বেহালা নূতন দলের অন্যতম উদ্যোক্তা সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, থিম ভাবনা থেকে প্রতিমা সবেতেই থাকবে চমকের ছড়াছড়ি।
আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠল আলোর বেণু! হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপরই মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান, দেবীপক্ষের সূচনা। চারিদিকে শুধুই পুজো পুজো গন্ধ। শেষ মুহূর্তের জোরদার প্রস্তুতি চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে।
Advertisment
কলকাতার দুর্গাপুজো এখন দেশ-কালের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশ-বিঁভুইয়েও নজর কাড়ছে। বিদেশের মাটিতেও প্রবাসী বাঙালিরা মেতে ওঠেন শারদোৎসবে। কুমোরটুলি থেকে দুর্গা প্রতিমা যায় সাতসমুদ্র পেরিয়ে। গত বছরই বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। ইউনেস্কোর ইনট্যানিজবল কালচারাল হেরিটেজের মর্যাদা পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো। বিদেশীরাও এবার মেতে উঠছেন দুর্গতিনাশিনীর আবাহনে। এবছর কলকাতার দুর্গাপুজোয় বিদেশির ছোঁয়া পাচ্ছে। সেই সঙ্গে মাতৃবন্দনায় ‘নজরকাড়া’ থিমে দর্শকদের চমকে দিতে তৈরি শহরের নামজাদা একাধিক বারোয়ারি।
কলকাতার দুর্গাপুজোয় এবারই বিদেশের শিল্পীরা শিল্পভাবনা ফুটিয়ে তুলছেন। নেদারল্যান্ডস থেকে দুই ডাচ শিল্পীর ছোঁয়ায় সেজে উঠবে শহরের নামজাদা পুজোর মণ্ডপ। বেঞ্জামিন এবং মার্টিয়ানার হাতযশে বেহালার হেভিওয়েট পুজো নূতন দলের থিম ভাবনায় রয়েছে চমকে ছড়াছড়ি। কলকাতার শিল্পী অয়ন সাহার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন দুই ডাচ শিল্পী। কলকাতার পুজো মানেই বেহালার পুজো। শহরবাসীকে উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা করে তুলতে তাই নেই কোন খামতি।
Advertisment
থিমের টক্কর, আলোয় রশনাই এসব তো রয়েছেই। সেই সঙ্গে উৎসবের আনন্দ যাতে মানুষ একেবারে চেটে পুটে উপভোগ করতে পারে তার জন্য কোনরকমের খামতি রাখতে চাইছে না বেহালা নূতন দল। সমগ্র পুজা মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হচ্ছে বাঙালির সাধের ফুচকা দিয়ে। ভাবনার নাম ‘তুষ্ট’। ফুচকার আদলে তৈরি হচ্ছে দেবীর সিংহাসন। কিন্তু ফুচকা কেন? শিল্পী অয়ন সাহার জানিয়েছেন, ‘ফুচকা সকলের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড। দুর্গাপুজো আর ফুচকার মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় সংযোগ। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখা আর মশলা দিয়ে আলু মাখা আর তেঁতুল কিংবা পুদিনার জল দিয়ে ফুচকা মুখে দেওয়া এ এক অনন্য অনুভূতি। ফুচকা মানুষে মানুষে কোনও ভেদাভেদ রাখে না। বিভেদ ঘোচানোর জন্যই এই পরিকল্পনা। এই কাজে হাত লাগিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের দুই শিল্পী।
শহর থেকে জেলার পুজো মণ্ডপে থিমের রমরমা।
ইউনেস্কোর উদ্যোগে তাঁরা বেহালা নূতন দলের সঙ্গে শিল্পের মেলবন্ধন ঘটাতে এসেছেন। শুধু মণ্ডপ নয়, প্রতিমা দেখেও পুজোপ্রেমীদের মুগ্ধ হবেন দর্শকরা এমনটাই জানান হয়েছে ক্লাবের তরফে। উৎসবের আনন্দ যাতে মানুষ একেবারে চেটে পুটে উপভোগ করতে পারে তার জন্য কোনরকমের খামতি রাখতে চাইছে না বেহালা নূতন দল। জোর কদমে চলছে পুজোর প্রস্তুতি।
উৎসবের আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাতে প্রস্তুত সকলেই। হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। আর তারপরেই বাঙালির ‘প্রাণের পুজো’ দুর্গাপুজো। শহর থেকে জেলার পুজো মণ্ডপে থিমের রমরমা। পুজো যতই এগোচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে বেড়েছে ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেরারা সেরা জাহির করার পালা। ইউনেস্কোর হেরিটেজ সম্মান পেয়েছে বাংলার দুর্গাপুজো৷ দুর্গাপুজোকে ঘিরে আগ্রহ গোটা বিশ্ব জুড়ে। এ বারের পুজোয় তাই তাক লাগাতে প্রস্তুত হচ্ছে বেহালা নূতন দল। শিল্পী বেঞ্জামিনের ভাষায়, “এই পুজো সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। কাজ করতে করতেই থিম নিয়ে শিখব। আমার কাছে এ এক অনন্য সুযোগ”।
নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কলকাতার মেলবন্ধন দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবেন শহরের পুজোপ্রমীরা।
মূলত, তাঁরা দুজনই ভিজ্যুয়াল আর্টস নিয়ে কাজ করেন। বিভিন্ন রকম ভিজ্যুয়াল আর্টস নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি পুজোর থিমে কীভাবে সেই শিল্পকর্মকে জুড়ে দেওয়া যায় তা নিয়েই কাজ করছেন তাঁরা। শিল্পী মার্টিয়ানা বলেছেন, “কলকাতার দুর্গাপুজো এখন বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। এখানকার পুজো, শোভাযাত্রা, কার্নিভাল নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক কৌতূহল। সেটা চাক্ষুষ করার ইচ্ছা ছিল। পুজোর ব্যাপার বিশেষ জ্ঞান নেই। কিন্তু পুজোর কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে বেশ ভালও লাগছে আর আনন্দও হচ্ছে।”
বেহালা নূতন দলের অন্যতম উদ্যোক্তা সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, থিম ভাবনা থেকে প্রতিমা সবেতেই থাকবে চমকের ছড়াছড়ি। দুই ডাচ শিল্পী থাকবেন পুজো শেষে কার্নিভাল পর্যন্ত। এবারের পুজোয় তাই ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কলকাতার মেলবন্ধন দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবেন শহরের পুজোপ্রমীরা।