Swapan Babun Banerjee's Reaction After Mamata Banerjee's Tough Decision: প্রার্থী হতে না পেরে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন স্বপণ ওরফে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করেছিলেন। তাঁর বিজেপি যোগ জল্পনার মাঝেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন নির্দল হয়ে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতার। বাবুন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট ভাই। ফলে টিকিট ঘিরে মমতার পরিবারের মধ্যেই 'ক্ষোভ' বঙ্গ রাজনীতির প্রবল চর্চার বিষয় হয়। এরপরই শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে কড়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ বলেন, 'আমার পরিবার বলে কিছু নেই। মা মাটি মানুষই আমার পরিবার। আমাদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কে ৩২ জন সদস্য। কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ। আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।' এরপরই বাবুনের সব হুঙ্কার উধাও। নিজের অবস্থান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি সরে আসেন তিনি।
দিল্লিতে বসে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় সোশাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ''আমি বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই। আমি বিজেপিতে যাচ্ছি এটা ফেক নিউজ। আমি বিশ্বাস করি পশ্চিমবঙ্গে যতদিন দিদি থাকবে আমি ততদিন তাঁর সঙ্গে থাকব।আমি জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই।'
পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমে ফোনে বাবুল বলেন, 'আমি দিদির বাইরে কাউকে চিনি না। উনি মনে করেছেন আমি ভুল করেছি তাই দিদি হিসাবে ঠিক বলেছেন। উনি অভিভাবর, তাই শাসন করেছেন। আমি তাতে কিছু মনে করি না। আমি আর নির্দল হয়ে দাঁড়বো না। আমি ওনার সঙ্গে দেখা করে সব মিটিয়ে নেব।'
আগে কি বলেছিলেন বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়?
বুধবার সকালে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'যে মানুষটা হাওড়ায় প্রার্থী হয়েছেন, সেই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় মোহনবাগান ক্লাবের এজিএমের সময় আমাকে গলাধাক্কা দিয়েছিলেন। আমাকে অপমান করেছিলেন। তাঁকে নিয়ে আমার প্রচুর অ্যালার্জি আছে। হাওড়ার মানুষ ওঁকে মেনে নিচ্ছেন কি না জানি না। কিন্তু আমি বলতে পারি, এই প্রার্থী ঠিক হয়নি। ওঁর যোগ্যতা নিয়ে আমার সংশয় আছে। আমি মনে করি, যে ক্লাস ফাইভ পাশ করতে পারে না। তাকে গ্র্যাজুয়েশন করানো হচ্ছে। এমপি ল্যাডের টাকা এলাকার মানুষের জন্য ঠিকমত খরচ করতে পারেননি, কোনও কাজ হয়নি। প্রসূনের থেকে অনেক ভাল প্রার্থী ছিল। ওর মতো বাজে লোককে না দেওয়াই উচিত ছিল।'
বাবুন কি প্রসূণকে নিয়ে তাঁর ক্ষোভের কথা দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন? জবাবে স্বপণ বলেন, ‘কিছু জিনিস জানিয়েও লাভ হয়নি। প্রথম থেকে বলা হয়েছে ওঁকে বাদ দিয়ে অন্যকে প্রার্থী করলে হাওড়ার মানুষ অন্যভাবে গ্রহণ করবেন। অরূপ রায়, রাজীব ব্যানার্জী, রাজা চ্যাটার্জীদের দাঁড় করানো হলে ভাল ফলফল হত।’
তবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন না বলেই দাবি করেছিলেন। বলেছিলেন যে, 'দিদি যতদিন বেঁচে আছে বিজেপিতে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যাইনি কখনও, যাবও না। ১৯৮১ সাল থেকে দলের সঙ্গে জড়িয়ে। দিদি যতদিন আছে আমি কোথাও যাব না।’ যদিও তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, ফুটবল প্রশাসক কল্যাণ চৌবে, পিটি উষাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনীতির যোগ নয়, ক্রীড়া প্রশাসক হওয়ার কারণেই এই যোগাযোগ বলে জানিয়েছেন তিনি।
এরপরই স্বপণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আমি হাওড়ার ভোটার হয়েছি। নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়াব। দিদিমনির সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। দিদি আমার কাছে ভগবান। দিদির কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। দিদির কাছে আশীর্বাদ চাইব। দিদি হয়তো আমাকে না করবে। কিন্তু আমি দিদিকে বোঝানোর চেষ্টা করব কেন দাঁড়াচ্ছি।’
দুপুরে কী ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?
এদিন শিলিগুড়িতে মমতা সাফ বলেন, ‘আমি যে দিন থেকে দল করি, কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে কাজ করি। আমার পরিবার বলে কিছু নেই। মা মাটি মানুষই আমার পরিবার। আমাদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কে ৩২ জন সদস্য। কেউ এ রকম নয়। এতে সবাই ক্ষুব্ধ। আমি সরাসরি বলছি, যারা বেশি বড় হয়ে যায়, তাদের লোভও বেড়ে যায়। ওকে পরিবারের সদস্য বলেই আমি মনে করি না। সব সম্পর্ক ছেদ।’
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘ওরা (বিজেপি) পরিবারতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু আমি পরিবারতন্ত্র করি না। যে যেখানে ইচ্ছে ভোটে লড়তে পারে। আমার কিছু যায় আসে না। যাঁর নাম করছেন তাঁর অনেক কাজই আমার পছন্দ নয়, তবে মেনে নিতে হচ্ছিল এতদিন। ও ছোটবেলা ভুলে গিয়েছে। যখন বাবা মারা গিয়েছিলেন তখন ওঁর বয়স মাত্র আড়াই বছর ছিল, দুধ বিক্রি করে মানুষ করেছি। ভোট আসলেই এসব করে। অনেক অশান্তি সহ্য করেছি, আর নয়।’ এসবের নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।