Advertisment

কেন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে ফুঁসছে ঝাড়খণ্ডের এই গ্রাম?

মূর্তি ভাঙার তদন্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি। পাশাপাশি রামনাথ কোবিন্দ, নরেন্দ্র মোদী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং অমিত শাহের কাছে প্রতিবাদ পত্রও পাঠাচ্ছে ওই সমিতি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
biddyasagor

এই মূর্তি বাংলার কোনও জায়গার নয়, পাশের রাজ্য় ঝাড়খন্ডের কার্মাটাঁড়ে বিদ্য়াসাগরের মূর্তি।

জন্ম দ্বিশতবর্ষে রাজনীতির রণে ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি। তাই নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তাল শহর এবং রাজ্য তথা বঙ্গসমাজ। কিন্তু কলকাতা থেকে বহুদূরে বসে মূর্তি ভাঙার শোক পালন করছে ঝাড়খন্ড বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতি ও বিহার বাঙালী সমিতি। এবং হতাশ হয়ে বসে নেই তারা। মূর্তি ভাঙার ঘটনার তদন্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাচ্ছে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি। এরই পাশাপাশি মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কাছে প্রতিবাদ পত্রও পাঠাচ্ছে ওই সমিতি।

Advertisment

ঝাড়খন্ডের জামতারার কার্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের জমি-বাড়ি রয়েছে। এই সেই গ্রাম, যেখানে শেষজীবন কাটান বাংলার অন্যতম মনীষী। সেই জমির তত্ত্বাবধানে রয়েছে বিহার বাঙালী সমিতি। জমির কেন্দ্রে ১১ কামরার মূল ভবন। সেই বাড়িকে কেন্দ্র করে নানা সামাজিক কর্মসূচি পালন করছে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি। ফোটো গ্যালারির মাধ্যমে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনকাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। চলছে দাতব্য চিকিৎসালয়। মহিলাদের সেলাই শেখানোও শুরু হয়েছে। ১৯৯৩ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর বিদ্যাসাগরের জন্মতিথিতে তাঁর মর্মর মূর্তিও স্থাপন করা হয়।

বিদ্য়াসাগার ঝাড়খন্ডের কার্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের বাড়ি

কার্মাটাঁড়ে প্রায় ১৬-১৭ বছর বসবাস করেন ঈশ্বরচন্দ্র। সেখানে আদিবাসী সমাজের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেন তিনি। বর্ণপরিচয়ের ষষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশ করেন সেখানকার ঠিকানায়। বিহার বাঙালী সমিতির সাধারন সম্পাদক তথা স্মৃতিরক্ষা সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সুনির্মল দাস বলেন, "বিদ্যাসাগরের শিশু বয়সের পাশাপাশি কার্মাটাঁড়ে তিনি যা যা কাজ করেছেন তার ফোটো গ্যালারি রয়েছে। আমাদের মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর কম্পিউটার স্কুলও চালু করা হবে।"

শুধু তাই নয়, সারা বছর ধরে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিতে নানা ধরনের কর্মসূচি চলে। সুনির্মলবাবু বলেন, "প্রতিবছর ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর কার্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়। বিদ্যাসাগরের জন্ম দ্বিশতবর্ষে বছরভর নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা আছে। এমনকী আমরা যে দিন জমিটা কিনেছি, ২৯ মার্চ, তাকে গুরুদক্ষিণা দিন হিসাবে পালন করে থাকি। পালন করা হয় ২৯ জুলাই তিরোধান দিবসও।"

vidyasagor ঝাড়খন্ডে জামতারা ও মধুপুরের মাঝে রেল স্টেশনের নাম বিদ্যাসাগর

কলকাতায় বিবিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙায় মর্মাহত কার্মাটাঁড়। আদতে পাটনাবাসী হলেও কার্মাটাঁড়কে দ্বিতীয় ঠিকানা করে ফেলেছেন সুনির্মল দাস। তিনি মূর্তি ভাঙার ঘটনায় বিজেপির সঙ্গে সমানভাবে দায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও। তাঁর বক্তব্য, "সরকার নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে পারে না? এই ঘটনার জন্য দুপক্ষই দায়ী। বিধবা বিবাহ চালু করা বা পণপ্রথা রদ করার জন্য সামাজিক আন্দোলন করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। তাই আমরা তাঁকে কাছের মানুষ করতে পারি না। সেই সামাজিক আন্দোলন এখনও আমরা পালন করতে পারছি না। তাই তিনি অবহেলিত। সরকারেরও নজর থাকে না তাঁর প্রতি।"

শুধু বিদ্যাসাগরের জমি-বাড়ি আগলে রাখা বা তাঁর মূর্তি স্থাপন নয়, তাঁর নামে রেল স্টেশনও রয়েছে ঝাড়খন্ডে। জামতারায় স্মৃতিরক্ষা সমিতির প্রথম বৈঠক হয় ১৯৭৩-এর ২৭-২৯ এপ্রিল। সেই তিন দিনের বৈঠকে অন্যান্য প্রস্তাবের সঙ্গে কার্মাটাঁড় রেল স্টেশনের নাম বিদ্যাসাগর রাখার প্রস্তাব পাশ হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কছে সেই দাবি জানানো হয়। পরে ১৯৭৮ সালে কার্মাটাঁড় রেলস্টশনের নাম পরিবর্তিত হয়ে যায় বিদ্যাসাগর-এ।

kolkata news
Advertisment