Inspirational Story of KKR Fan: বাবার কাঁধে চেপেই কল্যাণী থেকে ইডেনে খেলা দেখতে আসে বছর ২৬-এর ক্রিকেট পাগল এই ছেলেটা। ক্রিকেট তার বরাবরই খুবই প্রিয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জেরে একা একা হাঁটাচলা, খাওয়া-দাওয়া, বা বসার কোন ক্ষমতাই নেই বিক্রমের। তাই ছেলের ইচ্ছা মেটাতে কাঁধে করেই ছেলেকে ইডেনে খেলা দেখাতে নিয়ে আসেন বাবা। হ্যাঁ আজ এমনই এক কাহিনী সামনে এসেছে যা অবাক করেছে গোটা বাংলাকে। আর ছেলের জন্য বাবার এমন উদারতা প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বত্র।
আইপিএল সিজনে চরম ক্রিকেট উন্মাদনায় ভাসছে আপামর বাঙালি। কেকেআরের ম্যাচের দিনে নিজের প্রিয় দলের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন আট থেকে আশি সকলেই। কিন্তু ভাবুন তো প্রতিবন্ধী হয়েও স্রেফ কেকেআরের টানে কল্যাণী থেকে ইডেনে বাবার কাঁধে চেপে মাঠে নিজের পছন্দের টিমকে সাপোর্ট করতে আসছে বছর ২৬-এর বিক্রম ঘটক। তার এই কাহিনী সামনে আসতেই ছেলের ইচ্ছাপূরণে বাবার এমন 'প্রাণপাতকে' স্যালুট জানিয়েছেন গোটা সমাজ।
আইপিএল আসলেই কেকেআরের জন্য মন আনচান করতে শুরু করতে কল্যাণীর বিক্রমের। কেকেআরের ম্যাচ দেখার জন্য বছর ভর একটু একটু করে টাকা জমান বিক্রম। আর আইপিএল সিজনে কেকেআরের ম্যাচ দেখতে টিকিট কেটে বাবার কাঁধে চেপেই ইডেনে আসেন তিনি। এমন অন্ধভক্তের কাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াতেই কেকেআর প্রেমীরা বলতে শুরু করেছেন বিক্রমই হলো কেকেআরের সবচেয়ে বড় সমর্থক। বিক্রমের বাবা বিপ্লববাবু বাগদা হাইস্কুলের শিক্ষক। ছেলের ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসাকে একটুও ফিকে হতে দিতে চান না তিনি। তাই তো প্রবল গরমেও ছেলেকে কাঁধে চাপিয়ে খেলা দেখতে দিব্যি কল্যাণী থেকে হাজির হয়ে যান ইডেনে।
বিক্রম ঘটক, ছোট থেকে শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও মানসিক ভাবে ভালবাসেন খেলাধুলোকে। ভালবাসেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে উচ্চমাধ্যমিকে পর আর সেভাবে পড়াশুনা করা হয়নি। ক্রিকেট বরাবরই তার পছন্দের খেলাধূলার মধ্যে অন্যতম। ইন্ডিয়ার জার্সিতে খেলা হলে বিরাট কোহলির অন্ধভক্ত সে। আইপিএলে কেকেআরের খেলা দেখতে সারা বছর ধরেই চলে অল্প স্বল্প সঞ্চয়। আর ম্যাচের সময় ইডেন তার কাছে যেন হয়ে ওঠে 'সেকেন্ড হোম'। তবে বিক্রম যে শুধু ক্রিকেট পছন্দ করেন এমন নয়। ফুটবল ম্যাচও তাড়িয়ে তাড়িয়ে গ্যালারিতে বসে উপভোগ করেন সে। ইতিমধ্যেই বিক্রম ইডেন- যুবভারতী মিলিয়ে ৬০ টি 'লাইভ ম্যাচের' সাক্ষ্মী থেকেছেন।
হাঁটতেই যখন সমস্যা তখন এতদূরে এসে ম্যাচ দেখার কী দরকার? বাড়িতে বসেই টিভিতে খেলা দেখলেই তো হয়। এই প্রশ্নের জবাবে বাবা স্কুল শিক্ষক বিপ্লব বাবু বলেন, 'ছোট থেকেই আমার ছেলেটা ক্রিকেটের অন্ধভক্ত। মাঠে বসে খেলা দেখার সময় যে উত্তেজনা ওর চোখে মুখে দেখি তা আমার মন ভরিয়ে দেয়'। হুইল চেয়ার থাকতে কাঁধে করে এই প্রবল গরমে ছেলেকে ইডেনে আসার কারণ প্রসঙ্গে বিপ্লববাবু বলেন, 'ছেলে একেবারেও হাঁটাচলা করতে পারেনা। ট্রেনে বাসে হুইল চেয়ার বহন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া ও গাড়িতেও চড়তে পারে না। অগত্যা আমার কাঁধই ভরসা। আমি বিগত ১২-১৩ বছর ধরে ওকে এভাবেই মাঠে নিয়ে যাই। অনেকেই নানান প্রশ্ন করেন। কিন্তু ছেলের এটুকু আবদার বাবা হয়ে মেটাতে পেরে আমি খুশি। ছেলের চোখের মুখে মাঠে বসে ম্যাচ দেখার সময় যে খুশি আমি অনুভব করি তার কাছে এটুকু কষ্ট কিছুই নয়'।
এদিকে বিক্রমের এই কাহিনী সামনে আসতেই কেকেআর ফ্যানেরা বলতে শুরু করেছেন বিক্রমের মতো ভক্তের জন্য ফ্রি ভিআইপি টিকিটের ব্যবস্থা করা। এপ্রসঙ্গে বিক্রমের বাবা বিপ্লববাবু বলেন, 'ফ্রি টিকিট না হলেও পয়সা দিয়ে যাতে টিকিট টুকু পাই সেটা নিশ্চিত করলেই আমি খুশি। অসুস্থ ছেলের শখ পূরণে শিক্ষক বাবার এমন উদারতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে সকলেই'।