Bandel Purokarmi Murder case and arrest: পুরকর্মী খুনে চাঞ্চল্যকর মোড়। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মূল ষড়যন্ত্রী হিসেবে নিহতের ভাইপোকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার তাঁকে আদালতে হাজির করিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিল পুলিশ। গত বুধবার ব্যান্ডেল নিউ কাজিডাঙা এলাকায় বাড়ির সামনেই গুলিবিদ্ধ হন লালবাবু গোয়ালা। বছর ৫৩-র লালবাবু কলকাতা পুরসভায় কাজ করতেন। ব্যান্ডেল স্টেশনে নেমে মিনিট দশেকের হাঁটাপথ পেরোলেই লালবাবুর বাড়ি। ওইদিন সন্ধ্যা ৭ টার সময় বাড়ি ফেরার পথে বৃষ্টির মধ্যেই তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই পড়ে যান লালবাবু। পথচারীরা দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে তাঁকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গুলি লালবাবুর বাঁদিকের বুকে পাঁজর ভেদ করে বেরিয়ে গিয়েছিল।
ওই ঘটনার তদন্তে নামে চুঁচুড়া থানার পুলিশ। লালবাবুর পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁরই ভাইপো আদিত্য গোয়ালার নামে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। আদিত্য নৈহাটি ঋষি বঙ্কিম কলেজের ছাত্র। যদিও আদিত্যের মায়ের দাবি ছিল ঘটনার সময় আদিত্য বাড়িতেই ছিলেন। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার আদিত্যকে আটক করেছিল। শুক্রবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। শুক্রবার থানা থেকে আদালতে যাওয়ার মুখে সাংবাদিকরা খুনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে পুলিশ ভ্যান থেকে আদিত্য দু'আঙুলে বিজয়চিহ্ন দেখান।
কিন্তু কেন এই খুন? তদন্তকারীরা এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তাঁদের দাবি তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। তবে পারিবারিক সূত্রে খবর, দুই পরিবারের বসবাস কাছাকাছি হলেও জেঠু-ভাইপো সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না। কয়েক মাস আগেই দুই জনের তুমুল ঝগড়া হাতাহাতিতে পৌঁছয়। সেই সময় আদিত্য বঁটি নিয়ে জেঠুকে কোপাতেও উদ্যত হয়েছিল বলেই প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। লালবাবুর ভাই ধর্মেন্দ্রও কলকাতা পুরসভার কর্মী।
ধর্মেন্দ্র গোয়ালার সঙ্গে ২০০১ সালে বিয়ে হয়েছিল আদিত্যর মা নীলুর। তবে তা বেশিদিন টেকেনি। ২০০৪ সাল থেকে ধর্মেন্দ্র ও নীলু আলাদা থাকেন। যদিও আইনত তাঁদের ডির্ভোস হয়নি। ধর্মেন্দ্র হাওড়ায় থাকেন আর নিউ কাজিডাঙাতেই অন্য একটি বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে থাকেন তাঁর স্ত্রী। অন্যদিকে নীলুর মা সুশীলা দেবীর দাবি, লালবাবু সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন না। তাঁর একাধিক বিবাহ। মদ খেয়ে গালিগালাজ করতেন। এলাকায় তাঁর ভয়ে কেউ মুখ খুলতেন না। বাড়িতেও অশান্তি ছিল।
আরও পড়ুন- প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে ভারতে পা, পর্তুগিজরা কিন্তু আপন করে নিয়েছিল বাংলাকেই
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, এলাকার কিছু সমাজবিরোধীদের তিনি বাড়িতে শেল্টার দিতেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক কেস ছিল। বহুবার পুলিশ তাঁকে ধরে জেলে পুড়েছে। পরে আবার জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। চাকরির বাইরে জমিজমার ব্যবসায় নেমেছিলেন ইদানিং। মূলত বিতর্কিত জমিগুলো নিয়েই কেনাবেচা করতেন তিনি। চন্দননগর কমিশনারেটের মধ্যেই পড়ে চুঁচুড়া থানা। থানার পাশাপাশি ওই কমিশনারেটের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টও এই ঘটনার তদন্ত করছে। ইতিমধ্যেই একাধিক সূত্র তাঁদের হাতে এসেছে। যৌথ তদন্তে খুব তাড়াতাড়ি এই খুনের ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা যুক্ত তাদের গ্রেফতার করা হবে বলে কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানিয়েছেন।