দিঘা, পুরী তো অনেক গেলেন। কলকাতার এত কাছে কোলহলহীন নির্জন এই সমুদ্রতটের খোঁজ কি জানেন? অফিস থেকে মাত্র দিন তিনেক ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই কেল্লা ফতে! অসাধারণ এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে। কাছেপিঠে বেড়ানোর জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গার খোঁজ পাওয়া বেশ দুষ্কর। ফি দিনের ব্যস্ত জীবন থেকে ক্ষণিকের আরাম নিন। ঘুরে আসুন অত্যন্ত সুন্দর এই ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন থেকে।
বেড়ানোর জন্য অনেকেরই পছন্দ সমুদ্র সৈকত। তাঁদের জন্যই কলকাতার খুব কাছের এই সমুদ্রতটের হদিশ। নামমাত্র খরচে ঘুরে আসুন কলকাতা থেকে তিন-চার ঘণ্টার পথ বাগদা সি বিচ থেকে। অল্প সময়ের জন্য বন্ধু, পরিবার নিয়ে ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা হতে পারে ওড়িশার বালাসোরের এই নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত।
বাগদা সমুদ্রতটটি দিঘা, পুরীর মতো বিস্তৃত না হলেও লোকজন কম থাকায় একান্তে বেড়ানোর মজা নিতে পারবেন। ভোরে সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখার অনন্য সুন্দর অভিজ্ঞতা অনেক দিনের জন্য আপনার মনে গেঁথে থাকবে। কোলাহলহীন এই সমুদ্রতটের পাশে রয়েছে ঝাউবানের সারি। সমুদ্র সৈকতে লাল কাঁকড়ার সমাহার আপনার নজর কাড়বেই। ওড়িশার বালাসোর জেলার ডুবলাগড়ি গ্রামে রয়েছে এই বাগদা সি বিচ।
বাগদা সমুদ্র সৈকতের মূল আকর্ষণ:
পরিবার পরিজন বা বন্ধুদের নিয়ে বাগদা সি বিচে দিন দু'য়েক ল্যাদ খেতে এখানকার ক্যাম্পগুলি একেবারে পারফেক্ট। সমুদ্র সৈকতের ধার ঘেঁষেই রয়েছে এই ক্যাম্পগুলি। বেশ কয়েকটি ক্যাম্পের সঙ্গে রয়েছে কটেজ। সব ক্যাম্প বা কটেজ থেকেই সমুদ্র হয়তো দেখা যায় না, তবে ফিল করা যায়। বাগদায় সমুদ্রে জোয়ারের জলে গা ভাসানোর ফিলিংসটাই আলাদা। আবার ভাঁটা নামলে বিচময় লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ চোখ জুড়িয়ে দেয়। এক কথায় দিন দু'য়েকের ছুটি কাটাতে ওড়িশার এই সি বিচের তুলনা হয় না।
বাগদা সমুদ্র সৈকত থেকে সাইটসিন:
বাগদা সমুদ্র সৈকতের খুব কাছেই রয়েছে কাসাফল মোহনা। এটা অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের দিঘা মোহনার মতো। মোহনাজুড়ে মাছের আড়ত। সকাল সকাল সেখানে পৌঁছে যেতে পারলে টাটকা মাছ পেতে পারেন। এছাড়াও মোহনায় পাবেন সামুদ্রিক কাঁকড়াও। এখান থেকে মাছ বা কাঁকড়া বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলেও দোকানদাররা ঠিকঠাক প্যাক করে দেবেন। বাগদা থেকে অটোয় মিনিট পনেরো গেলেই পড়বে এই মোহনা। এছাড়াও বাগদা সমুদ্রতট থেকেই অটো ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন রেমুনা ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির, ইমামী জগন্নাথ মন্দির, নীলগিরি রাজবাড়ি ও জগন্নাথ মন্দির। এছাড়াও এখান থেকে চাঁদিপুর সমুদ্র সৈকতও খুব কাছে।
কীভাবে যাবেন বাগদা বিচে?
হাওড়া থেকে ট্রেনে ওড়িশার বালাসোর স্টেশনে পৌঁছে যেতে হবে। সেখান থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটারের পথ এই বাগদা সমুদ্র সৈকত। আগে থেকে সি বিচের কোনও ক্যাম্প বুক করা থাকলে তাঁরাই গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। নতুবা বালাসোর স্টেশন থেকেই বাগদা ডুবলাগড়ি সি বিচ যেতে অটো বা ছোট গাড়ি বুক করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে একপিঠের যাওয়ার জন্য ৬০০-৭০০ টাকা ভাড়া পড়তে পারে।
বাগদা সি বিচে কোথায় থাকবেন?
পর্যটন মানচিত্রে বাগদা মাত্র কয়েক বছর আগে যোগ হয়েছে। সেই কারণে এখনও পুরোদমে এখানে বড়-বড় হোটেল গড়ে ওঠেনি। তবে বিচের কাছেই পেয়ে যাবেন বেশ কয়েকটি সাইট ক্যাম্প। সেখানেই থাকা-খাওয়ার এলাহি বন্দোবস্ত করা হয়। প্রতিটি ক্যাম্পেই রয়েছে অভূতপূর্ব সব ব্যবস্থা। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে খরচ ধরা হয়। সেক্ষেত্রে জন প্রতি মোটামুটি ১৩০০ টাকা থেকে শুরু। কয়েকটি ক্যাম্পের সঙ্গেই রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। পরিবার ও বাড়ির বয়স্কদের নিয়ে গেলে সেখানেও উঠতে পারেন। আগে থেকে বুকিং করে গেলে সুবিধা হবে।
আরও পড়ুন- নির্জন সমুদ্রে লাল কাঁকড়ার সমাহার, এতল্লাট কলকাতার খুব কাছেই