Advertisment

দুর্গার জন্য মিছিলে হাঁটবে বাংলা, অন্তরালেই হেরিটেজ সম্মানের নেপথ্য কারিগর

বিতর্ক থেকে বহুদূরে অধ্যাপিকা তপতী গুহঠাকুরতা, কিন্তু কেন?

author-image
suman Pal
New Update
professor tapati guha thakurata

অধ্যাপিকা তপতী গুহঠাকুরতা

সম্প্রতি কলকাতার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর “Intangible Cultural Heritage of Humanity” তকমা লাভ করেছে। আর এই প্রাপ্তিকে উদযাপন করতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রেড রোড অবধি আয়োজন করা হয়েছে বিরাট মিছিল এবং কার্নিভালের। এই উৎসবের আগে শেষ মুহূর্তে কলকাতা জুড়ে যেন একটা সাজো-সাজো রব। রাত পোহালেই কলকাতার বুকে শুরু হবে আনন্দ উৎসব। তবে এই উদযাপনকালে সংবাদ মাধ্যমের ধরাছোঁয়ার বাইরে অন্তরালেই রয়ে গেলেন এই গোটা কর্মযজ্ঞের নেপথ্য কারিগর প্রফেসর তপতী গুহ ঠাকুরতা।

Advertisment

শেষ কয়েকদিন সংবাদ মাধ্যমে তাকে নিয়ে হয়েছে অজস্র লেখালেখি কিন্তু তিনি নিজে এ বিষয়ে একদমই মুখ খুলতে চাননি। এর কারণ কি কৃতিত্ব নেওয়ার বিতর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখা? নাকি প্রথম থেকেই চুপচাপ এই কাজটা চালিয়ে যাওয়ার অভ্যাস? তা ঠিক পরিস্কার নয়। হয়তো শেষমেশ তিনি আলাদা করে নিজের নামে এর কোনোরকম কৃতিত্ব না নেওয়াটাই সিদ্ধান্ত হিসাবে বেছে নিয়েছেন? অপরদিকে তাকালে প্রশ্ন ওঠে যে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ব্যাপারটা নিয়ে ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানিয়ে শহরজুড়ে যখন এক বিরাট কর্মযজ্ঞ আয়োজনের ডাক দিয়েছেন তখন তারমধ্যেও কোথাও প্রফেসর গুহ ঠাকুরতার নাম উঠে আসছে না কেন? এত প্রশ্নের পরেও শেষে দেখা যায়, তিনি কিন্তু রয়েছেন সেই অন্তরালেই।

কেন এই মানুষটার নাম উঠে আসা প্রয়োজন? কী ভূমিকা ছিল তার কলকাতার দুর্গা পুজোর ইউনেস্কো প্রাপ্তির নেপথ্যে? আসুন এক নজরে একটু দেখে নেওয়া যাক তার কর্মকাণ্ড। ২০১৫ সালে প্রফেসর তপতী গুহ ঠাকুরতা একটা বই প্রকাশ করেন নাম “In the Name of the Goddess: The Durga Pujas of Contemporary Kolkata”। বইটি সম্পূর্ণ গবেষণাভিত্তিক একটা কাজ। বইয়ে লেখা ভূমিকা থেকে জানা যায় ২০০২ থেকে তিনি তার সহকর্মী এবং বন্ধু অঞ্জন ঘোষের সঙ্গে একটা যুগ্ম প্রজেক্ট হিসাবে কলকাতার দুর্গাপুজো নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। এবং অবশেষে ২০১৫ তে এই বইটা প্রকাশ করতে পারেন। এই বইটাই ছিল ভিত্তিপ্রস্তরের মতো।

এরপর চলে আসা যাক এর ৩ বছর পর ২০১৮ তে। যে বছর থেকে কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর ইন্ট্যানজিবল্‌ কালচারাল হেরিটেজ তকমা পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়। এই বিষয়ে IE Bangla কথা বলেছিল সে কর্মকাণ্ডে প্রফেসর গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে যুক্ত থাকা তার একজন ছাত্রীর দেবী চক্রবর্তী সঙ্গে। তিনি প্রথমে সেই টিমের বিষয়ে বলেন, “আমাদের একটা টিম ছিল যেখানে প্রফেসর তপতী গুহ ঠাকুরতার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে ছিলাম আমি, সন্দীপন মিত্র এবং ফিল্মমেকার নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য; যিনি আমাদের হয়ে দুর্গা পুজোর ওপর একটা দশ মিনিটের তথ্যচিত্র বানিয়ে দিয়েছিলেন।”

