রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে শাসক, বিরোধী দলগুলি। ফের কী ভোট ঘিরে বাংলার হিংসার পরিবেশ কায়েম হবে? প্রশ্ন নানা মহলে। এসবের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে বড় ইঙ্গিত মিলল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে।
কমিশন সূত্রে খবর, মার্চ-এপ্রিলেই হতে পারে রাজ্য়ের পঞ্চায়েত ভোট। তৃণমূল আমলে এবারেও পঞ্চায়েত ভোট হবে রাজ্য পুলিশ দিয়েই। তৃণমূল আমলে দু'বার পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে। এই দু'বারই ভোটে শাসক দলের নেতৃত্বে ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিল বিরোধী দলগুলি। ভোটের পাহাড়ায় ছিল রাজ্য পুলিশ। কমিশনের ইঙ্গিতের পর, ফের সেই বাতাবরণ তৈরি হবে বলে আশঙ্কায় বিরোধী দলগুলি।
জানুয়ারিতেই জারি হতে পারে পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি। বুধবার ২০টি জেলায় আসন বিন্যাস সংক্রান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশিত হবে। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত এই ২০ জেলার মানুষ সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে এই আসন বিন্যাস নিয়ে অভিযোগ থাকলে তা জানাতে পারবেন। সংশোধনের কাজ চলবে আগামী ৭-১৬ তারিখ পর্যন্ত। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ পেতে পারে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রধান, উপপ্রধান, সভাপতি, সহ-সভাপতি, সভাধিপতি, সহ-সভাধিপতি পদ সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে। যা শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই।
কমিশনের ইঙ্গিতকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর কথায়, 'আমাদের দল তৈরি। সংগঠন মজবুত রয়েছে। রাজ্য পুলিশ যথেষ্ট যোগ্য শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে। মীরা পাণ্ডে একবার কোর্টে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে। কিন্তু আদালত তা মানেনি। ফলে রাজ্য পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত হলে কোনও বিতর্ক থাকার কথা নয়।'
তবে হিংসার আশঙ্কা করছেন বিরোধী দলের নেতারা। বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'সিবিআই, ইডি যেভাবে তৎপর তাতে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে। ফলে ওরা ঘরগুছিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে নামবে। পারলে মাধ্যমিকের আগেই সব সেরে নেবেন। কমিশনের অস্তিত্ব নেই। রাজ্য যা বলে ওরা তাই করে। আর রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট হলে আবারও প্রহসন হবে। একতরফা ভোট হবে। ওরা জানে এছাড়া বাংলা দখল ওদের দ্বারা সম্ভব নয়।'
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, 'গতবছর ডিসেম্বরে যে পুরভোট হয়েছিল তাতে লুঠ চলেছিল তৃণমূলের দ্বারা। কমিশন তখন চুপ ছিল। আসলে এই কমিশনের কোনও অস্তিত্ব নেই। ভোটের নামে প্রহসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি রাজ্য পুলিশ নয়, কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে ভোট হোক।'
সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট মানেই ভোট লুঠের চেষ্টা। যেটা দেখেছি ত্রিপুরার পঞ্চায়েত ভোট বিজেপি করেছে, অতীতে সেটাই তৃণমূল করেছিল, ফের একই ঘটনা ঘটবে।'
এদিকে হাওড়া পুরসভায় ভোট হতে পারে আগামী বছর। হাওড়া পুরসভার ৫০টি ওয়ার্ড ভেঙ ৬৬টি ওয়ার্ডে গড়ার ও এলাকা বিন্যাসের কাজ চলছে। এরপর পদ বিন্যাস ও পদ সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে। যা শেষ হলেই হাওড়ার পুরভোট নিয়ে কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারে।