দুর্গাপুরের কয়লামাফিয়া রাজু ঝা খুনে এবার আসরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা একদা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। রাজুর হোটেলে বিজেপির বড় বড় নেতাদের যাতায়াত ছিল বলে অভিযোগ বাবুলের। শুধু তাই নয়, রাজু কয়লামাফিয়া জেনেও দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়রা তাঁকে দলে এনেছিলেন বলেও টুইটে তোপ দেগেছেন বাবুল।
শনিবার ভর সন্ধেয় শক্তিগড়ে জাতীয় সড়কের ধারে দুষ্কৃতীদের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় কয়লামাফিয়া রাজু ঝাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজু বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রী তথা একদা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র দাবি, রাজু ঝায়ের পরিচয় জেনেও তাঁকে বিজেপিতে ঢুকিয়েছিলেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষেরা।
টইটে বাবুল লিখেছেন, 'মধ্যপ্রদেশের প্রভাবশালী মন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র ও প্রয়াত রাজু ঝা (আলুওয়ালিয়া-দাদার কিছু করার ছিলনা) কৈলাশ-শিব-দিলীপদাদা, রাজু ঝা, জয়দেব খাঁ ইত্যাদি একগাদা কয়লা মাফিয়াকে জেনেশুনে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছিলেন ধর্ষণে অভিযুক্ত পলাতক ভাইপোর বিধায়ক কাকা 'দুষ্টু-লক্ষণ'এর মাধ্যমে।''
আরও পড়ুন- শিবপুরে হিংসা: এবার রাজ্যের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি মোদীর মন্ত্রীর!
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময়ে রাজু ঝায়ের হোটেলেও বিজেপির তাবড় নেতাদের যাতায়াত ছিল বলে দাবি করেছেন বাবুল। এপ্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, 'রাজুরই হোটেল বিজেপির বড় বড় নেতারা ব্যবহার করতেন। আমাকে বদনাম করার জন্য দুর্গাপুরের একটা রোড শো তে আমার সব ব্যানারের নিচে 'সৌজন্য রাজু ঝা' লেখানো হয়েছিল। প্রশ্ন এটাই যে এই বিজেপি নেতাদের ওপর CBI-ED raid কেন হবেনা !'
এমনকী রাজু ঝা খুনের নেপথ্য কারণ উদঘাটনের চেষ্টায় এবার বাম-কংগ্রেসকেও সোচ্চার হতে আবেদন বাবুলের। অপর একটি টুইটে তিনি লিখেছেন, 'আজ অনেক ইঁট পাটকেল কটুকথা ধেয়ে আসবে কিন্তু কারও validation চাই না। কিন্তু মন থেকে চাইব কংগ্রেস-সিপিআইএমের অধীর চৌধুরী, মহম্মদ সেলিমের মতো নেতারা এটা নিয়ে সরব হন। আপনারা যাদের বিরোধিতা করেন তাদের বিরুদ্ধে তো এজেন্সি Active। কিন্তু বিজেপির এই দাগী 'নেতাগুলো' বেঁচে যাচ্ছে কি মন্ত্রে?'
আরও পড়ুন- শিক্ষকের বেতন ও বিধানসভার ভাতা দুইই তোলেন তৃণমূল বিধায়ক? অভিযোগে চর্চা তুঙ্গে
এদিকে, তাঁর হাত ধরে রাজুর বিজেপি যোগের বাবুল-দাবি প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'সেই সময় অনেকেই এসেছিলেন। আমরাও নিয়েছি। গণতন্ত্রে সবাইকে নিতে হবে। কে দোষী আর কে নয়, সেটা কোর্ট ঠিক করবে। রাজু ঝা একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি এসেছিলেন, আমরাও নিয়েছি। তাঁর হোটেলে ভাড়া দিয়ে মিটিংও করেছি। বিজেপিতে যখন বাবুল মন্ত্রী ছিলেন তাঁর পিএ-কেও তো ইডি ডেকেছিল। এরপরেও তিনি একথা বললেন কী করে?'
অন্যদিকে, বাবুল এদিন নিশানা করেছেন বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইকেও। দিলীপ ঘোষের সঙ্গে রাজুর যোগসূত্র ছিলেন দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ, বাবুলের এই দাবি প্রসঙ্গে লক্ষ্মণ ঘোড়ুই এদিন বলেন, 'দুর্গাপুরের সভায় অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে দলে যোগ দিয়েছিলেন। বাবুলকে আমিই সেন্সর করতে বলেছিলাম। এখন তোলা-কাটমানি তুলতে অন্য দলে গিয়েছেন। আজ বাবুল সুপ্রিয়কে কেউ চেনে না। খবরে আসতেই নাটক করছেন।'
আরও পড়ুন- খুনের পর গাড়ি ফেলে ট্রেনে চম্পট আততায়ীদের? রাজু খুনে হাড়-হিম তথ্য প্রকাশ্যে!
অন্যদিকে, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরা অর্জুন সিং এদিন বলেন, 'দিলীপবাবু ছিলেন আমিও ছিলাম। ও বিজেপিতে এসেও সরাসরি বিজেপি করেনি। তারপরে জেলে ছিল। জেল থেকে বেরনোর পর দল করেনি। রাজু ঝা আমার কাছের লোক ছিল। ছোট ভাইয়ের মতো ছিল। একটা সময়ে কি করেছে জানি না। পরে ভালো ব্যবসায়ী ছিল। অনেক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে ওর ভালো সম্পর্ক ছিল। ও আমাকে সম্মান করত।'