টিম তো হল, এবার কাজ? কাজ ছিল ডসিয়ার তৈরি করা যা পাঠানো হবে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছে এবং তারপরে যা যাবে ইউনেস্কোর মনোনয়নে। এবিষয়ে দেবী চক্রবর্তী বলেন, “আমরা ইউনেস্কোর জন্য এই ডসিয়ার তৈরির কাজ শুরু করি ২০১৮ -র সেপ্টেম্বরে, পুজোর ঠিক আগে আগে। ডসিয়ার আসলে একটা খুব বড় ফর্ম। যেখানে আমাদেরকে ছবি, বিভিন্ন তথ্য, সেসব তথ্য যোগাড় করার জন্য নানা প্রশ্ন এসব তুলে আনতে হয়েছিল। প্রফেসর ঠাকুরতার তত্ত্বাবধানে আমাদের এই কাজটা করতে সব মিলিয়ে প্রায় এক দেড় বছর সময় লেগে গিয়েছিল। এই কাজটাকে বহু ‘ট্রায়াল এন্ড এরর’ –এর মধ্যে দিয়েও যেতে হয়। আমরা একবার একটা ফাইল তৈরি করি, সেটা পাঠাই, তারপরে তা নিয়ে মন্ত্রক থেকে বিভিন্ন উপদেশ আসে আমাদের কাছে। তারপর আবার সংশোধন করে পাঠানো হয়। এরকম আরকি।

যদিও এই কাজটার ভিত ছিল ২০১৫ সালে প্রকাশিত হওয়া প্রফেসর তপতী গুহ ঠাকুরতার বই “In the Name of the Goddess: The Durga Pujas of Contemporary Kolkata” এবং তার দীর্ঘদিনের কাজ, কিন্তু তাও আমাদের নতুন তথ্য খুঁজতে ফিল্ড ওয়ার্ক করতে হয়। আমরা প্রফেসর গুহ ঠাকুরতার সংগ্রহ থেকে দশটা পুজোর ছবি নির্বাচন করি আর আমাদের নিজস্ব সংগ্রহের ছবিও সেখানে দিই। বিভিন্ন পুজোর শিল্পী, প্যান্ডেল নির্মাতা, পুজো কমিটি প্রমুখের তরফ থেকে অনুমতি চেয়ে নি। এভাবে ধীরে ধীরে কাজ এগোতে থাকে আর মোটামুটি ২০১৯ এর শেষে এই ডসিয়ার তৈরির কাজ শেষ করে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকে পাঠানো হয় তারপর প্রোটোকল অনুযায়ী সেখান থেকে ইউনেস্কোতে ইনট্যানজিবল্‌ হেরিটেজ তকমার জন্য মনোনীত হয়। তারপর এই খবর আসে আমাদের কাছে।”

আরও পড়ুন- পুজোর আগেই আজ পুজোর ‘কালারফুল’ পদযাত্রা, সাজ-সাজ রব, কী নির্দেশিকা নবান্নের?

কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কোর তরফ থেকে ইন্ট্যানজিবল্‌ কালচারাল হেরিটেজ তকমা দেওয়ার পরে এই কর্মকাণ্ডের নেপথ্য টিমের মেম্বার হিসাবে দেবী চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে আমি খুবই খুশি, আমাদের এতদিনের পরিশ্রমের ফসল যখন আমাদের কলকাতাকে এত বড় সম্মান এনে দিয়েছে। এই ঐতিহাসিক ঘটনায় আমি খুবই খুশি।"

তিনি আরও বলেন, "প্রফেসর গুহ ঠাকুরতা আমাদের বলেছিলেন যে তিনি কখনওই এই সম্মানলাভের কৃতিত্ব নিয়ে কোনও রাজনীতি হোক সেটা চান না। দুর্গাপুজো বা দুর্গোৎসব আমাদের কলকাতাবাসীর উৎসব। যা ইউনেস্কোর থেকে এত বড় সম্মান পেয়েছে। এর পিছনে কৃতিত্ব কার, এটা নিয়ে এমন কোনও দড়ি টানাটানি একেবারেই তাঁর কাছে কাম্য নয়। এটা উনি আমাদের জানিয়েছিলেন।”

তবুও সবশেষে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, কলকাতার এত বড় আনন্দ মুহূর্তের নেপথ্যে থাকা এই কারিগর ঠিক কী কারনে নিজের মুখ থেকে একটা শব্দব্যয় না করে অন্তরালে রয়ে গেলেন?

Mamata Banerjee heritage Unesco Durga Puja Religious procession
Advertisment