বাঙালির নববর্ষ মানেই খানাপিনা, নতুন পোশাকের বাইরেও সবথেকে গুরুত্বপূর্ন হালখাতা। লাল রঙের এই খাতায় নতুন বছরের পাওনা গন্ডা, হিসেব নিকেষ লিখে রাখা হয়। নববর্ষের শুভ মুহূর্ত থেকেই হালখাতার সূচনা হয়। সেই সঙ্গে বাংলা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে নববর্ষের এক নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তবে আজকের এই ডিজিটালাইজেশনের যুগে অনেকটাই মার খেয়েছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চল। কলেজ স্ট্রিটের কমবেশি ১০০ টির বেশি দোকানে কয়েক বছর আগেও এই সময়টাতে স্নান খাওয়ার সময়টুকু মিলত না। আর এখন মাছি মারছেন দোকানিরা। এক ব্যবসায়ীর কথায়, “সবেতেই ডিজিটাল এফেক্ট”।
তবে বাংলা ক্যালেন্ডার অনেক কিছু ইতিহাসের সাক্ষী। ইতিহাস অনুসারে সপ্তম শতকের রাজা শশাঙ্ক বাংলা ক্যালেডারের প্রথম প্রচলন করেন। ইতিহাস অনুসারে সপ্তম শতকের বাংলার রাজা শশাংক বাংলা ক্যালেন্ডারের সূচনা করেন। পরবর্তীকালে মোঘল সম্রাট আকবর কর আদায়ের সুবিধের জন্য সৌরবর্ষ অনুসারে তারিখ-ই-ইলাহির প্রণয়ন করেন। শকাব্দে বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস ছিল চৈত্র। পরে তা বদলে বৈশাখ থেকে বছর শুরুর প্রথা শুরু হয়।
তবে করোনা আবহে দুবছর পর আগামীকাল পয়লা বৈশাখের ভরপুর আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করতে তৈরি আপামোর বাঙালি। তবে বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়ে কি বলছেন নির্মাতারা? শ্রী জোতির উমরাও চাঁদ বলেছেন এ বছর ক্যালেণ্ডার বিক্রি তুলনামূলক ভাবে কিছুটা হলেও বেড়েছে। গত বছর করোনা আবহে একেবারেই বিক্রিবাট্টা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যেই এবছর পয়লা বৈশাখ আয়োজন উপলক্ষে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা বেড়েছে। ইতিমধ্যেই অর্ডারের মাল দেওয়াও শেষের দিকে। অন্যদিকে অপর এক ব্যবসায়ী মাকসুদ আলম দাবি করেছেন 'এই বছর কাগজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ফলে ক্যালেন্ডার বানাতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের'। সেই সঙ্গে তিনি বলেন 'যারা ১০০০ পিস ক্যালেণ্ডার অর্ডার দিতেই তারা এই বছর ১০০ থেকে ২০০ পিসের অর্ডার দিয়েছেন'। পরিস্থিতি সব মিলিয়ে যে ভাল নয় সেকথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পন্ডিত এবং ঐতিহাসিকরা মনে করেন বাংলা ক্যালেন্ডার যা বঙ্গাব্দ নামেও পরিচিত এটি জাতীয় সংহতির একটি প্রতীক। মৃনালিনী দত্ত মহাবিদ্যাপিঠের অধ্যাপক নিলয় কুমার সাহা এপ্রসঙ্গে বলেন, “ ১৮১৮ সালে প্রথম মুদ্রিত বাংলা ক্যালেন্ডার বের হয়। তার আগে ঐতিহ্যবাহী বাংলা পঞ্জিকাগুলি তাল পাতায় হাতে লেখা হত”।