সেঞ্চুরির পরেও নট-আউট পেট্রল। একশো ছুঁই ছুঁই ডিজেল। তাই মেপেই দু বা চার চাকায় যাতায়াত করছেন মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ছাঁট লোহা, টিন সহ বিভিন্ন স্ক্র্যাপ ব্যবহার করে ব্যাটারিচালিত গাড়ি বানিয়ে ফেললেন দুর্গাপুরের ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ সরকার। জিপের আদলে তৈরি গাড়িটির নামকরণ করেছেন ‘ভিন্টেজ কার’। ওই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলেই এখন রীতিমত মানুষের ভিড়।
দুর্গাপুর পুরনিগমের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লির বাসিন্দা বছর পঁয়তাল্লিশের বিশ্বজিৎ সরকার বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এক সময় বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। ভিড়িঙ্গি এলাকায় তাঁর স্কুটারের শোরুম রয়েছে। করোনা আবহে লকডাউন থাকায় তাঁর শোরুমও দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পাশাপাশি আকাশ ছোঁয়ে পেট্রপণ্যের দামও। সেই সময় মধ্যবিত্তের কথা ভেবে ব্যাটারিচালিত চারচাকা গাড়ি তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু করেন এই ব্যবসায়ী। তবে, শুধু ভাবনা-চিন্তা নয়, বাস্তবে তা করে দেখিয়ে চমক দিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু।
আরও পড়ুন- বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন দুই শিশুকন্যার ভার নিলেন দুই মার্কিন দম্পতি
স্কুটারের চারটি চাকা, ৬০ ভোল্টের একটি ব্যাটারি ও শক্তিশালী মোটর, এছাড়া পুরনো টিন, লোহার রড, ফেলে দেওয়া পুরনো গাড়ির স্ট্রিয়ারিং, গিয়ার লিভার সহ একাধিক সরঞ্জাম দিয়ে বাড়িতে বসে নিজের হাতে শুরু করেন গাড়ি তৈরির কাজ। প্রায় তিন মাসের মধ্যে গাড়িটি তৈরি করে ফেলেন বিশ্বজিৎ। ব্যাটারি চালিত 'ভিনটেজে'র দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৩ ফুট। গাড়িটি দেখতে কিছুটা হুড খোলা জিপ গাড়ির আদলে। একজন চালক সহ মোট ২ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে ওই গাড়িতে। প্রায় ৪ ঘণ্টা চার্জ দিলেই গাড়ির ব্যাটারি ফুল হয়ে যায়, যাওয়া যাবে ৬০ কিলোমিটার। সম্পূর্ ব্যাটারি চার্জে লাগে ৩ ইউনিট বিদ্যুৎ। প্রায় গাড়ির সর্বোচ্চ গতি প্রায় ৩০ কিলোমিটার। ৪ কুইন্টাল ওজন নেওয়ার মত ক্ষমতাশালী এই গাড়ি।
গাড়ির সৃষ্টিকর্তা বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, 'শিল্পাঞ্চলে পরিবেশ ও আর্থিক শাশ্রয়ের কথা ভেবেই এই গাড়ি বানিয়েছি। এছাড়াও আমাদের শহরে বহু বয়স্ক মানুষ আছেন। যাঁদের ছেলে মেয়ে কেউ নেই বা থাকলেও চাকরি ও ব্যবসার সূত্রে ভিন রাজ্যে বা দেশে বসবাস করেন। ওই বয়স্ক মানুষ গুলি এই ধরনের ছোটো গাড়ি করে অনায়াসে বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবেন। শারীরিক পরিশ্রমের মজুরি বাদ দিয়ে গাড়িটি তৈরী করতে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।' ইতিমধ্যেই ব্যাটারি চালিত এই গাড়ির স্বীকৃতি ও শংসাপত্রের জন্য দুর্গাপুর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন