প্রয়াত হলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। মঙ্গলবার দুপুর ১২.২৫ নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। বিগত কয়েক দিন ধরে বাইপাস মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
আজ বিকেল চারটের সময় কবির মরদেহ আরএন টেগোর হাসপাতাল থেকে রবীন্দ্র সদন চত্বরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে সাড়ে চারটে থেকে ছ'টা পর্যন্ত শায়িত থাকবে দেহ। তারপর বাঙ্গুর অ্যাভিনিউতে কবির বাসভবনে এক ঘণ্টার জন্য রাখা হবে মরদেহ। সাড়ে সাতটায় নিমতলা শ্মশানঘাটে গান স্যালুট দিয়ে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি, কিন্তু এ সমাজের অমলকান্তিদের রোদ্দুর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে মানুষটা, তিনিই আজ 'অন্ধকার বারান্দা'-য়। কবির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্যপ্রেমীরা। সোশ্যাল মিডিয়া উপচে পড়ছে শোকবার্তায়।
টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রয়াণে আমি শোকাহত।এটা আমাদের সকলের জন্য একটি বড় ক্ষতি।বাংলা সাহিত্যে ওনার অসামান্য অবদান ওনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। ২০১৭ সালে ওনাকে আমরা বঙ্গ বিভূষণ সম্মানে ভূষিত করেছিলাম।ওনার পরিবারকে আমার সমবেদনা জানাই
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 25, 2018
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘নীল নির্জন’, ‘অন্ধকার বারান্দা’, ‘সময় বড় কম’, ‘ঘুমিয়ে পড়ার আগে’,‘নিরক্ত করবী’, ‘নক্ষত্র জয়ের জন্য’, ‘আজ সকালে’। 'উলঙ্গ রাজা' কাব্যগন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে কবি সম্মানিত হন সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে। এছাড়াও সম্মানিত হয়েছেন তারাশঙ্কর স্মৃতি সম্মান এবং আনন্দ শিরোমণি পুরস্কারে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট পেয়েছিলেন ২০০৭ সালে।
অজস্র কবিতার পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যানুরাগীরা তাঁকে মনে রাখবেন টিনটিনকে বাংলা সাহিত্যে উপস্থাপিত করার জন্য। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সৃষ্টি করেছিলেন গোয়েন্দা চরিত্র 'ভাদুড়ি মশাই'।
কবির জন্ম ১৯ অক্টোবর, ১৯২৪। গত শতাব্দীর পাঁচের দশকে সাড়া জাগানো এই কথার জাদুকরের জন্ম এবং শৈশব কাটে পূর্ববঙ্গে। প্রাথমিক পড়াশোনা ফরিদপুরের পাঠশালায়। ছ'বছর বয়সে কলকাতায় আসা। মিত্র ইন্সটিটিউশন, বঙ্গবাসী কলেজ, এবং তারপর সেন্ট পল'স কলেজে উচ্চতর শিক্ষা। পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতা করেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৫৪-তে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'নীল নির্জন' প্রকাশিত হয়। ১৯৯০-এ বিশ্ব কবি সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন কবি নীরেন্দ্রনাথ।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন কবি। ঘোর অসময়ে, দুঃসময়ে এবার 'রাজা, তোর কাপড় কোথায়?' প্রশ্ন তুলবে কে?