Pohela Boishakh 2024 Food Item: বদলই দস্তুর। প্রতিনিয়ত ভাঙছে আর গড়ছে। এই ভাঙা-গড়ার প্রক্রিয়াতেই সৃষ্টি হচ্ছে নতুনত্ব। সেই নতুনকেই মানুষ গ্রহণ করছে সময়ের তাগিদে। জীবনচর্চার সঙ্গে বদলে যাচ্ছে সব। পোশাক পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি যার অন্যতম। বাঙালি জীবনের খাদ্যাভাস গত পঞ্চাশ বছরে অনেকটাই পাল্টেছে। যার প্রভাব পড়েছে বঙ্গের মিষ্টিতেও। আগে যেসব মিষ্টির চল ছিল সেগুলোর বেশ কয়েকটি গত কয়েক বছরে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। বদলে নতুন ধরনের মিষ্টি চুটিয়ে বিকোচ্ছে। দুয়ারে বাংলা নতুন বছর ১৪৩১। রইল বাংলার মিষ্টি কথন।
পুজো পার্বণ হোক বা আনন্দ-উৎসব, বারো মাসে তেরো পার্বণের খাওয়া-দাওয়ায় বাঙালির মিষ্টিপ্রেম অবিচ্ছেদ্য। বঙ্গে পয়লা বৈশাখে ব্যবসায়ীদের হাল খাতার সূচনার রেওয়াজ প্রচীনকাল থেকেই। এদিনই মিষ্টি বিতরণের চল রয়েছে। বর্তমানে এই রেওয়াজ বজায় থাকলেও ব্য়বসায়ীদের দেওয়া প্যাকেটে মিষ্টির পছন্দে পরিবর্তন ঘটেছে। কেমন সেই বদল? বউবাজারের ১৮৫ বছরের প্রাচীন নবকৃষ্ণ গুঁইয়ের কর্ণধার উৎপল দে-র কথায়, 'রসগোল্লা বাঙালির প্রিয়। তবে স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই মানুষ এখন মিষ্টি খাওয়া কমাচ্ছেন। বিশেষ করে রসের মিষ্টি। বদলে কড়া রসের মিষ্টির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আগে পয়লা বৈশাখে ভ্যানিলা স্বাদের আইস্ক্রিম সন্দেশ, ছানার মুড়কি, প্যারাডাইস সন্দেশ, আবার খাবো-র মতো মিষ্টি দেওয়ার চল ছিল। এখনও তা বজায় আছে, তবে শুকনো সন্দেশ, ফ্লেভার আইস্ক্রিম সন্দেশ দেওয়ার রীতি বেড়েছে।'
আরও পড়ুন- Bengali Sweets: যুগের পর যুগ মন হরণ করছে এই মিষ্টি, অতি সহজে বাড়িতে বানান মনোহরার
বউবাজারের রাস্তায় ভীম নাগের ইতিহাস প্রসিদ্ধি কম নয়৷ ১৮৫৬ সালে কলকাতায় সস্ত্রীক লর্ড ক্যানিংয়ের আগমনকে ভীম নাগ মিষ্টির রাজ্যেও স্মরণীয় করে রেখেছিলেন, সে ইতিহাস সর্বজনপ্রসিদ্ধ৷ লেডি ক্যানিংকে তিনি উপহার দিলেন নতুন এক মিষ্টি৷ ছানাকে কড়া করে ভেজে মিষ্টির রসে ডুবিয়ে নতুন কায়দায় তৈরি এই মিষ্টির নাম দিলেন লেডি ক্যানিং৷ লোকমুখে আজ তা লেডিকেনি নামেই বিখ্যাত। আজও সেই লেডিকেনি জনপ্রিয় হলেও বিক্রি কমেছে৷ ঘাটতি চিত্রকুট, ক্ষীরের চপের বিক্রিতেও। এসবের থেকে আজ পয়লা বৈশাখে ছানার গজা বেশি বিকোচ্ছে।
আরও পড়ুন- Tiffin Recipe: বাচ্চাকে টিফিনে কী দেবেন ভেবে আকুল? ট্রাই করুন চিকেন র্যাপ
উত্তর কলকাতার বিখ্যাত নকুরের দোকানে প্রথম থেকেই জলভরা, কাঁচাগোল্লা, শাঁখসন্দেশ প্রসিদ্ধ। নরম পাকের সন্দেশের জন্যে এই দোকান কলকাতার অন্যতম সেরা বলে বিখ্যাত। কালের নিয়মে সাবেকিয়ানা বজায় রেখে গিরিশ চন্দ্র দে আর নকুর চন্দ্র নন্দী-র মিষ্টির দোকানেও নানা স্বাদের নতুন নতুন মিষ্টি তৈরি শুরু হয়েছে বহুদিন। তালিকায় রসের মিষ্টির সংখ্যা কম। ক্রমশ রসের মিষ্টির চাহিদা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে কমছে। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রাণা নন্দীর দাবি, 'উত্তর কলকাতায় পয়লা বৈশাখে সাবেকি মিষ্টির চাহিদা থাকে। এখন গ্রীষ্মে আম সন্দেশ, স্বরপুরিয়া, পেস্তা বাহার, রাতাবি, চকলেট, বাবু সন্দেশের চাহিদা বেশি। মোটের উপর ফিউশান সন্দেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।'
সাবেকি মিষ্টির দোকান মালিকদদের অনেকেরই মতে, পুরনো বাংলা মিষ্টির চাহিদা যেন ক্রমশ ফিকে হচ্ছে। বদলে অবাঙালি মিষ্টি প্রভাব বাড়াচ্ছে। লঘু হচ্ছে বাঙালির ঐতিহ্য।
রসগোল্লার চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রিয়তা কুড়োচ্ছে বেকড রসগোল্লাও। তবে উত্তর কলকাতার থেকে এর চাহিদা শহরের দক্ষিণেই বেশি। দইয়ের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে হরেক রকমের স্বাদ। বাজারে বেকড দই-ও বিকোচ্ছে।