সরস্বতী পুজোতে রাজভবনে বাংলায় হাতেখড়ি নিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির থাকলেও ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রামনবমীর মিছিল নিয়েও রাজ্যপালের উদ্দেশে কটাক্ষের সুরে মন্তব্য় করেছেন শুভেন্দু। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের রাজ্যপাল সম্পর্কে সুর অনেকটা নরম। বিভিন্ন ইস্যুতে আনন্দ বোস রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান না নেওয়ায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন শুভেন্দু। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরাসরি চিঠি দিয়ে নয়া নির্দেশ দেওয়ায় রাজ্য় সরকারের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয়েছে রাজভবনের। রাজ্য়পাল যেমন আচরণ করবেন তেমন প্রতিক্রয়া মিলবে বলে আগেই জানিয়ে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি দ্বিতীয় ধনকড়ের জমানা শুরু হয়ে গেল?
প্রতি সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যদের রিপোর্ট দিতে হবে আচার্য তথা রাজ্যপালকে। আর্থিক লেনদেনের আগাম হিসেবও দিতে হবে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য় বসু। তাঁর বক্তব্য়, উচ্চশিক্ষা দফতরকে অন্ধকারে রেখে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মোদ্দা কথা রাজভবনের চিঠি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ব্রাত্য। রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের একদফা বিতর্ক চলছে প্রধান সচিব নিয়োগ নিয়ে। এরইমধ্য়ে চলতি সপ্তাহে উত্তরবঙ্গের কর্মসূচি কাটছাঁট করে তড়িঘড়ি হুগলির রিষড়ার অশান্ত এলাকা পরিদর্শনে ছুটেছেন রাজ্যপাল। বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তীতে শান্তি বজায় রাখতে কলকাতা শহর চষেছেন স্বয়ং রাজ্যপাল। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। এবিষয়ে তৃণমূল কড়া প্রতিক্রিয়া না দিলেও দলীয় মুখপাত্রের গলায় সুরও ট্য়াঁরা ছিল। রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের নানা বিষয়ে মতপার্থক্য় কিন্তু ইতিমধ্য়েই শুরু হয়েছে।
অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশনের তামিলনাড়ুর বাড়়িতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে কালীপুজোর দিন সস্ত্রীক হাজির হয়েছিলেন গণেশনও। যদি তিনি বেশি দিন রাজ্যপাল পদে ছিলেন না। পরবর্তীতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বিধানসভায় রাজ্য সরকারের লিখিত বাজেট পড়েছিলেন। তার প্রতিবাদে বিধানসভায় শুভেন্দুর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা রাজ্যপালকে গো ব্যাক স্লোগান দিয়েছিল। কালো পতাকা দেখিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের বিধায়করা। রাজ্যপালের ভূমিকায় যে শুভেন্দু সন্তুষ্ট নয়, তা তাঁর মন্তব্য়ে বারে বারে বুঝিয়েছেন। তুলনা করেছেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ও জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গেও। ব্রাত্যর মন্তব্যের পর প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি একটু একটু করে পরিস্থিতির বদল ঘটছে?
রাজ্য সরকারের সঙ্গে নিয়ম করে বিতর্ক চলতে থাকত প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের। যে কোনও ইস্যুতে যখন তখন মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপালের বিবাদ ছিল জলভাত। জগদীপ ধনকড় রাজস্থানের মন্ত্রী ছিলেন, বিজেপির সাংসদ ছিলেন। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড। সিভি আনন্দ বোস আইএএস। রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রকৃতিগত ভাবে রাজ্য সরকারের রাজ্যপালের মতবিরোধের পার্থক্য় দুজনের ক্ষেত্রে অনেকটা ভিন্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্রাত্য বোস, কুণাল ঘোষরা রাজ্যপাল সম্পর্কে মন্তব্য় করলেও এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় টু শব্দটি করেনি। তবে যে মধুর সম্পর্ক নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সিভি আনন্দ বোসের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার ছন্দপতন কি শুধু সময়ের অপেক্ষা? সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য-রাজনীতিতে।