব সময়ে ছেলের সঙ্গে তার ‘সৃষ্টিতে’ বন্ধুর মতই পাশে থেকেছেন।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Hooghly collegiate school,India International science Festival,Avigyan Kishor Das

হাত না দিয়েই পড়বে স্যানিটাইজার, করোনা কালে এক আবিষ্কার তাক লাগিয়েছিল সকলকে। মেলে স্বীকৃতিও। ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে’ সেরার সেরা মুকুট আদায় করে নেয় হগলি কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র অভিজ্ঞান কিশোর দাস। ফের এবারেও সেরার মুকুট মাথায় সাফল্যের সিঁড়িতে আরও এককদম, ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালে’ চতুর্থবারেও সফল চুঁচুড়ার এই হবু বিজ্ঞানী।

Advertisment

টানা চারবার ‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান উৎসবে’বিজ্ঞান সংক্রান্ত কাজে নজির গড়ে ছিনিয়ে নেন সাফল্য। শুধু তাই নয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অভিজ্ঞান ডাক পেয়েছে মার্কিন মুলুকে। ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত পরিবার থেকে স্কুলের শিক্ষকরাও। শান্ত স্বভাবের অভিজ্ঞানের অভিনব এই নজিরে রীতিমত গর্বিত বাবা অনিন্দ্য কিশোর দাস

আয়ুর্বেদ চিকিৎসক পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তের জীবনী নিয়ে তৈরি ‘আধুনিক ভারতের সুশ্রুত’-১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেই জিতে নেন সেরার স্বীকৃতি। ইতিমধ্যেই অভিজ্ঞান ডাক পেয়েছে ‘ফিলাডেলফিয়া যুব চলচ্চিত্র উৎসবে’- ‘ফিল্ম মেকার্স প্যানেলেও’। উনিশ শতকে যিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করে দেখে শল্যচিকিৎসার পথ প্রদর্শন করেছিলেন। সেই পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তের জীবনী নিয়েই তৈরি এক বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্যচিত্র নির্মাণ করেই এসেছে সাফল্য।

হাত না দিয়েই পড়বে স্যানিটাইজার, জাতীয় বিজ্ঞান ফেস্টিভালে দ্বিতীয়বার সেরা হুগলির অষ্টম শ্রেণির অভিজ্ঞান - Hooghly collegiate school's Avigyan Kishor Das wins India international science festival, Bangla News
‘সৃষ্টি এবং সিনেমা’ দুইয়ের মেলবন্ধনে বিরাট স্বীকৃতি, মার্কিন মুলুকে ডাক বাংলার হবু বিজ্ঞানীর

সেই প্রশ্নে অভিজ্ঞান বলেন, “আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তের নামটুকু আজও জানেন না। আমার মনে হয় বহুক্ষেত্রেই উনি উপেক্ষিত রয়ে গেছেন। জেলার বাসিন্দা এবং বিজ্ঞান চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করার পাশাপাশি আমি পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তের নামাঙ্কিত একটি হাসপাতাল তৈরির আবেদনও জানাতে চাই”।

বাবা অনিন্দ্যকিশোর দাস সব সময়ে ছেলের সঙ্গে তার ‘সৃষ্টিতে’ বন্ধুর মতই পাশে থেকেছেন। সাফল্যের প্রসঙ্গে অভিজ্ঞান বলে, “সৃষ্টি এবং সিনেমা এই দুই বিষয় নিয়েই আমি কাজ করি। ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যাল ২০১৯ সালে কলকাতায় আমি সেখানে দূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি যন্ত্র প্রদর্শন করি যেটা প্রথম পুরষ্কার পায়। এরপর ২০২০ সালে করোনা অতিমারির সময়ে টাচ ফ্রি অটোমেটিক হ্যাণ্ড স্যানেটাইজার সিস্টেম তৈরি করি। সেখানেও আমি প্রথম স্থান অধিকার করি।

তার কথায়, "লকডাউনের সময় থেকে বিভিন্ন অনলাইন প্রতিযোগিতায় আমি আমার ভিডিও পাঠাতে শুরু করি, তখন থেকেই সিনেমার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ জন্মায়। ধীরে ধীরে আমি সিনে এডিটিংয়ের একাধিক ধাপ রপ্ত করি। ২০২১ সালে আমার তৈরি একটি একটি তথ্যচিত্র বিশেষ পুরষ্কার পায়। এরপর ২০২২ সালে পণ্ডিত মধুসূদন গুপ্তের জীবনী নিয়ে তৈরি ‘আধুনিক ভারতের সুশ্রুত’-১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্রটি দ্বিতীয় পুরষ্কার পায়”। সত্যজিৎ রায়ের তৈরি সিনেমা বিশেষভাবে আকর্ষণ করে অভিজ্ঞানকে।

বাবা অনিন্দ্যকিশোর দাস ছেলের এই সাফল্য নিয়ে বলেন, “এককথায় অনবদ্য, ছোট থেকে ওর মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ লক্ষ্য করি, পরে ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পায়। এরপর লকডাউন কালে ওর সিনেমার প্রতি বিশেষ ঝোঁক জন্মায়। বাবা হিসাবে আমি রীতিমত চিন্তিত ওকে বিজ্ঞান নিয়ে এগোতে উৎসাহ দেব, নাকি সিনেমা নিয়ে”।

বাংলা মাধ্যমে আজকাল বাবা-মায়েরা সেভাবে সন্তানদের পড়ানোর বিষয়ে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন না। এই বিষয়ে অভিজ্ঞান বলে, “এই ধারণাটা একেবারেই ভুল, মাতৃভাষাতে বিজ্ঞানচর্চা অথবা শিক্ষাকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। আমি বাংলা মাধ্যমের ছাত্র হয়েও আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছি। কাজেই মাধ্যমটা এখানে বড় বিষয় নয়, মেধা সেই সঙ্গে শেখার আগ্রহ সর্বপরি পরিবারের সহযোগিতা যে কোন ছাত্র-ছাত্রীর কাছে সবার আগে প্রয়োজন”।

এরই পাশাপাশি নিজের সাফল্যে বাবা-মা, স্কুলের অবদানের কথাও তুলে ধরে এই হবু বিজ্ঞানী। আপাতত মাধ্যমিকই সামনে লক্ষ্য তারপর আবার নতুন সৃষ্টিতে মেতে উঠবে এই হবু বিজ্ঞানী। ভবিষ্যৎ-এর প্রশ্নে অভিজ্ঞান বলে, বড় হয়ে বিজ্ঞানী হিসাবেই নিজেকে দেখতে চায় সে। আইআইটি স্নাতক হয়ে ওঠার অদম্য জেদ যেন প্রতিনিয়তই তাড়া করে বেড়াচ্ছে অভিজ্ঞানকে। সৃষ্টি আর বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে অভিজ্ঞানের এই টানা সাফল্য উৎসাহিত করেছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে। পাশে থেকে অভিজ্ঞানকে আগামীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে সহপাঠীরাও। 

Howrah-Hoogly hooghly news
Advertisment