Advertisment

করোনা আতঙ্কেই কোটিপতি মুর্শিদাবাদের যুবক

"একটা মাথার উপর পাকা ছাদের বাড়ি বানাবো। দুই মেয়ে আর ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করব। সেই সঙ্গে নিজের জন্য ছোট করে একটা ব্যবসাও করব ভেবেছি"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
murshidabad

মুর্শিদাবাদে ইজারুলের বাড়ি। ছবি- পরাগ মজুমদার

করোনা আতঙ্কে বাড়ি ফিরতেই এক কোটি! গল্প নয়, একেবারে সত্যি। করোনা আতঙ্কে শেষ পর্যন্ত কেরালা থেকে ঠিকা শ্রমিকের কাজ ছেড়ে বাড়িতে ফিরতেই রাতারাতি কোটিপতি ইজারুল শেখ। ভাগ্য যে এভাবে সদয় হবে তা বিশ্বাসই হচ্ছে না ইজারুলের।

Advertisment

মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙা মির্জাপুরের শীতলপাড়া এলাকার ঘটনা। দিনমজুর ইজারুল শেখ এক টিকিটে রাতারাতি কোটিপতি বনে গিয়েছেন। করোনা আতঙ্কের মধ্যে এলাকাবাসীর মুখে মুখে ফিরছে এই গল্পই। স্থানীয় মানুষজন করোনা ছেড়ে এখন ইজারুলেই মশগুল। ওই এলাকায় গেলে এখন এক ডাকেই মির্জাপুরে কোটিপতি ইজারুলের বাড়িটি দেখিয়ে দিচ্ছেন স্থানীয়েরা।

সম্প্রতি দেশব্যাপী করোনা আতঙ্কের জেরে পাঁচ সদস্যের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ইজারুল সপ্তাহ তিনেক আগে বাক্স-প্য়াঁটরা বেঁধে কেরল থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ ছেড়ে ফিরে আসেন মির্জাপুরের বাড়িতে। একদিকে, সংসারে তিন শিশু সন্তান, স্ত্রী, বাবা-মায়ের দায়িত্ব। আর অন্যদিকে, করোনা আতঙ্ক- এই দুই নিয়ে ইজারুল দিশাহারা হয়ে পড়েন। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারের মুখে একটু হাসি ফোটাতে উপার্জনের নানা পথ খুঁজতে থাকেন ইজারুল। স্ত্রী আনসূরা অবশ্য সবসময় তাঁকে কাজ হারানোর পরেও ভরসা জুগিয়ে গিয়েছেন। আর শেষ পর্যন্ত নিজের ভাগ্য ফেরাতে ইজারুল কেটে ফেলেন লটারির টিকিট।

নিজে কখনও পুরস্কারের আশা না করলেও ভাগ্য যেন তাঁর ওপর রাতারাতি সদয় হল। ইজারুলের এক বন্ধু এসে খবর দেয়, তাঁর কাটা টিকিটেই নাকি মিলেছে এক কোটি টাকার প্রথম পুরস্কার। প্রথমে এই কথা শুনে থ বনে যায় হতদরিদ্র ইজারুল। তড়িঘড়ি পাড়ার মাতব্বর থেকে শুরু করে শিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছে গিয়ে তাঁর টিকিট দেখিয়ে যাচাই করে ঘটনার সত্যতা। আর শেষ পর্যন্ত সত্যি হয় তাঁর পুরস্কার জয়। আহ্লাদে আটখানা ইজারুল বাড়িতে এসে তাঁর মা, স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে এই খবর জানাতেই তাঁরাও হতবাক হয়ে যায়। দৈনিক কয়েকশো টাকার মজুরির ওপর নির্ভর করে যাঁদের সংসার চলে, তাঁরা কিনা এখন কোটিপতি।

গ্রামজুড়ে এরপরই ছড়িয়ে পড়ে ইজারুলের কোটিপতি হওয়ার কাহিনী। খবর গিয়ে পৌঁছায় বেলডাঙ্গা থানাতেও। রীতিমতো তাঁর নিরাপত্তায় বাড়ির পাশে বসানো হয় কয়েক জন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। আর যাঁকে নিয়ে এত কথা, সেই বছর চল্লিশের ইজারুল এখন স্বপ্নে বিভোর। সে আর পরিবার-পরিজনকে ছেড়ে করোনা আতঙ্ক মাথায় নিয়ে ফিরে যেতে চায় না ভিন রাজ্যে।

ইজারুল বলেন, "কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি আমার মত হতদরিদ্র মানুষও কোটিপতি হতে পারে। এখন আমার অনেক আশা। একটা মাথার উপর পাকা ছাদের বাড়ি বানাবো। দুই মেয়ে আর ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করব। সেই সঙ্গে নিজের জন্য ছোট করে একটা ব্যবসাও করব ভেবেছি"। আর স্ত্রীর কথা বলতেই মুচকি হেসে ইজারুল বলেন, "ওকে কিছু মনের মতো গয়না, শাড়ি দেব"। পাল্টা আনসুরা বিবি বলেন, "অভাবের সংসারে স্বামী এতদিন খরচ ঠেলতে বাড়ি ছেড়ে বিদেশে পড়ে থাকত। এবার আর ওঁকে ছেলে মেয়েকে ছেড়ে থাকতে হবে না। এখানেই কিছু একটা ব্যবসাপাতি করবে"।

Murshidabad coronavirus corona
Advertisment