১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। প্রেমদিবসেই ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়েছিলেন তিনি। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় তাঁর সব স্বপ্ন নিমেষে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি চান, তাঁর স্বামীর সঙ্গে যা হয়েছে, তা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে। পুলওয়ামার ভয়ঙ্কর জঙ্গিহানার ৪ মাসের মাথায় আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছেন নিহত জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতা সাঁতরা। দেশের প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের ভিভিআইপি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শাশুড়ি ও মেয়েকে নিয়ে বুধবারই হাওড়া স্টেশন থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে চড়ে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বাউড়িয়ার ছাপোষা মিতা। আর সেখানেই বিপত্তি। এ রাজ্যে 'রাজনৈতিক হিংসায় শহিদ বিজেপি কর্মী'দের পরিবারবর্গের সঙ্গে একই ভাবে পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানের পরিবারকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে 'আপত্তি' জানান মিতা সাঁতরা। তবে দিল্লি পৌঁছনোর পর মিতার বক্তব্য শোনা হয় এবং তাঁদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। এরপরই ক্ষোভ প্রশমিত হয় মিতার। এই মুহূর্তে তিনি সরকারি আতিথেয়তায় দিল্লিতে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে দিল্লি পাড়ি দেওয়ার সময় 'আলাদা ব্যবস্থা' না করা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করলেন পুলওয়ামায় হামলায় নিহত জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতা সাঁতরা। 'বাংলায় রাজনৈতিক হিংসায় নিহত বিজেপি কর্মী'দের পরিজনদের সঙ্গেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করার কথা জানতে পেরে ‘আপত্তি’ জানান মিতাদেবী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমায় আলাদাভাবে আনা হয়নি। এ নিয়ে অভিযোগ জানাই। পুলওয়ামা হামলার শহিদের স্ত্রী আমি, আমায় আলাদা করে আনা উচিত ছিল। নিহত বিজেপি কর্মীদের পরিজনদের সঙ্গেই আমায় আনা হয়েছে। কারণ, আমার স্বামী কোনও দলের নন, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। একসঙ্গেই রাজধানী এক্সপ্রেসে এসেছি। সেটা মেনে নিয়েছি। তবে দিল্লিতে ওঁদের সঙ্গেই থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল বোধহয়। তখন আমি আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলি। ওঁরা আমাদের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেছেন’’।
আরও পড়ুন: সার্জিকাল স্ট্রাইকে নিরুত্তাপ নিহত জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী, প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার
প্রসঙ্গত, স্বামীর মৃত্যুর পর এই মিতা সাঁতরাই তো জওয়ানদের নিরাপত্তায় ঢিলেমির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন, তাহলে তিনি কেন এই অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন? প্রশ্ন শোনামাত্রই মিতার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কোনও দলের হয় না। প্রধানমন্ত্রী দেশের। কেউ হয়তো ওঁর দলকে ভোট দিয়েছি, কেউ হয়তো দিইনি। আমি শান্তির কথাই বলে এসেছি বরাবর। সেটা যদি ওঁর বিরুদ্ধে কথা বলা হয়, তাহলে তাই। আজও আমি আমার মন্তব্যে অনড়। সৌজন্য রক্ষার জন্যই এসেছি’’।
দিল্লি থেকে ফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নিহত জওয়ান বাবলু সাঁতরার স্ত্রী মিতা সাঁতরা আরও বলেন, ‘‘আমার একটাই আর্জি রয়েছে, সিআরপিএফ জওয়ানদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক। নতুন সরকারের কাছে আমি এই আর্জিই রাখব’’। উল্লেখ্য, পুলওয়ামা হামলার পর মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছিলেন মিতা। এমনকি নাম না করে মোদীর বিরুদ্ধেও ক্ষোভের সুর শোনা গিয়েছিল মিতার গলায়।
পুলওয়ামা হামলা প্রসঙ্গে এর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে নিহত জওয়ানের স্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘ভারতবর্ষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যে বাহিনী দিনরাত কাজ করছে, তাঁদের সুরক্ষার দিকে যেন নজর দেয় সরকার। সংবাদমাধ্যমে জেনেছি, ওঁর (মোদী) কাছে হামলার আগাম খবর ছিল, তাহলে কেন সতর্ক করা হল না? পুলওয়ামা হামলার পর জম্মু-শ্রীনগর বিমান পরিষেবায় ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, আগে কেন হল না? কেন গাড়িগুলো ঝরঝরে ছিল? কেন জ্যামার লাগানো ছিল না? ভারতের সব জায়গাতেই কি এই বাহিনীর জন্য সুরক্ষা দেওয়া হয়? সরকারের কাছে আমর এই প্রশ্নগুলোই রয়েছে’’।