ছোট থেকেই আাঁকার প্রতি অগাধ ভালোবাসা। রং, তুলি ছিল ছোটবেলার সেরা সঙ্গী। আঁকাঝোকার প্রতি বরাবরই আগ্রহ কৃত্তিকার। তবে এই ভালোবাসা-শখই যে একদিন তাঁকে জগৎজোড়া স্বীকৃতি এনে দেবে তা অবশ্য কখনই ভাবেননি এই তরুণী। বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ইণ্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস , এশিয়া বুক অফ রেকর্ড’সে নিজের নাম তুলেছেন শিলিগুড়ির কৃত্তিকা মুখার্জী। মান্ডালা আর্টে অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সেরার সেরা হিসাবে নিজের নথিভুক্ত হয়েছে বঙ্গতনয়া কৃত্তিকা। ইতিমধ্যেই তিনি পেয়েছেন ইণ্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে ও এশিয়া বুক অফ রেকর্ডসের মানপত্র ও মেডেল। খুশির হাওয়া গোটা পরিবার।
একটি বৃত্তাকার প্লাইউড শীটে সবচেয়ে বড় মান্ডালা আর্টেই নজির গড়েছেন শিলিগুড়ির কৃত্তিকা। ফ্যাব্রিক পেইন্ট ব্যবহার করে এমন নান্দনিক শিল্পকলা সকলেরই চোখে নেশা ধরিয়ে দিতে বাধ্য। বছর ২২-এর কৃত্তিকা শিলিগুড়ির বাসিন্দা। আঁকার ব্যাপারে মেয়েকে ছোট থেকেই প্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁর বাবা-মা। তাই আজ মেয়ের এই সাফল্যে তাঁরাও যারপরনাই খুশি। সম্প্রতি এএন কলেজ, পাটনা থেকে ভূগোলে এমএ সম্পন্ন করেছে কৃত্তিকা। শিলিগুড়ির ডিএভি স্কুলের প্রাক্তনীর এমন কৃতিত্বে খুশি স্কুলের সহপাঠী থেকে শিক্ষক সকলেই।
বঙ্গতনয়ার জগৎজোড়া স্বীকৃতি
Advertisment
কৃত্তিকা নিজের এই সাফল্য প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা এবং নাচের প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ ছিল। কিন্তু কখনও কিছুই শিখিনি, আমি যা কিছু করেছি তা আমার নিজের চেষ্টায় এবং আমার বাবা-মা আমাকে প্রতিটি দিক থেকে আমাকে সর্বদা সমর্থন করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন কাজে উৎসাহ দিয়েছেন"।
মান্ডালা আর্ট নিয়ে কৃত্তিকা জানিয়েছেন, 'লকডাউনের সময় আমি শিল্প নিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছিলাম। মান্ডালা আর্ট আমাকে বরাবরই আকৃষ্ট করত। এর আগে সেভাবে মান্ডালা আর্ট নিয়ে কাজের সুযোগ পাইনি। কোভিড কালে নিজের আঁকার গ্যালারি খুলতেই দেখলাম মান্ডালা আর্ট নিয়ে এখনও কোন কাজ করিনি। মান্ডালা আর্টের একাধিক নিদর্শন আমি এর আগে রেফারেন্স হিসাবে ডাউনলোড করেছিলাম। সেগুলিকে কাজে লাগিয়ে শুরু হয় আমার এই মান্ডালা আর্টের জার্নি। এখন আমি ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড হোল্ডার পাশাপাশি এশিয়া বুক অফ রেকর্ড হোল্ডার। আমি ৭২ ইঞ্চি (৬ ফুট) ব্যাসের প্লাইয়ের ওপর সবচেয়ে বড় মান্ডলা আর্টের রেকর্ড তৈরি করেছি।
মা-বাবাই অনুপ্রেরণা
পরিবারের কথা বলতে গিয়ে কৃত্তিকা জানিয়েছেন, 'আমি বলতে চাই যে আমার বাবা-মা’র সাহায্য ছাড়া এটা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। প্রত্যেকে যারা কিছু করতে চান, সকলের থেকে আলাদা ভাবে নিজেকে মেলে ধরতে চান তাদের জন্য আমি বলতে চাই, আমি যদি কোনরকমের প্রশিক্ষণ ছাড়াই এই সাফল্য অর্জন করতে পারি তাহলে যে কেউই নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে এবং তাদের সত্যি করে তুলতে পারেন।
বিশেষ কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ইণ্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস , এশিয়া বুক অফ রেকর্ড’সে নিজের নাম তুলেছেন শিলিগুড়ির কৃত্তিকা।
প্রশিক্ষণ ছাড়াই চমক
নিজের বাড়িতে আঁকার জন্যই রয়েছে আলাদা একটি ঘর। সেই ঘরের যে দিকেই তাকানো হোক না কেন শিল্পের বহরে চমকে যেতে বাধ্য হবে যে কেউ'ই। ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে কৃত্তিকা জানান, 'ছোট বয়স থেকেই তাঁর আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল। ছোটবেলায় রং পেন্সিল আবার কখনও রং-তুলি নিয়ে আঁকার চেষ্টা করতাম'। কখনও কোনও আঁকার শিক্ষকের কাছ থেকে প্রথাগত শিক্ষা নেননি কৃত্তিকা। শিল্পীর কথায়, 'শখের বসেই তিব্বতের বিখ্যাত ’মান্ডালা আর্ট’ রপ্ত করি। তারপর থেকে এটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় আমার কাছে। আজ আমি ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড হোল্ডার পাশাপাশি এশিয়া বুক অফ রেকর্ড হোল্ডার'।