১৫৩ দিনের রুদ্ধশ্বাস অভিযান। মোট ৬২৪৯ কিমি রোমাঞ্চকর যাত্রাপথ। গোটা অভিযান সাইক্লিং করতে করতে ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরের যুবক চন্দন বিশ্বাস। ৫২ ঘণ্টার সেই দুঃসাহসিক অভিযান নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র 'চরৈবেতি'। বহু দুঃসাহসিক অভিযানের সাক্ষী চন্দনের রোমাঞ্চকর যাত্রা এবার দেখানো হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।
গত ২০১৭ সালে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল ট্রান্স-হিমালয় অভিযান। হিমালয়ের পাদদেশ ধরে ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল এই চার দেশ এবং পূর্বে অরুণাচল থেকে অভিযান শেষ করেছিলেন তৎকালীন জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখে। ১৫৩ দিন ধরে ৬২৪৯ কিমি পথ পাড়ি দিয়েছিলেন চন্দন। সঙ্গী ছিল সাইকেল, একটি গো-প্রো ক্যামেরা এবং বুক ভরা আত্মবিশ্বাস। সাইকেল চালাতে চালাতে গো-প্রো ক্যামেরায় পুরো যাত্রাপথ রেকর্ড করেছিলেন তিনি। সেটা পুরো ৫২ ঘণ্টার ভিডিও ছিল।
সেই ৫২ মিনিটের ভিডিও এডিট করে ৭২ মিনিটের ডকু-ফিচার বানিয়েছেন পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় এবং চন্দন বিশ্বাস। ছবিতে গানও রয়েছে। সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে রাজা নারায়ণ দেব। সম্পাদনা করেছেন অভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রগ্রাহক অবশ্যই চন্দন নিজে। তবে তিনি পরিচালনাতেও বৌদ্ধায়নকে সহযোগিতা করেছেন।
৭২ মিনিটের ছবিতে চন্দনের অসাধ্যসাধনের কাহিনী রয়েছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বহু চড়াই-উতরাই, হিমবাহ, খরস্রোতা নদী, গিরিপথ পেরিয়েছেন চন্দন। ঝড়-বৃষ্টি, প্রতিকূল আবহাওয়া, ধসের ভ্রুকুটি এড়িয়ে দীর্ঘ যাত্রাপথ শেষ করেছিলেন তিনি। পথে বহু মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। এক একেকটি রাজ্যে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। সেই অভিজ্ঞতাই এই তথ্যচিত্রে উজাড় করে দিয়েছেন চন্দন।
'চরৈবেতি' ছবিটি এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্ট্রি প্যানোরামা বিভাগে মনোনীত হয়েছে। আগামী ১৪ জানুয়ারি দেখানো হবে এই তথ্যচিত্র। সেই নিয়ে ব্যস্ততা তুঙ্গে পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় এবং চন্দন বিশ্বাসের। পরিচালক জানিয়েছেন, "প্রথম যখন ট্রান্স-হিমালয় অভিযানে চন্দন যাচ্ছিল, তখন আমাকে জানিয়েছিল এই গোটা যাত্রাপথের ভিডিওগ্রাফি করতে চায় ও। সেটা যদি কোনওভাবে আর্কাইভ করা যায় সে কথা বলেছিল চন্দন। তখনও এটা নিয়ে সিনেমা বানানোর কথা ভাবিনি। ৫২ ঘণ্টার গোটা যাত্রাপথের ভিডিওগ্রাফি করেছিলেন চন্দন। সেই ভিডিও দেখে ঠিক করে নিই, এটা নিয়ে কিছু একটা করতেই হবে। দুর্গম জায়গা দিয়ে সাইক্লিং করার সময় ভিডিও করা সহজ নয়। কিন্তু ও সেটা করেছে। আর আমি চেষ্টা করেছি চন্দনের চোখ দিয়ে গোটা যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে।"
উল্লেখ্য, বৌদ্ধায়নের আরও একটি ছবি এবার এশিয়ান সিলেক্ট বিভাগে প্রদর্শনের জন্য মনোনীত হয়েছে। ছবিটার নাম মানিকবাবুর মেঘ। সম্প্রতি কাশ্মীরে একটি সাইক্লিং অভিযান শেষ করেছেন চন্দন। তিনি বলেছেন, "বৌদ্ধায়নদা এবং গোটা প্রোডাকশন টিমের দৌলতে এই কাজটা সম্পন্ন হয়েছে। এরা না থাকলে এত বড় কাজটা হতই না। ছবিটি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে শর্ট অ্যান্ড ডকুমেন্ট্রি প্যানোরামায় জায়গা পাওয়ায় আমরা সবাই খুশি। আশা করব, নতুন প্রজন্মের অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা আরও উৎসাহ পাবেন। তাঁরাও সাহস করে এবার বড় অভিযানে বেড়িয়ে পড়বেন।"
চন্দন এবার আরও বড় অভিযানের জন্য কোমর বাঁধছেন। এবার ট্রান্স-সাইবেরিয়ান অভিযানে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়তে চান তিনি। প্রস্তুতি চলছে, শীঘ্রই হয়তো বেড়িয়ে পড়বেন তিনি। তখন আরও বড় ধরনের কাজ হয়তো দেখতে পাওয়া যাবে।