পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটের নপাড়ায় রাস্তার পাশে দেড় বিঘের বসতভিটে। ন'পুরুষের ভিটে। আর্থিক মূল্য় কোটি টাকার ওপর। তার থেকেও বড় কথা, ছোটবেলার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে ওই বাড়ির সঙ্গে। ওই জমিতে রয়েছে পূর্বপুরুষের পদচিহ্ন। যে স্মৃতিতে ডুব দিয়ে এখনও শৈশবে ফিরে যান রাজ্য়ের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। তাঁর মনে পড়ে যায়, আড়াই বছরে মেনিনজাইটিস ম্য়ালেরিয়ার কথা। বাবা-মা বলেছিলেন, সেই যাত্রায় দ্বিতীয় জীবন পেয়েছিলেন তিনি। পূর্বপুরুষের স্মৃতি বিজড়িত ভিটে এবার উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্য় সরকারকে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুব্রতবাবু। প্রবীণ এই মন্ত্রীর একটাই আবদার, ওই সরকারি প্রকল্প নামাঙ্কিত হবে তাঁর ঠাকুর্দার নামে।
বর্তমানে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়। অধুনা বর্ধমান তথা পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাট ন'পাড়ায় রাস্তার ধারে দেড় বিঘে বাস্তুভিটে রয়েছে এই প্রবীন মন্ত্রীর। সেই কোটি টাকার ওপর সম্পত্তি সবটাই তিনি দিয়ে দেবেন সরকারকে। একেবারে বিনামূল্য়ে। তিনি বলেন, "আমি চাই ওই জমিতে সরকারি চিকিৎসালয়, সরকারি কোনও অফিস বা যে কোনও উন্নয়নমূলক প্রকল্প করুক সরকার। শুধু স্মৃতি রক্ষার্থে আমার দাদু স্বর্গীয় মোহিত মুখোপাধ্য়ায়ের নাম খোদাই থাকলেই হবে। এই জমি হস্তান্তরের কাজ দ্রুত করা হবে।" এছাড়াও তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চাষের জমি ভাগ চাষিদের মধ্য়ে বিলি বন্টন করে দেবেন।
কি ভাবে বর্ধমানে বসবাস শুরু করেন মন্ত্রীর পূর্বপুরুষেরা? সুব্রতবাবু বলেন, "একটা সময় বর্ধমানে ব্রাহ্মনের অভাব ছিল। তখন সেই অভাব পূরণ করার জন্য় কনৌজ ও মিথিলা থেকে বেশ কিছু ব্রাহ্মন পরিবারকে নিয়ে এসেছিলেন বর্ধমানের মহারাজা। আমরা কনৌজের ব্রাহ্মন। সেই সময় আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রচুর সম্পত্তি, জায়গা জমিও দিয়েছিলেন মহারাজা। ন'পুরুষ ধরে বর্ধমানের নাদনঘাটের নপাড়ায় আমাদের বসবাস। বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন।" ২০১১ সালে রাজ্য়ে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ন'পাড়ায় পৈতৃক ভিটেতে গিয়েছিলেন সুব্রতবাবু।
বাবা অশোক কুমার মুখোপাধ্য়ায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক। শিক্ষকতার সূ্ত্র ধরে অশোকবাবু চলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ এলাকায়। এখন যা মহেশতলা পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড। এই সারেঙ্গাবাদ এলাকায় পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন সুব্রতবাবুর পরিবার। তারপর কলকাতায় পড়াশোনার সূত্রে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ। ১৯৯৭-এ বিধায়ক, তারপর মন্ত্রী, মেয়র, ফের পরপর দুবার মন্ত্রীত্ব।
বর্ধমান ছেড়ে চলে গেলেও সুব্রত মুখোপাধ্য়ায় ভোলেননি তাঁর পৈতৃক ভিটেকে। তাই এবার উদ্য়োগ নিয়েছেন, পূর্বপুরুষের ভিটেকে সর্বসাধারণের উন্নয়নের কাজে সামিল করার। আজ, শুক্রবার, বিজয় দশমী। এরপরই ওই জমি হস্তান্তরের উদ্য়োগ নেবেন মন্ত্রী।