Independence Day Special: "এযেন এক স্বপ্নের মত আজও আমার কাছে। দেশের জন্য কিছু করতে পেরে আমি গর্বিত। হয়তো যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে সামিল হতে পারিনি। কিন্তু তাদের সেই সাফল্যকে নিজের কাজের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। এর থেকে আর বড় পাওয়া আর কিছুই হতে পারে না"। একথা বলতে বলতেই গলা ধরে আসে 'কার্গিল ওয়্যার মিউজিয়ামকে' নতুন করে সাজানো চন্দ্রনাথ দাসের। যুদ্ধে অংশ না নিয়েও তিনি কার্গিলের ওয়্যার মিউজিয়ামকে সাজিয়ে তুলেছেন যা ইতিহাসের পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।
কার্গিল যুদ্ধের ২৫ বছর উপলক্ষ্যে 'কার্গিল ওয়্যার মিউজিয়ামকে' নতুন করে সাজানোর দায়িত্ব বর্তায় এক বাঙালির হাতে। শুনতে অবাক লাগলেও ৮ হাজার ফুট উচ্চতায় এখন শোভা পাচ্ছে বাঙালি শিল্পীর হাতের সেই চোখ ধাঁধানো শিল্পকর্ম। যা মুগ্ধ করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। শহীদ সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি তিনি।
দিনটা ছিল ২৬ জুলাই, ১৯৯৯, ভারতীয় সেনাবাহিনী কার্গিলে প্রায় তিন মাস দীর্ঘ যুদ্ধের পর জয় ঘোষণা করে 'অপারেশন বিজয়'-এর সফল সমাপ্তি ঘোষণা করে। যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের জয়ের স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটিকে 'কার্গিল বিজয় দিবস' হিসেবে পালন করা হয়। চলতি বছর পূর্ণ হয়েছে কার্গিল যুদ্ধের ২৫ বছর পূর্তি। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাঁচশোরও বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হন। ১৪-১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় চলেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেশরক্ষার লড়াই। ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে কার্গিল ওয়্যার মিউজিয়ামটি চন্দ্রনাথ দাসের তত্ত্বাবধানেই সেজে উঠেছে ।
আরও পড়ুন - < Independence Day Special: জন্ম ভিটেতেই ব্রাত্য আজাদ হিন্দ বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, গর্জে উঠল গোটা বাংলা >
চন্দ্রবাবুর একের পর এক সাফল্যের কথা আগে থেকেই জানা ছিল সেনাবাহিনীর অনেকেরই । তাই তাঁকেই দেওয়া হয় গুরুদায়িত্ব। চন্দ্রনাথ বাবু বলেন, 'হঠাৎ করেই একদিন গোর্খা রেজিমেন্টের তরফে আমার কাছে একটি ফোন আসে। বলা হয় কার্গিলের ওয়্যার মিউজিয়ামটি সাজানোর কথা। কার্গিল যুদ্ধের কথা জানা থাকলেও যুদ্ধ সম্পর্কে সেরকম কোন সেভাবে ধারণা ছিল না, বা সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কেও কোন জ্ঞান ছিল না। সে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি। কিন্তু যে গুরুদায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছে তা পালনে আমি অবিচল ছিলাম'।
'কার্গিলে জয়ের ২৫ বছর। আর সেই জয়কে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলার এক মানুষকে ডাকাটা আমার কাছে নেহাতই গর্বের' আনন্দে মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চন্দ্রনাথের। কাজের সাহায্যে সেনাবাহিনীর তরফে বিশেষ একজনকে কলকাতায় পাঠানো হয় যিনি তাঁকে সবসময়ের জন্য এই কাজে সাহায্য করেছেন। জানিয়েছেন ভারতীয় সেনার ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র কলাকৌশল সম্পর্কে। এরপর সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে, ইতিহাস পড়ে কাজ শুরু করেন চন্দ্রনাথবাবু। দীর্ঘ চার মাসের প্রচেষ্টায় তৈরি করে ফেললেন ২৫/১০ ফুটের বিশাল আর্ট ওয়ার্ক। যা বর্তমানে শোভা পাচ্ছে 'কার্গিলের ওয়্যার মিউজিয়ামে'।
হিমালয়ের পুরো রেঞ্জের থ্রিডি মডেল করে বিশ্বরেকর্ড করেছেন যে মানুষটা সেই মানুষটা শহিদের সমাধির কাছে দাঁড়িয়ে আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারেন নি। নিজের দেশের জন্য কত তরুণ সেনা আত্মত্যাগ করেছেন। সেকথা মনে করে সেদিন গলা ভারী হয়ে চোখ বুজে আসে তাঁর। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে পেরে তিনি আপ্লূত। সেনার গাড়ি করে বিশাল সেই আর্ট ওয়ার্ক নিয়ে যাওয়া হয় চণ্ডীগড়ে। সেখান থেকে সেনার বিশেষ কার্গো বিমানে তা যায় কার্গিলে। ৮০০০ ফুট উচ্চতায়। "কার্গিল ওয়্যার মেমোরিয়ালে" স্মৃতি হয়ে থাকল এক বাঙালির আবেগ মোড়ানো শিল্পকর্ম।