West Bengal: রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তুঙ্গে উঠলো নবান্ন বনাম রাজ ভবন সঙ্ঘাত। উচ্চশিক্ষার হালহকিকত জানতে চলতি সপ্তাহে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য-উপাচার্যদের ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সেই ডাকে সাড়া দেয়নি। এতেই চটেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রীতিমতো ট্যুইট করে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ক্ষোভ উগড়ে দেন তিনি। রাজ্যের শিক্ষাব্যাবস্থার কঙ্কালসাড় দশার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকেই দায়ী করেন তিনি।
ট্যুইটে তিনি লেখেন, ‘রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা উদ্বেগজনক। কারণ রাজ্যপালের ডাকা বৈঠকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আচার্য-উপাচার্য উপস্থিত হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থায় দলবাজি দেখে আমি স্তম্ভিত।‘ তিনি আরও লিখেছেন, ‘রাজ্যে আইনের নয় শাসকের শাসন চলছে। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিজেরদের লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিষয়টা তদন্ত করে দেখুক। রাজ্যের হাতে শিক্ষাব্যবস্থা ছেড়ে দিলে চলবে না।‘
জগদীপ ধনকড়ের এভাবে সরব হওয়াকে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল। দলের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘রাজ্যপালের ট্যুইট আমাদের বিড়ম্বনার কারণ। রাজনৈতিক নেতারা ট্যুইট করে থাকেন। উনি তো রাজনৈতিক ব্যক্তি নয়। কিছু বলার থাকলে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখতে পারতেন। তাছাড়া শিক্ষা দফতরকে না জানিয়ে উপাচার্যদের চিঠি লিখলে, উপস্থিত থাকা অসুবিধাজনক।‘
এদিকে, এই আবহেই এদিন বিকেলে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস। রাজ্যের ঝুলে থাকা পুরসভাগুলোর নির্বাচন দুই দফায় সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। সেই উদ্যোগ পর্যালোচনায় এই বৈঠক বলে রাজ ভবন সুত্রে খবর।
একসপ্তাহ আগেই মা কিচেনের ব্যয়বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যপাল। এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ‘অসাংবিধানিক’ভাবে, অভিযোগ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের। মা কিচেন প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ ও খরচের খতিয়ান জানতে চেয়ে অর্থ দফতরের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল। গত শনিবার টুইট করে নিজেই এই কথা জানিয়েছেন তিনি।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বাজেট বরাদ্দে ‘মা কিচেন’ প্রকল্প চালুর ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পে গরিবদের ৫ টাকায় ভাত-ডাল, ডিম ও সবজির তরকারি দেওয়া হচ্ছে। আপাতত কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের ১৬টি বরোয় চালু রয়েছে এই প্রকল্প। কিন্তু কলকাতা পুরভোটের ঠিক আগে এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিতর্ক বাড়ালেন রাজ্যপাল।
কী অভিযোগ ধনকড়ের?
টুইটে অর্থ দফতরের সতিবকে লেখা চিঠি জুড়ে দিয়েছেন জগদীপ ধনকড়। সেখানে উল্লেখ, তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের তৈরি বাজেট যা বিধানসভায় পেশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেখানে বলা হয়েছিল যে, মানুষের সুবিধার জন্য ন্যূনতম মূল্যে রান্না করা খাবর মা কিচেন প্রকল্পের আওতায় বিক্রি করা হবে। ১লা এপ্রিল ২০২১ থেকে ৩১ মার্চ ২০২২ পর্যন্ত এই প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছিল ১০০ কোটি টাকা। বাজেট পাসের মাধ্যমে এই প্রকল্পে অনুমোদন মেলে, ফলে প্রকল্পটি আইন স্বীকৃত।
রাজ্যপালের দাবি, জনগণের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন যে ‘মা কিচেন’ চলতি বছর ১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা চালু হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় মাস আগে। এই সময়কালে ওই প্রকল্পে ব্যয় ‘অসাংবিধানিক’ বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের আগে ‘মা কিচেন’ চালানোর জন্য কত ব্যয় হয়েছে এবং তাতে কার অনুমোদন ছিল তা জানতে চেয়ে অর্থ দফতরের সচিবকে চিঠি দিয়েছেন জগদীপ ধনকড়। এক সপ্তাহের মধ্যে জবাবদিহি করতে বলা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন