রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে হেনস্থা ও জাতিবিদ্বেষী মন্তব্য করার অভিযোগের ঘটনায় হস্তক্ষেপ করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অভিযোগকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গেও মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন পার্থ।
শিক্ষামন্ত্রীর এদিনের ভূমিকায় সাড়াও মিলেছে। যে চার বিভাগীয় প্রধান এবং একাধিক সেন্টারের অধিকর্তা ঘটনার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন, তাঁরা কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, আজ উপাচার্য প্রতিটি বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে শিক্ষকেরা নির্দিষ্ট কিছু দাবি উত্থাপন করবেন। সেগুলির অন্যতম উপাচার্যের তৈরি করা তদন্ত কমিটির পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস টি, এস সি সেলের হাতে তদন্তের দায়িত্ব আরোপ করা।
আরও পড়ুন: বেশি ভালবেসে ভুল করেছি, ‘উপলব্ধি’ মমতার
এদিন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "রবীন্দ্রনাথের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা অভিপ্রেত নয়। তদন্তের রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে অধ্যাপকেরা পদত্যাগ করেছেন, আমি তাঁদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। ওঁরা রাজি হয়েছেন।" ছাত্রছাত্রীদের প্রতি পার্থের বার্তা, "তোমাদের কোনও আচরণে যদি শিক্ষক-শিক্ষিকারা অসম্মানিত হয়ে থাকেন, তাহলে ক্ষমা চাইতে হবে। যারা অপরাধ করেছে, কেউ ছাড় পাবে না।"
রবীন্দ্রভারতীর ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান সরস্বতী কেরকেটার অভিযোগকে কেন্দ্র করে আপাতত উত্তাল ওই বিশ্ববিদ্যালয়। তফসিলি উপজাতির ওই শিক্ষিকা উপাচার্য ও টিচার্স কাউন্সিলের কাছে লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছেন, গত ২০ মে ছাত্র সংসদের সদস্যরা তাঁকে ৪ ঘন্টা ধরে হেনস্থা করেছে। জাতিবিদ্বেষী গালিগালাজ করার পাশাপাশি তাঁর গায়ে জলের বোতল ছুঁড়ে মারা হয়েছে, খাবার এবং জল খেতে দেওয়া হয়নি। গায়ের রং নিয়ে কটাক্ষ করা হয়েছে। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, তাঁর পায়ের হাড়ে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘক্ষণ বসতে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: 'রিয়্য়ালিটি শো-তে অশালীন হতে দেবেন না শিশুদের', উপদেশ কেন্দ্রের
এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিবাদে সরব হন অধ্যাপকেরা। পদত্যাগ করেন সংস্কৃতের বিভাগীয় প্রধান অমলকুমার মন্ডল, অর্থনীতির বিভাগীয় প্রধান বিন্দি সাউ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান তথা বি আর আম্বেদকর স্টাডি সেন্টারের অধিকর্তা বঙ্কিমচন্দ্র মণ্ডল এবং সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ ও স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচারের অধিকর্তা আশিসকুমার দাস। সরস্বতীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি। তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পলা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার।
অভিযোগকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধেও অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছে ছাত্র সংসদ। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিত দে (বাপ্পা) বলেন, "ওই অধ্যাপিকা দিনের পর দিন ছাত্রছাত্রীদের অপমান করেছেন, নম্বর কমিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছেন। টাকার বিনিময়ে অতিথি অধ্যাপক নিয়োগ করেছেন। আমরা এসবের প্রতিবাদ করাতেই উনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন।"
শিক্ষক কাউন্সিলের সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, "শিক্ষামন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই আমরা আপাতত আন্দোলনে ইতি টানছি। আগামীকাল উপাচার্য বৈঠক করবেন বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে। সেখানে আমরা তাঁর তৈরি তদন্ত কমিটির পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এসসি-এসটি সেলের হাতে দায়িত্বভার তুলে দেওয়ার দাবি জানাব।"