লড়াই করে শুধু দারিদ্র্যই জয় করেননি বাউরিয়ার বাবলু। ছোটো থেকেই তাঁর মানসিকতা ছিল বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আর সঙ্গে ছিল, খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা। বাড়ি থেকে ৩০ গজ দূরেই পাড়ার ক্লাব 'অমর সংঘ'। সেই ক্লাবেই তাঁর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সন্দীপ পালের গলায় 'বীর বন্ধুর জয়গাঁথা' শোনা গেল। সকাল থেকেই ছলছল চোখে 'অমর সংঘ ক্লাবের সদস্যদের মুখে মুখে ফিরেছে পাড়ার ছেলে বাবলুর নানা কথা। এমনিতেই এলাকার ডাকাবুকো ছেলে, তারউপর ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতের পর থেকেই হাওড়ার চেঙ্গাইল স্টেশনে নেমে জিজ্ঞাসা করলেই শহিদ জওয়ান বাবলু সাঁতরার বাড়ি দেখিয়ে দেবেন সবজি বিক্রেতা থেকে রিক্সা চালক, যে কেউ।
বাবলুর সঙ্গে অমর সংঘের একেবারে আত্মিক যোগ। সিআরপিএফে চাকরি পাওয়ার পরও সেই সম্পর্কের সুতো ছেঁড়েনি। বাড়িতে এলেই সে ক্লাবে আসতেন বাবলু। এক সময় এই ক্লাবের হয়ে বহু ভলিবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। আর এই প্রতিটি ম্যাচেই তাঁর সঙ্গে থাকতেন সন্দীপবাবু। বাবলুর থেকে বছর পাঁচেকের বড় হলেও তাঁরা ছিলেন হরিহর আত্মা। সন্দীপ বলেন, এমন কোনও দিন ছিল না যেদিন আমি ওর সঙ্গে মাঠে যাইনি। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তো প্রায় বাধ্যতামূলক ছিল আমার উপস্থিতি। সন্দীপবাবুর মনে পড়ে যাচ্ছে, উলুবেড়িয়া স্টেডিয়ামে সেই জেলা ভলিবল চ্যাম্পিয়ানশিপ। কারণ, ভলিবলে ডিস্ট্রিক্ট চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন বাবলু সাঁতরা।
আরও পড়ুন- কড়া জবাব দিতে সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি: মোদী
তবে শুধুই খেলা বা আড্ডার সঙ্গী নয়, বাবলু-সন্দীপ সর্বক্ষেত্রেই বন্ধু। সন্দীপ জানাচ্ছেন, "আমরা একসঙ্গেই গিয়েছিলাম সিআরপিএফের ইন্টারভিউতে। আমার পায়ে চোট থাকায় সুযোগ পাইনি। কিন্তু, ও চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। ও যে দিন চাকরিতে যোগ দিতে যাচ্ছে, সেদিন হাওড়া স্টেশনে ট্রেনে তুলে দিতে গিয়েছিলাম আমি। খুব ভাল মনের ছেলে ছিল। এলাকার কোনও মানুষ বিপদে পড়লে সব ফেলে দিয়ে আমাদের সঙ্গে ছুটে যেত। মানুষের পাশে থাকতো। অমায়িক ব্যবহার তাঁর"। ক্লাবে তখন সন্দীপের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অজয় দাস, দেবাশিস পালিত, সত্যজিৎ রায়রা। তাঁরা এক সুরে বলে উঠলেন, "অসাধারণ ভলিবল খেলতো বাবলুদা। আমরা জুনিয়র হলেও তাঁর খেলা দেখেছি। বাবলুদার খেলার টানেই মাঠে যেতাম। আজ ক্লাবের কারও মন ভাল নেই"।
জঙ্গি হামলা নিয়ে কখনও কিছু বলতেন বাবলু? এই প্রসঙ্গে সন্দীপ বলেন, চাকরির প্রথম দিকে ও একবার শ্রীনগরে পোস্টিং পেয়েছিল। ২০০১-এর ১ অক্টোবর শ্রীনগর বিধানসভায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল। তখন ওই অভিযানে বাবলু ছিল। ও আমাকে সেই রোমহর্ষক সংঘর্ষের ঘটনা শুনিয়েছিল। সে সময় বাবলুর অনুভূতি ছিল, "সিনেমায় যেমন দেখতাম, আমিও বাস্তবে সেভাবেই হামলা সামলেছি"।
আরও পড়ুন- কী করছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, প্রশ্ন মমতার
জানা যাচ্ছে, ৬ মাস পর অবসর নেওয়ার কথা থাকলেও বাবলু এক্সটেনশনের কথা ভাবছিলেন। কিন্তু, সেই এক্সটেনশন আর প্রয়োজনই হল না। চককাশীর অমর সংঘের দেওয়ালে এই মুহূর্তে ঝুলছে ব্যানার, তাতে লেখা "বীর শহিদ বাবলু সাঁতরা অমর রহে"। সেই অমর সংঘের মাঠেই অমর শহিদের শ্রদ্ধায় গান স্যালুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।