লকডাউনে শ্মশানের স্তব্ধতা বাংলার পাট কলগুলিতে। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের চিন্তার কালো মেঘ আরও গাঢ় হয়েছে।
লকডাউনে শ্মশানের স্তব্ধতা বাংলার পাট কলগুলিতে। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের চিন্তার কালো মেঘ আরও গাঢ় হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার টিটাগড়ের বি টি রোডে পাট কল শ্রমিকদের বস্তি। পরিবার নিয়ে এক চিলতে আশ্রয়ে কোনক্রমে দিনগুজরান। বস্তিবাসীদের মুখে এখন শুধু একটাই চিন্তা, আগামীতে পেট চলবে কীভাবে? শুধু টিটাগড়ের শ্রমিক বস্তিই নয়। ব্যারাকপুর, হালিশহর, নৈহাটি, কাঁচড়াপাড়াজুড়েই এখন এক ছবি। লকডাউনে শ্মশানের স্তব্ধতা বাংলার পাট কলগুলিতে। কাজ বন্ধ। শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। লকডাউনের মেয়াদ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের চিন্তার কালো মেঘ আরও গাঢ় হয়েছে।
Advertisment
রেশন থেকে রাজ্য বিনামূল্যে চাল, আটা দিচ্ছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলেই জানালেন টিটাগড়ের শ্রমিক বস্তির বাসিন্দা মিঠুন প্রজাপতি। আপাতত তাঁর প্রয়োজন নগদ অর্থের। ওই বস্তির ১৪০ পরিবারের কম-বেশি একই দাবি।
প্রথাম পর্যায়ের লকডাউনের শেষে পাট কল চালুতে সম্মতি দেয় কেন্দ্র। রাজ্যের ১৮ পাট কলে কাজ চালুর করার জন্য রাজ্যকে আর্জি জানায় মোদী সরকার। খাদ্য শস্য মজুত করতে পাটের থলি প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্য পূরণের জন্যই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক মমতা সরকারও এ রাজ্যের পাট কল চালু করতে অনুমতি দেয়। বলা হয়, পাট কলগুলি মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিক নিয়ে কাজ করবে। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ অন্যান্য নিয়ম-বিধি মানতে হবে।
Advertisment
এই নিয়ম-বিধি ঘিরেই সমস্যার শুরু। উৎপাদনের ইচ্ছে থাকলেও বাস্তবে তা সম্ভব নয় বলে মত অধিকাংশ পাট কল কর্তৃপক্ষের। তাঁদের মতে, বেশিরভাগ পাট কলই রেড জোনের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, শ্রমমির্ভর এই শিল্পে মাত্র ১৫ শতাংশ কর্মী নিয়ে উৎপাদন সম্ভব নয়। পারস্পরিক দূরত্বের নিয়মও মানা যাবে না। ফলে লকডাউন মেটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে লকডাউনের জেরে প্রায় ২ লক্ষ টন উৎপাদন ব্যহত হতে পারে।
বাংলায় মোট ৫২ পাট কল রয়েছে। এর মধ্যে নানা কারণে ৬টি বন্ধ। চালু থাকা ৪৬টির মধ্যে ১৮টি পাট কল উত্তর ২৪ পরগনার অন্তর্গত। প্রায় ২ লক্ষ শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত।
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, 'বিধি মেনে, কম শ্রমিক নিয়ে পাট কল খোলার ব্যাপারে আমরা ছাড়পত্র দিয়েছি।' মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা জানান, ''চালু থাকা ৪৬টির মধ্যে ২৬টিকে লকডাউনে উৎপাদন শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।' তবে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, 'শ্রমনির্ভর এই শিল্পে ১৫ শতাংশ শ্রমিক মানেই ৫০০ জন কাজ করবে। সেখানে নিয়ম-বিধি মেনে চলা খুবই কঠিন কাজ। এগুলির বেশিরভাগই আবার কন্টেইনমেন্ট জোনে অবস্থিত।'
ইন্ডিয়া জুট মমিল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্তার মতে, 'শ্রম নির্ভর এই শিল্প মাত্র ১৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে চালানো যাবে না। আমরা সংগঠনের তরফে তা মুখ্যযমন্ত্রীকে জানিয়েছি। কেন্দ্রকেও অবহিত করা হয়েছে।' বর্ধমান, কোচবিহারে বেশ কয়েকটি পাট কল খোলা থাকলেও উৎপাদন প্রায় হচ্ছে না বলেই জানান তিনি। সংগঠনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সঞ্জয় কাজারিয়া বলেন, 'এই অবস্থা চলতে থাকলে রবি শস্য মজুত রাখতে বস্তার অভাব দেখা দিতে পারে।'
কাজ বন্ধের জেরে শ্রমিকদের হাতে নগদ নেই। অগ্রিম দাবি করছেন তাঁরা। ইন্ডিয়া জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্তা জানান, 'শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা করে আগ্রিম দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। অনেক কল কর্তৃপক্ষই টাকা দিয়ে দিয়েছে। যাঁরা পাননি সেই সব শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুন।'
সাধারণত বছরে ১২ লক্ষ টন পাট উৎপাদন হয়। এ বছর লকডাউনের জেরে ১.২ লক্ষ টন উৎপাদন ব্যহত হয়েছে। লকডাউনের মেয়াদ বাড়লে যা প্রায় ২ লক্ষ টনে গিয়ে পৌঁছবে।