থমথমে পরিবেশ, বাইরে গুলির আওয়াজ, মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে কারও করুণ আর্তনাদ৷ ভেসে আসছে তালিবানিদের সশস্ত্র হুংকারের শব্দ। ঘরে নেই পর্যাপ্ত খাবার, বন্ধ সমস্ত দোকানপাট, গৃহবন্দি কাবুলের আমজনতা। তালিবানে কবলে থাকা কাবুলের এমনই পরিস্থিতির কথা ফোনে পরিবারের লোকজনদের শোনাচ্ছিলেন সেখানকার অস্থায়ী বাসিন্দা তথা জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়ির বাসিন্দা বারসো বিবি। কথা বলতে বলতেই তিনি তাঁর দাদাকে ফোনে বলেন "কে যেন দরজা খটখট করছে, পরে ফোন করছি"। তারপর থেকেই বন্ধ ফোন। এটাই ছিল পরিবারের লোকের সঙ্গে বারসো বিবি ওরফে আয়েষার শেষ কথোপকথন।
জলপাইগুড়িতে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই সূদূর কাবুলে থাকা আয়েশার। দুঃশ্চিন্তার মধ্যেই দিন কাটছে ওদলাবাড়িতে থাকা তাঁর পরিবারের৷ পেশায় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বারসো খান ওরফে আয়েষা। আয়েশা আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের শারানা শহরের আমেরিকান মেডিক্যাল সেন্টারে কর্মরত। বর্তমানে তিনি থাকেন কাবুলের শেরকোর্ট এলাকায়। আয়েশা জলপাইগুড়ি জেলার ওদলাবাড়ির মেয়ে। বিয়েও হয়েছে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের বাসিন্দা সমরজিৎ বুলের সঙ্গে। সমরজিৎ বুল নিজেও কাবুলের সরকারি হাসপাতালের কম্পাউন্ডার। তাঁদের দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
জলপাইগুড়ির ওদলাবাড়িতে থাকেন তাঁর দাদা আমানুল্লা খান, বউদি এলি ছেত্রী খান। পরিবারের কাছে শেষ ভিডিও কলে আয়েশার আর্তি ছিল যাতে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যায় তাঁর পরিবার। আয়েশার দাদা আমানুল্লা খান জানান, চারদিন আগে তাঁর বোন আয়েশার সঙ্গে কথা হয়েছে ভিডিও কলে। কথা বলার সময় তাঁর বোন যথেষ্ট আতঙ্কে ছিলেন। বারবার ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য আকুতি-মিনতি করছিলেন। খাবার নেই, দোকানপাট সব বন্ধ৷ বাইরে গুলির আওয়াজ, তালিবানদের হুঙ্কারের সব কথাই শোনাচ্ছিলেন আয়েশা। সেই সময়ই বাইরে দড়জায় খটখট আওয়াজ হতেই বোন তাঁকে বলেছিলেন, পরে কথা বলছি।
আরও পড়ুন- “কোনও টাকা-পয়সা নিয়ে পালাইনি”, ভিডিও বার্তায় অভিযোগ ওড়ালেন আফগান প্রেসিডেন্ট
তারপর পর থেকে আর যোগাযোগ করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে যথেষ্টই দুঃশ্চিন্তার মধ্যেই আছে গোটা পরিবার। কেমন আছেন কাবুলে বসবাসকারী বোন ও তাঁর পরিবার, সেই চিন্তায় ঘুম নেই। আয়েশার বউদি এলি ছেত্রী খান জানান, তাঁর ননদের চিন্তায় বাড়িতে এক প্রকার বন্ধ খাওয়া-দাওয়া। বারবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বিফল হতে হচ্ছে। তালিবানিরা মহিলা বিদ্বেষী। তার ওপর তার ননদ পেশায় একজন চিকিৎসক। সেটাই আরও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি চাইছেন, তাঁর ননদ ও তাঁর পরিবারের লোকেদের দেশে ফেরাতে যেন উদ্যোগ নেয় ভারত সরকার।
একই ভাবে দুঃশ্চিন্তার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন জলপাইগুড়ির মালবাজারের বিবেকানন্দপল্লির খান পরিবারও। ১৭ বছর আগে তাঁদের মেয়ে মরিয়মের বিয়ে দিয়েছেন আফগানিস্তানের কাবুলের বাসিন্দা তাহের খানের সঙ্গে। তাঁদের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তাঁদেরও ভারতে ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন মরিয়মের বাবা নজর খান ও তার মা নুরজাহান খান।