ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত। কিন্তু তারপরও গণনা কেন্দ্র থেকে উদ্ধার হচ্ছে ব্যালট বাক্স। ঘটনা মালদার গাজোলের। সেখানেই একটি স্কুলের তালাবন্দি ক্লাসরুম থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রশাসনের সিল মারা তিনটি ব্যালট বাক্স। মঙ্গলবার সকালে এই ঘটনা জানাজানি হতেই তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গাজোল ব্লকে। পুলিশ ও প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। এরপরই এদিন সকাল থেকেই গাজোল স্ট্যান্ডের কাছে উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ, পথ অবরোধ শুরু হয়। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে চলে বিজেপির এই বিক্ষোভ অবরোধ। এই ঘটনায় সাংসদ খগেন মুর্মু গাজোল থানার আইসি এবং সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার দাবি জানিয়েছেন। পরে বিডিও অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন সাংসদ খগেন মুর্মু।
তৃণমূল কারচুপি করে গাজোলের ৮৩ নম্বর বুথে জয়ী হয়েছে বলেও অভিযোগ বিজেপির। পাল্টা তৃণমূলের মালদা জেলা পরিষদের গাজোল এলাকার নির্বাচিত প্রার্থী দীনেশ টুডুর অভিযোগ, বিজেপি হতাশায় ভুগছে। ওরাই ব্যালট বাক্স লুঠ করার পর ওই স্কুলের ক্লাসরুমে রেখে দিয়ে গিয়েছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে গাজোল এলাকা।
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গাজোল ব্লকের হাজীনাকু মহম্মদীয়া হাইস্কুলে এবারে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্ট্রংরুম এবং গণনা কেন্দ্র করা হয়েছিল। এদিন ওই স্কুলের একটি ক্লাস রুম থেকেই শীল প্যাক করা ওই তিনটি ব্যালট বাক্স উদ্ধার হয়েছে। যদিও ওই স্কুলের ৮৩ নম্বর বুথে ব্যালট বাক্স লুঠ হওয়ার অভিযোগে ৯ জুলাই পুনর্নির্বাচন হয়েছিল। আর এই ঘটনার পরের এদিন মঙ্গলবারে তিনটি ব্যালট বাক্স উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় গাজোল থানার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।
আরও পড়ুন- উলটপুরাণ, এবার তৃণমূল কর্মীর উঠোনে সাদা থান-ফুল, চরম শোরগোল
গাজোল হাজিনাকু মহম্মদীয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল বর্মন জানিয়েছেন, নির্বাচন মিটে যাওয়ার পর ব্লক প্রশাসনের নির্বাচনী এজেন্সির লোকেরা গত কয়েকদিন ধরে স্কুলের তদারকি চালাচ্ছিল। তাদের কোনো খুঁটিনাটি জিনিস পড়ে আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। এরপরেই ব্লক প্রশাসনের অফিস থেকে আসা কর্মীরাই দেখতে পান একটি ক্লাস রুমের ঘরে তালা বন্দি রয়েছে। যদিও সেই ঘরের চাবি আমাদের কাছে ছিল না। সেই ব্লক প্রশাসনের কর্তারা ঘরের তালা ভাঙতেই এই তিনটি ব্যালাট বাক্স নজরে আসে। এরকম ঘটনা আগে কোনদিন ঘটেনি। পুরো বিষয়টি প্রশাসন বলতে পারবে।
গাজোলের বিজেপি দলের বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন জানিয়েছেন, তৃণমূলীরা কিভাবে এবারের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কারচুপি করেছে, সন্ত্রাস চালিয়েছে তা এদিনের ব্যালট বাক্স উদ্ধারের ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এই ৮৩ নম্বর বুথে ভোটের দিন ব্যালট বাক্স পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ৮ জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার পরের দিন ৯ জুলাই আবার পুননির্বাচন হয়। সেখানে বিজেপি পরাজিত হয়েছে। তৃণমূল এইভাবে কারচুপি করেই জয়ী হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনকে দায়ী করছি। প্রয়োজনে বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
গাজোলের সংশ্লিষ্ট এলাকার মালদা জেলা পরিষদের তৃণমূলের নির্বাচিত প্রার্থী দীনেশ টুডু বলেন, 'আসলে বিরোধীদের পায়ের তল থেকে মাটি সরে গিয়েছে। তাই ওরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে এরকম ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। আমাদের অনুমান বিজেপি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরির ব্যালট বাক্স লুঠ করে ওখানে রেখে দিয়ে গেছে। নইলে এরকম ঘটনা ঘটত না। বিজেপির গড় গাজোলে বিরোধীরা হেরে ভূত। তাই এখন উল্টোপাল্টা অভিযোগ করছে।'
গাজোল ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, আপাতত ওই তিনটি ব্যালট বাক্স বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে