Advertisment

জিয়াগঞ্জকাণ্ড: 'বন্ধু শুধু আমাদের, আর কারোর নয়'

দশমীর রাতে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল এবং তাঁর স্ত্রী,পুত্রের খুনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনীতির আবহ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করল নিহতদের পরিবার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Maya Pal mother and elder sister Bandhu Priya Pal of Bandhu Prakas Pal  at their residence in  Barala village in Sahapur, Murshidabad on October 11 , 2019. The bodies 35 year old Bandhu Prakas Pal along with his wife Beauty and son Arya were found dead at their residence in Jiaganj on Tuesday.Express photo by Partha Paul

ছেলে বন্ধুপ্রকাশের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন শোকাহত মা মায়া পাল। ছবি- পার্থ পাল

"আমার ছেলে কোনওদিন কোনও রাজনীতি করেনি। ও সাদা কাগজের মতো স্বচ্ছ ছিল। কে বলেছে আপনাদের যে ও বিজেপি করত? ও তৃণমূল, বিজেপি কোনও দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিল না। সব জায়গায় মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে।" দাওয়ায় বসে পা ছড়িয়ে ভেজা চোখে কথাগুলো বলেছেন শোকে স্থবির বন্ধু প্রকাশ পালের মা মায়া পাল। দশমীর রাতে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল এবং তাঁর স্ত্রী,পুত্রের খুনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনীতির আবহ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করল নিহতদের পরিবার। দীর্ঘদিন যাবৎ আরএসএস কর্মী ছিলেন এই মর্মে ইতিমধ্যেই এই খুন নিয়ে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। তবে পরিবারের দাবি, মৃত বন্ধুপ্রকাশ কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার জিয়াগঞ্জ এলাকার লেবুবাগানে বাড়ির মধ্যেই থেকেই বন্ধুপ্রকাশ পাল (৪০), স্ত্রী বিউটি পাল (৩০) এবং ছেলে অঙ্গন (৫)-এর মৃতদেহ পাওয়া যায়।

Advertisment

আরও পড়ুন- জিয়াগঞ্জে নৃশংস হত্যাকণ্ডে আটক ২

এই খুনের তদন্তে নেমে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান বন্ধুপ্রকাশ এবং তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। অন্যদিকে পাঁচ বছরের অঙ্গনকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে এবং পরবর্তীতে মৃত্যু নিশ্চিত করতে কোনও ভারী কিছু দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলেই মনে করা হয়েছে। এই ঘটনায় চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে আততায়ীদের স্কেচও প্রস্তুত করা হয়। আটক চারজনের মধ্যে দু'জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও স্কুল শিক্ষককে খুনের ঘটনায় বাকি ২ জনকে আটক করে পুলিশ। যদিও এখনও আটকদের নাম-পরিচয় কিছুই জানানো হয়নি পুলিশের পক্ষ থেকে।

আরও পড়ুন- ‘ম্যাডাম মুখ্যমন্ত্রী, অপরাধীদের যেন বিচার হয়’, জিয়াগঞ্জকাণ্ডে মমতাকে টুইট বার্তা অপর্ণা সেনের

তবে পেশায় স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালের এই মৃত্যু ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই, এমনটাই অনুমান পুলিশের। কিন্তু সেই অনুমানকে উড়িয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। রাজ্য বিজেপি যখন এই খুনে কাঠগড়ায় তুলছে তৃণমূল সরকারকে, তখন পাল্টা তৃণমূলের বক্তব্য বিজেপির অন্দরের সংঘাতের কারণেই এই খুন। এমনকি এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জাতীয় মহিলা কমিশনও। ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তের জন্য রাজ্যের ডিজিপিকে চিঠিও পাঠায় রাজ্যপাল এবং জাতীয় মহিলা কমিশন। তবে বন্ধুপ্রকাশের এই খুনে কোনও রাজনীতি খুঁজে পাচ্ছে না তাঁর পরিবার। মামাতো ভাই বন্ধুকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, "গতকাল দিলীপ ঘোষ বলেছেন আমার ভাই বিজেপি পরিবারের সদস্য। উনি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা বলছেন। ও (বন্ধুপ্রকাশ) কোনও দলের নয়, ও আমাদের পরিবারের। ছোটোবেলা থেকেই ও আমাদের প্রিয় বন্ধু ছিল। এমনকি তৃণমূলের তরফেও বলা হচ্ছে বিজেপির অন্তর্দ্বন্ধেই ওর এই খুন। আমি পুলিশের কাছে আর্জি জানাব আপনারা সঠিক তদন্ত করে খুনীদের শাস্তি দিন। এই মৃত্যুকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না।"

Civic volunteer outside Closed house of Bandhu Prakash Paul. The bodies 35 year old Bandhu Prakash Pal along with his wife Beauty and son Arya were found dead at this in Jiaganj, Murshidabad on Tuesday.Express photo by Partha Paul.Jiaganj.11.10.2019. মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি নয় শান্তি চাই। বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির সামনে টানানো হল সেই বার্তা। ছবি- পার্থ পাল

আরও পড়ুন- কাল থেকে কলকাতায় অবস্থান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির সময় চাইল বিজেপি

অন্যদিকে বাংলার আরএসএস শাখার প্রধান বিদ্যুৎ রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "বন্ধুপ্রকাশ পাল গত চার মাস ধরে আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং আমাদের বেশ কিছু অনুষ্ঠানেও উনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি ছিলেন নবাগত। আমার এটা বিশ্বাস করি না যা উনি আমাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেই ওনাকে খুন হতে হয়েছে। তবে আমরা এই ঘটনার নিন্দা করছি এবং চাইছি দোষীদের শাস্তি হোক।" তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ঘটনায় পুলিশের দিকে আঙুল তুলছেন বন্ধুপ্রকাশ পালের পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, তদন্তে বেশ কিছু গাফিলতি রয়েছে। তাঁরা বলেন, "পুলিশ এখনও কোনও ফরেনসিক দল নিয়ে আসেনি। আমরা শুনেছি যে ঘরের মধ্যে আততায়ীর জুতো পাওয়া গিয়েছিল। তারপরও কোনও স্নিফার কুকুরও আনেনি পুলিশ।" মামাতো ভাই বন্ধুকৃষ্ণ বলেন, "জিয়াগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমাকে ন'ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল।"

Read the full story in English

Murder
Advertisment