Advertisment

'এখন কী করবো?' ভবিষ্যৎ উৎকণ্ঠার গ্রাসে কাশ্মীর থেকে ফেরা শ্রমিকরা

'আমাদের সব শেষ। পেটের জ্বালা মেটাবো কী করে জানি না।' বলছেন কাশ্মীর থেকে রাজ্যে ফেরা শ্রমিকরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভবিষ্যৎ উৎকণ্ঠার গ্রাসে কাশ্মীর থেকে ফেরা শ্রমিকরা।

ট্রেন এসে থামলো হাওড়ায়। একে একে বেড়িয়ে আসছেন কাশ্মীরে কাজ করতে যাওয়া বাংলার শ্রমিকরা। চোখে মুখে বেঁচে ফেরার স্বস্তি। কিন্তু, সে আর কতক্ষণ? রেশ কাটতেই ওদের মাথায় রোজগারের চিন্তা। 'এখন কী করবো? পরিবার লালন-পালনে উপার্জনের কী উপায়?' ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না উপত্যকা থেকে ঘরে ফেরা বাংলার ১৩৩ জন শ্রমিক।

Advertisment

গ্রামে কাজ ছিল না। থাকলেও উপার্জন কম। তাই দু'চোখে স্বপ্ন নিয়ে ওরা কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। কিন্তু, কপাল খারাপ হলে যা হয়। গত অগাস্ট থেকেই অবণতিরর দিকে কাশ্মীর পরিস্থিতির। একে একে বন্ধ হয়েছে উপার্জনের মাধ্যমগুলি। গত তিনমাস অনেককেই সেখানে থাকতে হয়েছে দমবন্ধ করা পরিবেশে। অনেকেই আবার বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, সরকারি এই আশ্বাসে কয়েক দিন আগেই ফের সেখানে পৌঁছে যান মালদা, দিনাজপুরের শ্রমিকরা। কাজ শুরু হচ্ছিল সবে। কিন্তু, হায়! তখনই জঙ্গি হানার ঘটনা। রোজগার তো হলই না, উল্টে পকেট থেকে বেরিয়ে গেল জমানো অর্থও। মাথায় হাত দুস্থ শ্রমিকদের।

আরও পড়ুন: বাণিজ্যিক পুরনো গাড়ি বাতিলে সতর্কতা জারি পরিবহণ দফতরের

৩৯ বছরের বনগাঁর দীপঙ্কর বিশ্বাস কাজের আশায় গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। এই প্রথম নয়। ২০০৪ সাল থেকেই কাশ্মীরে যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। যদিও এবারের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর বলে দাবি দীপঙ্করের। তাঁর কথায়, 'আগে পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই সব পাল্টে গেল। কাজ তো দূর, নিজের ইচ্ছে মতো রাস্তায় চলাফেরা পর্যন্ত করতে পারতাম না। আমি ফিরে এলেও দিন কয়েক আগেই কাজের সন্ধানে আবার কাশ্মীরে যাই। তবে, অবস্থার বদল হয়নি। এরই মধ্যে পাঁচ বাঙালির জঙ্গি হানায় মৃত্যু হতেই ভয় পেলাম। তারপরই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।'

publive-image ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরলেন ওরা।

চাষের কাজ করে মাসিক ২০,০০০ টাকা রোজগার ছিল নয়াগ্রামের বছর ২৮-য়ের ইব্রাহিম শেখের। দেড় মাস আগেই ফের কাজ করতে সেখানে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম। কিন্তু, কুলগ্রামে জঙ্গি হানার পর পরিবার তাঁকে সেখানে থাকতে দিতে রাজি নয়। তাঁর কথায়, 'ফিরে তো এলাম। তবে, বুঝতে পারছি না এখন কী করবো। আমার মতো কাজ করে বাংলায় মাসে কুড়ি হাজার উপার্জন করা অসম্ভব।' ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় ইব্রাহিমের চোখে মুখে উৎকণ্ঠা।

আরও পড়ুন: ‘৫৬ ইঞ্চি ছাতি রেখে কী লাভ! দেশবাসীই তো সুরক্ষিত নয়’

একই অবস্থা দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে কাশ্মীরে কাজে যাওয়া মুস্থাফুর, নুরশাদ, রবিউলদের। তাঁদের কথায়, 'জঙ্গিহানার আগে তিন দিন মতো কাজ করেছি। সেই টাকা মেলেনি। ওখানে যেতে জমানো সব অর্থ খরচ হয়ে গিয়েছে। আমাদের সব শেষ। পেটের জ্বালা মেটাবো কী করে জানি না।'

কুলগ্রাম জঙ্গিহানার পরই বাংলা থেকে কাশ্মীরে কাজে যাওয়া শ্রমিদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিদ্ধান্ত নেন, সরকারি উদ্যোগে সেখানে কর্মরত বাঙালিদের ফিরিয়ে আনা হবে। সেখানকার বাংঙালি শ্রমিকের এতে স্বস্তি ফেরে। রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে সোমবার বিকালে কাশ্মীর থেকে বাংলায় ফেরেন এরাজ্যের ১৩৩ জন শ্রমিক। সঙ্গে ছিলেন আসামের পাঁচ শ্রমিকও। বাংলার সরকারকে কৃতজ্ঞতা জনিয়ে তাঁরা বলছেন, 'আমাদের রাজ্য সরকার একবার যোগাযোগা করারও চেষ্টা করেননি।' তবে, তাদের মাথাতেও ভবিষ্যতের চিন্তা।

Read the full story in English

West Bengal kashmir
Advertisment