ইজরায়েল-হামাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাঝেও আপাতত দেশে ফিরছেন না বাঙালি গবেষক দীপন চৌধুরী। হুগলির হিন্দমোটোরের বাসিন্দা দীপন বরাবরই মেধাবী ছাত্র বলেই এলাকায় পরিচিত। গত ১৫ মে তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন নিয়ে গবেষণা করতে ইজরায়েলে পাড়ি দেন তিনি। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ছেলের চিন্তায় পরিবারের সদস্যদের রাতের ঘুম উড়েছে। তবে সুদূর ইজরায়েল থেকে ফোনে পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন দীপন। তেল আভিভ ও হাইফায় রয়েছে জেলারই আরও তিন গবেষক। সকলেই একটি WhatsApp গ্রুপের মাধ্যমে নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যুদ্ধ প্রসঙ্গে দীপন বলেছেন, "হামাসের অতর্কিত আক্রমণ কোথাও ইজরায়েলের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে"।
ইজরায়েলের সামরিক বাহিনী ঘোষণা করেছে যে তারা স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে গাজায় অভিযান শুরু করতে প্রস্তুত। শুধুমাত্র আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত নাগরিকদের সেই অঞ্চল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে ইজরাইল। তাই এই এলাকায় রয়েছে চরম উত্তেজনা। জীবন বাঁচাতে ঠিক কোথায় যাবে সেই প্রশ্ন গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখ মানুষের। এদিকে গাজা দখলের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইজরায়েলে হামাসের হামলায় এ পর্যন্ত ২৯ জন আমেরিকানসহ ১৪০০-এর বেশি জনেরও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। হামাসের কাছে ইজরায়েলি বন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব। এর পাশাপাশি গাজা সীমান্তে যাতে পানীয়, খাদ্য, জ্বালানি, চিকিৎসা সামগ্রী, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যাতে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া যায় তার জন্য তিনি ইজরায়েলের কাছে আবেদন করেছেন
গত এক সপ্তাহ ধরে, ইজরায়েলি বিমানগুলি ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিদের হামলার পর থেকে আক্ষরিক অর্থেই গাজা উপত্যকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। রবিবার গাজা জুড়ে বিশৃঙ্খলার মধ্যে গাজার উত্তরাঞ্চল খালি করার নির্দেশ জারি করেছে ইজরাইল। ইজরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানের আগে তারা উত্তর গাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এবং সোমবার মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। ইজরায়েলের কর্মকর্তারা বলেছেন যে হামাসের হামলায় ১৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাগুলিতে ২৬৭০ প্যালেস্তাইন নাগরিক নিহত এবং ৯৬০০ জন আহত হয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। ইজরায়েল থেকে দেশে ভারতীয় নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে অপরেশন অজয় চালু করেছে বিদেশ মন্ত্রক। ইতিমধ্যেই দেশে ফিরে এসেছেন ৯১৮ জন ভারতীয়। ইজরায়েলে বসবাসরত ভারতীয়'র সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বাঙালির সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। বেশিরভাগ গবেষণা, চাকরি সংক্রান্ত কাছে ইজরায়েলে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম দীপন।
যুদ্ধের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে দীপন বলেন, "আর পাঁচটা দিনের মত স্বাভাবিক সকাল ছিল সেদিনও। হঠাৎ করেই বেজে উঠলো সাইরেন। এমনিতে যুদ্ধের পরিবেশ সারাবছরই থাকে ইজরায়েলে। তবে তার তীব্রতা যে এত ভয়ঙ্কর হবে তা আমরা কেউ'ই ভাবতে পারিনি। ১৫০০-এর বেশি হামাস জঙ্গি সীমান্ত পেরিয়ে নির্বিচারে চালিয়েছে হত্যালীলা। পাল্টা জবাব দিয়েছে ইজরায়েলও। দেশের কিছু কিছু শহরের পরিস্থিতি গুরুতর। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী শহরগুলিতে মুহুর্মুহু হামলা চলছে। তেল আভিভ ওহাইফা তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। সকালে ঘুম ভাঙছে সাইরেনের আওয়াজ শুনে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ফের বেজে উঠছে সাইরেন। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলেও সেভাবে কেউ বাইরে বেরোতে সাহস করছেন না। অনেকে স্বেচ্ছায় ইজরায়েল সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ায় শহরে আপাতত শশ্মানের নীরবতা"।
দীপন আরও বলেছেন, "প্রতি মুহূর্তে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। আমাদের আবাসনের অনেকেই দেশে ফিরে গিয়েছেন তবে এই মুহূর্তে আমি দেশে ফিরছি না। পরিস্থিতির ওপর সব সময় নজর রাখছি। আমাদের সর্বক্ষণের জন্য হেল্পলাইন নম্বর রয়েছে। দেশের তরফে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশিকা পেলে তখন অবশ্য'ই ফিরে যাব। তার আগে ফিরে যেতে চাই না। তিনি আরও জানিয়েছে খাবার-জল-প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের কোন অভাব হচ্ছে না"। মা তন্দ্রা চৌধুরী বলেছেন, "ছেলের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ওর শহর এখনও পর্যন্ত নিরাপদ। পরিস্থিতি খারাপ হলে ও নিশ্চয় দেশে ফিরে আসবে"। তবে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের মত দীর্ঘস্থায়ী হবে না ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ বলেই মনে করেন দীপন।