শেষের দু'দিন আগেও ফের ফাঁস মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র। বিষয়টা তো সত্যিই রুটিন মাফিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রথম দিনেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বাংলা (প্রথম ভাষা) প্রশ্নপত্র। বুধবার ফাঁস হয়ে গেল জীবনবিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। এদিন পরীক্ষা শুরুর মিনিট দশেকের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় প্রশ্ন।
বাংলা পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টার মধ্যেই হোয়াটসঅ্যাপে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছিল প্রশ্ন। পরের পরীক্ষাগুলোতেও ধারবাহিক ভাবে এই ঘটনার প্রতিফলন দেখা যায়। পুরো বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামহলে ঢিঢি পড়ে গিয়েছে। বেনজির এই ঘটনায় চূড়ান্ত হতাশা আর বিরক্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।
আরও পড়ুন: খোকা ৪২০-এর বদান্যতা ফুরোবে কবে?
এর মাঝেই কৌতুকের অস্ত্রে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করল ভারতের ছাত্র ফেডারেশন (এসএফআই) এবং ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (ডিওয়াইএফআই)। এই দুই সংগঠনের রাজ্য কমিটি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে অভিনব পদ্ধতিতে। পরপর সাতদিন প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় তারা পার্থবাবুকে 'সাতে সাত' দিয়েছে। ক্রিকেটার যুবরাজ সিংয়ের ছয় বলে ছ'টি ছক্কা মারার রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন পার্থবাবু, বলে মত তাদের। সেই ক্রিকেটের উপমা টেনেই এবার এই বিষয়ে ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক তথা 'প্রিন্স অফ ক্যালকাটা' এবং বর্তমানে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের (সিএবি) প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলিকে যৌথভাবে চিঠি দিল দুই ছাত্র ও যুব সংগঠন।
ভবিষ্যতে পার্থবাবুর জাতীয় দলে খেলা উচিত বলেই মনে করছে তারা। এই মর্মে তারা সৌরভকে চিঠি দিয়ে বিষয়টির ওপর আলোকপাত করার আবেদন করেছে। শুধুমাত্র প্রেস বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি এসএফআই। তারা সিএবি-র কাছে মেইলও পাঠিয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, এদিন বিকেলে সল্ট লেকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসে গিয়ে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই 'সাতে সাত' করার অভিনন্দন জানাতে গোলাপফুল নিয়ে হাজির হয়। সংবাদমাধ্যমকে উপস্থিত থাকার অনুরোধও জানায় তারা।
জীবনবিজ্ঞানের পরীক্ষার প্রতিলিপি ফাঁস হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আবারও ওঠে ঝড়। শুরু হয় ট্রোল এবং মিমের বন্যা। শুধুমাত্র যুবরাজের ছয় বলে ছয় ছক্কার রেকর্ড ভাঙার কথাই উঠে আসেনি সেখানে। অনেকের মতে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও ফুটবলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে এক আসনেই বসেছেন। কারণ দু'জনেই পরিচিত সাত নম্বর জার্সিধারী হিসেবে। সোশ্যালে এবার মাধ্য়মিকের নামকরণ করা হয়েছে 'মাধ্যলিক'।
পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন ফাঁস রুখতে রীতিমতো কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল প্রশাসন। বেশ কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণও করা হয়। কিন্তু এরপরেও কীভাবে প্রশ্নের প্রতিলিপি চলে এল সামনে? পর্ষদ সূত্রেও এই বিষয়ে দু'রকম মত পাওয়া যাচ্ছে। কারোর মতে এটা বিকল্প সেটের প্রশ্ন। কেউ বলছেন, এই প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের কোনও মিল না থাকায় এটি মনগড়া বা পুরোনো কোনও প্রশ্নপত্রও হতে পারে। পুরো বিষয়টা পর্ষদ তদন্ত করে দেখছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে কি না সে দিকটাও খেয়াল রাখছে তারা। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক শেষ। সেদিন ঐচ্ছিক বিষয়ের পরীক্ষা। যদিও এরপর শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষার পরীক্ষা রয়েছে। সূত্রের খবর, পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই পর্ষদ সভাপতির পদ ছাড়তে পারেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্য়ায়, তবে এই খবরের সত্যতা এখনও যাচাই করা যায় নি।