Advertisment

করোনার উৎস? সানন্দে বাদুড় খাচ্ছেন শবররা

বিতর্কের উত্তাপ থেকে বহু দূরে পুরুলিয়ার শবর জনজাতী। করোনা লকডাউনের মধ্যেও প্রিয় খাদ্য বাদুড়ের মাংস রোজই পাতে পড়ছে এই জনজাতীর মানুষদের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩০ লক্ষ। মৃত্যু হয়েছে ২ লক্ষের ওপর। এই ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে এখনও বিস্তর মতবিরোধ আছে। বিশ্বজুড়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। কারও বক্তব্য, গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে পড়েছে, কেউ আবার মনে করছেন বাদুড় জাতীয় প্রাণী থেকে ছড়িয়েছে কোভিড-১৯। তবে এসব বিতর্কের উত্তাপ থেকে বহু দূরে পুরুলিয়ার শবর জনজাতী। করোনা লকডাউনের মধ্যেও প্রিয় খাদ্য বাদুড়ের মাংস রোজই পাতে পড়ছে এই জনজাতীর মানুষদের। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, ভারতীয় বাদুড় থেকে এই রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।

Advertisment

পুরুলিয়ার কুলাভাল গ্রামের সুনীল শবর, সুভাষ শবররা এখনও জঙ্গলে শিকার করতে যান। শবরদের এমন দিনযাপন চলছে যুগ যুগ ধরে। জঙ্গল থেকে যে খাবার জোটে তা একবেলা আর আরেকবেলা ভাত-ডাল খেয়েই দিন কেটে যায় তাঁদের। শবরদের খাদ্য তালিকায় যেমন ইঁদুর, সাপ, ব্যাঙ, আছে তেমনই আছে বাদুড়ও। সুনীল শবর বলেন, "শিকারে না গেলে খাব কী?" জঙ্গলে কী জোটে? সুনীল, সুভাষরা বলেন, "জংলি আলু, কুন্দরী এসব তো আছে। তাছাড়া বিভিন্ন প্রজাতীর সাপ, ব্যাঙ, শেয়ালের বাচ্চা, বনের খরগোস শিকার করা হয়। তাছাড়া তাল গাছ থেকে বাদুড় ধরা হয়। এসব বাড়িতে এনে রান্না করে খাওয়া হয়।" কথার মাঝেই তাঁদের জিজ্ঞাসা, "আমাদের করোনা হবে না-তো?" সুনীল শবর অবশ্য নিজেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলেন "আমরা প্রায়ই মাংস খাই । আমাদের ওসব নিয়ে ভয় নেই।"

চিকিতসকদের বক্তব্য, প্রকৃতিগত ভাবে ভারতীয় বাদুড়ের সঙ্গে চিনা বাদুড়ের পার্থক্য রয়েছে। শবরদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা? সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটা? তা নিয়ে গবেষণা করছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া জেলার সম্পাদক তথা বিশিষ্ট চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "বাদুড়ের করোনা ভাইরাসের জিনের সঙ্গে মানুষের করোনা জিনের ৯৫ শতাংশ মিল রয়েছে। আর প্যাঙ্গোলিনের রয়েছে ৯৮ শতাংশ।" তাঁর মতে, "সরাসরি বাদুর থেকে আসেনি (করোনা)। বাদুড়ের পর প্যাঙ্গেলিন থেকে এসেছে। উহানের ক্ষেত্রে পরিবেশের বিষয়টাও আছে। করোনার ৬৯টা জেনোটাইপ আছে, এরমধ্যে ভারতে দুটো পাওয়া গিয়েছে।"

আরও পড়ুন- করোনায় ভারতকে স্বস্তি দিতে পারে বর্ধমানের মেয়ের আবিষ্কার, মিলেছে কেন্দ্রীয় স্বীকৃতি

শবরদের প্রসঙ্গে এই বিশিষ্ট চিকিতসকের বক্তব্য, "তাঁদের ইমুইনিটি পাওয়ার আমাদের থেকে অনেক বেশি। আমি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি অ্যালকোহল খেলেও ওদের লিভারের কোনও অসুখ নেই। করোনা ওদের ক্ষতি করতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। ব্যাঙ, সাপ, ইঁদুর, বাদুড়, বক খায় ওঁরা। এসব খেলে তাঁদের কতটা সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে তা নিয়ে গবেষণা করছি। তাছাড়া চিনারা স্যুপ করে খায়। এখানে পুড়িয়ে বা রান্না করে খাওয়া হয়। সেক্ষেত্রে ভাইরাসের কোনও ক্ষমতা থাকে না।"

পরিবেশগত দিকের কথা বলেছেন কনসাল্টেন্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট ভাস্কর চৌধুরী। তিনি বলেন, "এই স্পিসিস চায়না থেকে ছড়িয়েছে। এখানকার পিসিস আলাদা। এখানকার বাদুড়ের নিপা ভাইরাস থাকতে পারে। বাদুড়ের মধ্যে অনেক ভাইরাস রয়েছে। বাদুড় নিজে ইনফেক্টেড হয় না কিন্তু বহণ করে। নিপা ভাইরাস আরও মারাত্মক।" ভাস্কর চোধুরীও খাবার পদ্ধতির কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "কাঁচা খেলে সমস্যা আছে। তবে পুড়িয়ে বা রান্না করে খেলে সেই সুযোগ নেই। এটা বাদুড় থেকে ওরিজিনেট করেছে তাই আর ওই বাদুর থেকে আসবে না। মিউটেট করে মানুষের শরীরে ঢুকেছে। তারপর মানুষ থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়েছে। এখন এ আর বাদুড়ে ঢুকবে না। ঢুকলেও ক্যারেকটার পাল্টে যাবে।

শবরদের শিকার এখনও দৈনন্দিন ঘটনা। বিষয়টা জানে পুরুলিয়া প্রশাসনও। বড়াবাজারের বিডিও শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, "এটা শবরদের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। বাদুড় খুব ভাল বাহক। বিষয়টা চিন্তাভাবনার করার মতো।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment