নির্বাচনের নয় মাসের মধ্যেই হাতবদল হল দার্জিলিং পুরসভার ক্ষমতা। অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির বদলে এবার পাহাড়ের ওই পুরসভা শাসন করবে অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা বা বিজিপিএম। অনাস্থা ভোটে অনিতের বিজিপিএম তৃণমূলের দুই কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে পুরসভার ক্ষমতা দখল করে। এই পালাবদলের পরই নিজের দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ফোঁস করেছেন বিনয় তামাং। 'দার্জিলিংয়ে গণতন্ত্র বড় বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে' বলে প্রেসবিবৃতি দিয়ে জোড়-ফুল থেকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেছেন বিনয় তামাং।
বিনয়ের অভিযোগ, পাহাড়ে ‘অগণতান্ত্রিক’ কার্যকলাপ চালাচ্ছে শাসকদল তৃণমূল। মাত্র এক বছর আগেই বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এ দিন দল ছাড়া সংক্রান্ত প্রেস বিবৃতিতে তামাং লিখেছেন, 'দার্জিলিংয়ে গণতন্ত্র এখন বড় বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে। এটা দেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে, দুর্নীতি বন্ধ করতে এবং দার্জিলিং পার্বত্য, তরাই, ডুয়ার্স এবং গোর্খা জনগণের সাংবিধানিক ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য - আমি আমার রক্ত, পরিশ্রম, অশ্রু এবং ঘাম ঝরাব। এখানকার উন্নয়ন ও মানুষদের জন্য আমি আমার বাকি জীবনটা উৎসর্গ করছি।'
বিমন তামাংয়ের সংযোজন, 'আমি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারের থেকে অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ এবং দুর্নীতির রোধে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপের প্রত্যাশা করছি। এ বিষয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলের চেয়ারপার্সনকে দ্রুত এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার অনুরোধ করছি।' তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ বাস্তবস্তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল ত্যাগী এই নেতা।
বুধবার অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টিকে সরিয়ে দার্জিলিং পুরসভার দখল নিয়েছে অনিত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম)। বুধবার অনাস্থা ভোটে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার পক্ষে ১৬টি ভোট পড়ে। এর মধ্যে দলীয় ১৪ জন কাউন্সিলার ও তৃণমূলের ২ কাউন্সিলারের ভোট রয়েছে। এদিন বিজিপিএম-পক্ষের ১৬ জন কাউন্সিলারই উপস্থিত ছিলেন। তবে হামরা পার্টি এবং মোর্চা মিলিয়ে ১৫ জন কাউন্সিলার অনুপস্থিত থাকেন অনাস্থা ভোটে। ৩২টি আসনের মধ্যে দার্জিলিং পুরসভার ৩১ আসনে ভোটাভুটি হয়। পুরসভায় ১৬ জন কাউন্সিলারের সমর্থন নিয়ে এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিজিপিএম।
ঘুরপথে পুরসভা দখলের প্রতিবাদে সোমবার থেকে একমাসব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে হামরো পার্টি। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড। দার্জিলিংয়ের ক্যাপিটাল হলে ওই সভায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম)-র সুপ্রিমো বিমল গুরুং, রোশন গিরি, নাগরিক ফোরামের প্রকাশ গুরুং, তৃণমূলের বিনয় তামাং সহ পাহাড়ের অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক যোগদানকারী নেতারা অনিত থাপার দল ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার তীব্র সমালোচনা করেন।
অনিতের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে অনাস্থা ভোটে হামরো কাউন্সিলারদের অনুপস্থিতিতে সমর্থন করেছিলেন তিনি। ফলে এটা স্পষ্ট হয় যে, বিমল গুরুং অজয়ের পাশেই রয়েছেন।