Bangladesh Fact Check: সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের একাধিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ ও বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবি-র মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় ৷ অভিযোগ সীমান্তের অরক্ষিত অংশে বিএসএফ-কে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বাধা দিয়েছে বিজিবি ৷ তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই উভয় বাহিনীর তরফে একটি বৈঠক করা হয়েছে।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি পোস্টকার্ড। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ। এতে বিজিবি-র গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন বিএসএফ জওয়ান। অন্যদিকে বিএসএফের হামলায় আহত হয়েছেন মাত্র একজন বিজিবি সদস্য।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর তরফে শেয়ার করা পোস্টকার্ডটিতে বিজিবি-র ছবি-সহ লেখা হয়েছে, “সীমান্তে সংঘর্ষ: বাংলাদেশি আহত ১: ভারতের নিহত ১৮ জন।” পাশাপাশি পোস্টকার্ডটির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে সংঘটিত এক সশস্ত্র সংঘর্ষে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে বিএসএফ সদস্যদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বাংলাদেশি এক বিজিবি সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন, এবং ভারতের ১৮ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।) এই সংক্রান্ত আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/lingo/styles/medium_crop_simple/public/images/story/202501/2_13.jpg)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, যদিও এটা সত্যি যে গত ১০ ও ১২ জানুয়ারি বিএসএফের গুলিতে দু’জন সাধারণ বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। তবে বিজিবির হামলায় ১৮ জন বিএসএফ জওয়ানের নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, ভাইরাল দাবিটি সন্দেহজনক। কারণ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবির গুলিতে সম্প্রতি ১৮ জন বিএসএফ জওয়ান নিহত হলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশি তথা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে। কিন্তু এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি যা থেকে এই দাবির সত্যতা প্রমাণ হয়। এমনকি বিএসএফের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল কিংবা ওয়েবসাইটেও এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। এর থেকে অনুমান করা যায় যে ভাইরাল বিজিবির গুলিতে ১৮ জন বিএসএফ জওয়ানের নিহত হওয়ার খবরটি ভুয়ো হলেও হতে পারে।
আরও পড়ুন সত্যিই কি বাংলায় স্কুলছুটের সংখ্যা নেমে এসেছে শূন্যে? এই তথ্যের সত্যতা জানুন
তবে কিওয়ার্ড সার্চের সময় ২০২৫ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সময় টিভির ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আজমতপুর সীমান্তের বাগিচাপাড়া এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৮ থেকে ৯ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। এতে আহত হয়েছেন এক বাংলাদেশি নাগরিক। আহত শহিদুল ইসলাম উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাগিচাপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে।বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।” এই একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে অপর এক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর প্রতিবেদনেও।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/lingo/styles/medium_crop_simple/public/images/story/202501/3_15.jpg)
অন্যদিকে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম আলোর অন্য একটি প্রতিবেদনে বিএসএফের গুলিতে আরও এক বাংলাদেশি নাগরিকের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে লেখা হয়েছে, “লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে শহিদুল ইসলাম (৪২) নামের এক বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার ভোরে উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়ন সীমান্তের ওপারে ভারতের কোচবিহারের ময়নাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত শহিদুল ইসলাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের কাশিরডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম জবেদ আলী।” তবে কোনও প্রতিবেদনেই বিজিবির গুলিতে ১৮ জন বিএসএফ জওয়ানের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/lingo/styles/medium_crop_simple/public/images/story/202501/4_14.jpg)
পাশাপাশি গত ১২ জানুয়ারি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজকালে আমরা একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা করতে রবিবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনারকে ডেকে পাঠায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সেই প্রতিবেদনেও বিজিবির গুলিতে ১৮ জন বিএসএফ জওয়ানের নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/lingo/styles/medium_crop_simple/public/images/story/202501/5_10.jpg)
এর থেকে প্রমাণ হয় যে বিজিবির হামলায় ১৮ জন বিএসএফ জওয়ানের নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন।
[এই গ্রাফিক কার্ডটির সত্যতা যাচাই করেছে bangla.aajtak.in, যা অনলাইনে ভুল তথ্য এবং ডিপফেক ভিডিও শনাক্তকরণে Shakti collective-এর অংশ]