Bangladeshi Hindu refugees India border: বিএসএফের কাছে শুধু একটাই কাতর আর্জি, 'আমাদের ভারতে প্রবেশ করতে দিন। আমাদের প্রাণ সংশয়ে। তিন দিন ধরে না খেয়ে বহুদূর থেকে পালিয়ে এসেছি।' জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের দক্ষিণ বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উন্মুক্ত সীমান্তে দাঁড়িয়ে বিএসএফের উদ্দেশে এমনই করুণ আর্তি জানিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলছিলেন ওঁরা। তাঁদের চোখে, মুখে আতঙ্কের ছাপ। জিরো ল্যান্ডে তখন দাঁড়িয়ে আরও কয়েকশো মানুষ। শিশু-সহ মহিলা সকলেই সেই দলে। প্রত্যেকেই একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চান। এই সব আর্তির জবাবে বিএসএফ তাঁদের বারবার ফিরে যেতে অনুরোধ করতে থাকে।
কদিন আগেই তামিলনাড়ুর এক পত্রিকায় বেরুবাড়ি আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, বেরুবাড়িকে ভারতের মানচিত্রে স্থান করে দেওয়া সম্ভব হলেও শ্রীলঙ্কার মতো একটা ছোট দ্বীপকে তামিলনাড়ু রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না কেন? সেই ঐতিহাসিক বেরুবাড়ি, ফের আন্তর্জাতিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে খবরের শিরোনামে।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তেই উত্তাল ওপার বাংলা। পড়ছে লাশের পর লাশ। জ্বলছে গোটা দেশ। মৃত্যুভয়ে বাংলাদেশ ত্যাগের হিড়িক পড়েছে। বুধবার দুপুরে দক্ষিণ বেরুবাড়ির উন্মুক্ত সীমান্ত ধরধরা পাড়া এলাকায় জড় হন প্রায় হাজারখানেক মানুষ। সকলের কাতর আবেদন তাঁদের ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিএসএফের পদস্থ কর্তারা। সেনাবাহিনীর জওয়ানরাও পৌঁছন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অতিরিক্ত জওয়ান মোতায়েন করা হয় উন্মুক্ত সীমান্তে। মানিকগঞ্জ আউটপোস্টের ওসি জিবা প্রধান বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানা যায়,গত দুদিন ধরে উন্মত্ত জনতা বাংলাদেশের পঞ্চগড় উপজেলার অন্তর্গত দিনাজপুর জেলার বনগ্রাম, বানিয়াপাড়া, কামারপাড়া, লাহিড়ীপাড়া, ধাপের ঘাট, বদাগঞ্জ-সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ওপর অত্যাচার, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের শিক্ষক অরুণচন্দ্র রায়ের কথায়, রাতের অন্ধকারে মহিলাদের টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাঁর কোনও হদিশ মিলছে না। ওই এলাকায় আরেক তরুণ স্বপনকুমার রায় জানান, পরিবার ও প্রাণ বাঁচাতে না খেয়ে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে এদিন ভারতীয় সীমার 'নো ম্যানস' জোনে এসে পৌঁছেছি।
সেখানে পৌঁছে তাঁরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে চা বাগানের গাছের ছায়ায় বসে পড়েন। শিশু-সহ মহিলারা সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশি বাড়িতে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছন ৯৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের ডিসিজি ইন্দ্রজিৎ জোত, আইজি সূর্যকুমার শর্মা, পুলিশের ডিআইজি সন্তোষ লিম্বকর, ডিএসপি শেরপা লেপচা প্রমুখ।
স্থানীয় বাসিন্দা সত্যেন্দ্রনাথ রায়ের কথায়, এদিন দুপুরে হঠাৎ করে ওই বাসিন্দারা সীমান্তের ৭৭১ নম্বর মেইন পিলারের ২এস এবং ৩এস নম্বর সাব পিলার এলাকায় উপস্থিত হন। জিরো পয়েন্ট এলাকায় উপস্থিত হয়ে চা বাগানে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের কাতর আবেদন, ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। তারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরতে পারবেন না। তাঁদের প্রাণসংশয় রয়েছে। মানিকগঞ্জ আউটপোস্টের ওসি জিবা প্রধান বলেন, ‘শরণার্থীদের দাবি, এলাকায় লুটপাট চলছে। মহিলাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তাই প্রাণরক্ষার জন্য আমাদের আশ্রয় দিন। কিন্তু, এদিন অদ্ভুতভাবে ঘটনাস্থলের আশপাশে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের (বিবিজি) জওয়ানদের উপস্থিতি নজরে আসেনি। দিন গড়িয়ে রাত হলেও শরণার্থীদের ফেরানো সম্ভব হয়নি।'
বিএসএফের শিলিগুড়ি-রাধাবাড়ি সেক্টর থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় ৫০০-৬০০ জন বাংলাদেশের নাগরিক সীমান্তে এসেছে। বাংলাদেশিরা আশ্রয়ের জন্য আবেদন করছেন। তাঁরা অত্যাচারিত হয়েই ভারতে আসতে চাইছেন। বিএসএফ তাঁদের ভারতে ঢোকার কোনও অমুমতি দিচ্ছে না। বিএসএফ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওই বাংলাদেশি শরণার্থীদের প্রশাসন এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সহায়তায় সীমান্ত থেকে সরানো সম্ভব হয়।