Ayodhya kar sevaks kolkata Kothari brothers: উত্তর কলকাতার রাম বাগান। সেখানেই একটি বাড়িতে থাকতেন অযোধ্যায় রামমন্দির আন্দোলনে নিহত কলকাতার দুই করসেবক ভাই রাম ও শরদ কোঠারি। এখন সেই বাড়িতেই বাস তাঁদের বোন পূর্ণিমার। বাড়ির ঘরের একটি দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে দুই ভাইয়ের ছবি। যার নীচে বসে হাপুস কাঁদছেন মধ্যবয়সী পূর্ণিমা (৫২)। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের কথা উঠতেই বলে উঠলেন, 'জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।'
১৯৯২ থেকে ২০২৪, অতিক্রান্ত তিন দশকের বেশি। বহু লড়াই সংগ্রামের পর অবশেষে আগামী ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। সেই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত নিহত দুই করসেবক কোঠারি ভাইদের বোন পূর্ণিমা। এদিনের স্বপ্নেই বিভোর ছিলেন করসেবক দুই কোঠারি ভাই। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল। তার আগের মাসে বাড়ি ছেড়েছিলেন রাম ও শরদ কোঠারি। ওই সময় রাম কাঠোরির বয়স মাত্র ২২ ও শরদের ২০ বছর। পূর্ণিমা জানালেন, আন্দোলন করতে করতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় ওই দুই যুবকের শরীর।
সেদিনের কথা মনে করে আজও কাঁদেন বোন পূর্ণিমা। পাশাপাশি এখন চোখ দিয়ে জল গড়ায় মন্দির হওয়ার আনন্দেও। পূর্ণিমা কোঠারির কথায়, 'মনে হচ্ছে যেন আমি আমার ভাইদের ফিরে পেয়েছি। অযোধ্যায় রামমন্দির দেখতে পাব এটা ভেবেই আমি আমার খুশি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমার ভাই এবং আরও কয়েকজনের আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। তাঁরা বেঁচে থাকলে গর্বিত হতেন। এটি আমাদের পরিবারের জন্য পরিপূর্ণতার একটি মুহূর্ত।'
আরও পড়ুন- Ayodhya: ভূ-ভারতে নেই, তাক লাগানো বিলাসবহুল হোটেল পেতে চলেছে রামজন্মভূমি অযোধ্যা
এসব বলতে বলতেই ফের স্মৃতিমেদুর বছর বাহান্নর মহিলা। বলছিলেন, 'সেদিনের কথা এখনো মনে আছে। সেটা ছিল ভাই দুজের পরের দিন। আমার ভাইয়েরা আমার ঠাকুমাকে বলেছিল যাওয়ার আগে তাদের প্রিয় খাবার তৈরি করতে। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে, তাঁরা আমাদের দিকে একবার শেষ দেখার জন্য ফিরে এলো। তাঁরা আর ফিরে আসবে না। তাঁরা একটি নির্দিষ্ট কারণে প্রাণ গিয়েছেন। ২২ জানুয়ারি, তাঁদের আত্মত্যাগের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব।'
গত ৩১ বছর ধরে, পূর্ণিমা তাঁর প্রয়াত ভাইদের স্মরণে নিয়মিত অযোধ্যায় যাচ্ছেন এবং মামলার পক্ষে রায়ের জন্য প্রার্থনা করেছেন। তিনি রামমন্দির নির্মাণের প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ দেখেছেন — জমি নির্ধারণ থেকে মন্দির নির্মাণ পর্যন্ত। মৃত ভাইদের ছবির নীচে বসে বলছিলেন কোঠারি ভাইদের বোন।
২০১৬ সালে প্রয়াত হন পূর্ণিমার মা সুমিত্রা দেবী কোঠারি। মায়ের ছবিও রয়েছে দেওয়ালে। যার দিকে তাকিয়ে পূর্ণিমা বলেছিলেন, 'আমার মায়ের মোদীজির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে তিনি একদিন কোটি কোটি হিন্দুদের স্বপ্ন পূরণ করবেন। তিনি এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেননি। কিন্তু তাঁর বিশ্বাস সঠিক ছিল। আমি যদি সুযোগ পাই, আমি মোদীজির পা ছুঁয়ে ধন্যবাদ জানাব।'
পূর্ণিমা জানান যে, ২০১৯ সালে ঐতিহাসিক নির্দেশের সময় তিনি অযোধ্যায় ছিলেন এবং পরে রাম মন্দির ভূমি পুজনও দেখেছেন।
পূর্ণিমা মনে করেন যে বিজেপির প্রবীণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলি মনোহর যোশী, যাঁরা রাম মন্দির আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন, তাঁদের অবশ্যই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের চেষ্টা করা উচিত। বলেন, 'এঁরা দু'জনে তখন আমাদের আইডল ছিল এবং এ ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান অপরিসীম। তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল এবং তাঁদের অবশ্যই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা উচিত।'