/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/10/Durga-pujo-Bardhaman-lead.jpg)
বর্ধমান রাজবাড়ির পটচিত্রের দুর্গা, অনেকের কাছে হয়তো এভাবেই পরিচিত। তবে এর নেপথ্যে রয়েছে অতীতের এক সমৃদ্ধশালী ইতিহাস। যা শুরু হয়েছিল পাঞ্জাবি জমিদারদের হাত ধরে। অনন্য এই দুর্গাপূজার শুভারম্ভ ১৭ শতাব্দীতে এক ক্ষত্রীয় পাঞ্জাবি বণিকের হাত ধরে। যিনি তৎকালীন মুঘল রাজত্বে বাংলায় এসে জমি এবং ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।
বর্ধমান শহরের এক সরু গলিতে জরাজীর্ণ সেই অতি প্রাচীন লক্ষ্মী নারায়ণ জিউয়ের মন্দির। যা একদা রাজপরিবারের অংশ ছিল। বর্তমানে সেই মন্দিরের ক্ষয়ে যাওয়া খিলান, অর্ধ-অলংকৃত স্তম্ভ, রং চটে যাওয়া দেওয়াল সুপ্রাচীন এই ঐতিহ্যশালী মন্দিরের সমৃদ্ধির ইতিহাস বহন করে চলেছে। তবে ক্ষয়ে যাওয়া ইট-কাঠ, পাথর, চুন-সুড়কির মাঝেও উৎসবের আমেজ এতটুকু ম্লান হয়নি।
সদ্য নয় দিন ব্যাপী নবরাত্রি এবং দুর্গোৎসব পালন শুরু হয়েছে। রোজকার পুজোপাঠে ব্যস্ত মন্দিরের পুরোহিতরা। মন্দির দালানের একেবারে মাঝখানে শোভা পাচ্ছেন মা সন্তোষী। আরেকটু ভিতরের দিকে গেলেই চোখে পড়বে পাঁচ ফুট লম্বা হাতে আঁকা এক মা দুর্গার ছবি। একচালার সেই দেবীমূর্তির চিত্রে সস্থানে শোভা পাচ্ছেন লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশ।
সময়টা ১৭ শতকের মাঝামাঝি। এই লক্ষ্মী নারায়ণ জিউয়ের মন্দিরে বিগত দু' শতক ধরে মহাধুমধাম করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে আসছেন তাঁরা। মৌখিকভাবে প্রচলিত, একেবারে গোড়ার দিন থেকেই এরকম হাতে আঁকা পটচিত্র দিয়ে পুজো হয়ে আসছে। পুজোর কাজ সারতে সারতে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত উত্তম মিশ্র জানালেন, লক্ষ্মী নারায়ণ জিউয়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহারাজাধিরাজ মহতাব চাঁদ রাই।
গোটা বাংলায় যেভাবে দুর্গাপুজো পালিত হয়, তার থেকে বর্ধমানের এই পুজো সর্বতোভাবেই আলাদা। যেখানে অবাঙালি প্রথা নবরাত্রির সঙ্গে একেবারে খাঁটি বঙ্গোৎসব দুর্গাপুজো কোথায় যেন মিলেমিশে এক অনন্যভাবে পালিত হয়ে আসছে সেই কোন কাল থেকে। কীভাবে শুরু হল এই অনন্য প্রথা? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজপরিবারের এক সদস্য জানালেন, "আমাদের পূর্বপুরুষরা লাহোর থেকে আসার সময় সঙ্গে করে দেবী চন্দ্রিকার এক মূর্তি নিয়ে এসেছিলেন। যিনি কিনা দুর্গারই আরেক রূপ। তারপর থেকেই প্রতি নবরাত্রির সময়ে দেবী চন্দ্রিকার মূর্তিতে পুজোর পাশাপাশি আমরা হাতে আঁকা পটচিত্রের দুর্গাকেও পুজো করা শুরু করি। বাংলার এই অঞ্চলে অবশ্য পটচিত্রের দুর্গা পুজোর একটা প্রচলন বহুকাল ধরেই রয়েছে।"
পুজোর রীতির পাশাপাশি এখানকার ভোগের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র রয়েছে। দুর্গাপুজোর ভোগ বলতে সাধারণত আমরা খিচুড়ি-ই বুঝি, তবে এখানে মা দুর্গাকে ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় ছোলা-পুরি এবং হালুয়া। পুরোহিত মিশ্র জানালেন, বিগত ২০০ বছর ধরেই এই একই পটচিত্রে পুজো হয়ে আসছে। আগে প্রত্যেক বছর রং করা হত, তবে এখন কালের নিয়মে সেই রীতিতে ছেদ পড়েছে। বর্তমানে প্রত্যেক ১২ বছর অন্তর সেই পটের দুর্গাকে রং করা হয়। নবরাত্রি উপলক্ষে বর্ধমান গুজরাটি সমাজের তরফে ৯ দিন ধরে সন্ধ্যায় ডান্ডিয়া নৃত্যের আয়োজন করা হয়।
ফোনে বর্ধমান রাজপরিবারের এক সদস্য জানালেন, "বর্তমানে দেশ-বিদেশের বহু জায়গায় তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছেন।" নবপ্রজন্ম কি জানে তাঁদের পাঞ্জাবি পূর্বপুরুষদের কথা? কিংবা কতটাই বা জানেন তাঁদের বংশের এই অনন্য দুর্গাপুজো সম্পর্কে? সংশ্লিষ্ট সদস্য হেসে জানালেন, "পরিবারের ইতিহা, সম্পর্কে অবগত হলেও তাঁরা এখন মনেপ্রাণে পুরোপুরি বাঙালি। কোনওভাবেই তাঁদের পাঞ্জাবী বলে চিহ্নিত করা যাবে না!"
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন