হরিদেবপুর কাণ্ডে তদন্ত এগোতেই সামনে আসছে ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনী। নিহতের বাবার দাবিতেও একই ইঙ্গিত। অয়নের বাবার কথায়, 'ছেলের বান্ধবীর বাবা জেনে যায় যে আমার ছেলের সঙ্গে ওঁর স্ত্রীরও সম্পর্ক রয়েছে। মেয়ের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সে ভেবেছিল যে আমার ছেলে মেরে দিলে তাঁর সংসারে সুখ ফিরবে। এই কারণেই খুন করা হয়েছে অয়নকে। মা-ও আমার ছেলেকে ভালোবাসত, মেয়েও আমার ছেলেকে ভালোবাসত। আমার ছেলে কী করবে?' পুলিশ জানতে পেরেছে দশমীর দিন রাতে বান্ধবীর হরিদেবপুরের নতুনপল্লির বাড়িতে নাকি মত্ত অবস্থায় গিয়েছিলেন অয়ন মণ্ডল। সেখানে মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে তীব্র ঝামেলা হয় তাঁর। এমনকী হাতাহাতি হয় বলেও অভিযোগ। এরপরই নাকি বোনকে বাঁচাতে অয়নের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে বান্ধবীর ভাই। তাতেই প্রাণ হারান অয়ন।
দশমীর রাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান অয়ন। এরপর দ্বাদশীর দিন অয়নের দেহ উদ্ধার হয় মগরাহাট থেকে। ভোঁতা কিছু দিয়ে অয়নের মাথায় আঘাত করা হয়েছিল বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টপ্রকাশ। শরীরে মিলেছে ক্ষতের চিহ্ন।
কীভাবে অয়নকে খুন করা হল? কেনই বা এই খুন? দেহ কীভাবে লোপাট করা হয়েছিল? তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এখনও অবধি এই ঘটনায় মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে অয়নের সেই বান্ধবী, বান্ধবীর মা রুমা জানা ও ভাই, বাবা দীপক জানা, ভাইয়ের এক বন্ধু ও যে গাড়ি করে দেহ লোপাটের চেষ্টা হয়েছিল সেই গাড়ির চালক।
এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, অ্যাপ নির্ভর বাইকের চালক ছিলেন অয়ন মণ্ডল। দশমীর রাতে বান্ধবীর বাড়িতে যাচ্ছেন বলে বের হন। বন্ধু রাজু তাঁকে হরিদেবপুর এলাকাতেই অয়নের বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে দেয়৷ সেখান থেকেই রাত তিনটে নাগাদ শেষ বার ওই বন্ধুর সঙ্গে মোবাইলে অয়নের কথা হয়েছিল। অয়নের বন্ধু পুলিশকে এ কথা জানিয়েছেন। রাজুর দাবি, সে অয়নকে বান্ধবীর বাড়ি থেকে বেরতে বললেও কথা শোনেনি সে।
এর দু'দিন পর দ্বাদশীর দিন শুক্রবার মগরাহাটে অয়নের দেহ উদ্ধার হয়। সেই খবর শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসীরা। শুরু হয় বিক্ষোভ। অভিযোগের আঙুল ওঠে অয়নের সেই বান্ধবী ও তার পরিবারের দিকেই। অয়নের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সেই বান্ধবী, তার মা ও ভাইকে আগে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর বান্ধবীর বাবা, ভাইয়ের এক বন্ধু ও গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, অয়নকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করেন বান্ধবীর ভাই। মত্ত অয়নের হাত থেকে বোন বাঁচাতেই এই কাজ করে সে। ইট জাতীয় কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। এরপর অবস্থা ঘোরাল দেখে অয়নের বান্ধবীর বাবা দেহ লোপাটের সিদ্ধান্ত নেন।